বেআইনি নিয়োগ চক্রে জড়িত এই ধরনের বহু শিক্ষক ও সরকারি অফিসারের নাম সম্প্রতি সামনে এসেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। ফাইল চিত্র।
শিক্ষায় নিয়োগ-দুর্নীতির দুষ্টচক্রের মাথা এবং অন্যতম তিন স্তম্ভকে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই শনাক্ত করেছেন বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তাদের আরও দাবি, সেই মাথা আর স্তম্ভ-ত্রয়ের অঙ্গুলিহেলনে যে-সব ‘হাত ও পা’ বাস্তবে ‘আসল’ কাজটা করত, তাদের চিহ্নিত করার পথে অনেকটাই এগোনো গিয়েছে। দুর্নীতির কাজটা হাতে-কলমে করার সেই সব ‘হাত ও পা’ কারা? সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, তাঁরা হলেন এক শ্রেণির শিক্ষক ও সরকারি আধিকারিক। চাকরিতে দ্রুত পদোন্নতি এবং পছন্দসই বদলির টোপ সামনে ঝুলিয়ে এই পরিব্যাপ্ত দুর্নীতি চক্রে তাঁদের শামিল করা হয়েছিল।
সিবিআই সূত্রের দাবি, বাঁকা পথে স্কুলে স্কুলে নিয়োগের জন্য রীতিমতো একটি ‘চেন সিস্টেম’ বা দুর্নীতি-শৃঙ্খল তৈরি করা হয়েছিল। সেই দুষ্টচক্রের মাথা যদি হন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তিন স্তম্ভ এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন উপদেষ্টাশান্তিপ্রসাদ সিংহ, এসএসসি-র পূর্বতন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তদানীন্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু ‘মাথা’ বা ‘স্তম্ভ’ তো মাঠে নেমে কাজ করে না। কাজের জন্যই বেছে নেওয়া হয়েছিল শিক্ষক ও রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা শিক্ষা অফিসারদের একাংশকে।
বেআইনি নিয়োগ চক্রে জড়িত এই ধরনের বহু শিক্ষক ও সরকারি অফিসারের নাম সম্প্রতি সামনে এসেছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। তদন্তকারীদের কথায়, মাসখানেক ধরে বেআইনি নিয়োগের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া অযোগ্য প্রার্থীদের ধারাবাহিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার পরেই ওই সব শিক্ষক ও সরকারি আধিকারিকের দুষ্টচক্রে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছে ধাপে ধাপে। অযোগ্য প্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদের বয়ানের ভিত্তিতে দুষ্টচক্রে জড়িত শিক্ষক ও সরকারি আধিকারিকদের তলব করা হচ্ছে।
দুষ্টচক্রে জড়িত অধিকাংশ শিক্ষক ও সরকারি আধিকারিক পার্থ, সুবীরেশ, শান্তিপ্রসাদ ও কল্যাণময়ের ঘনিষ্ঠ বলে জেনেছে তদন্তকারী সংস্থা। অবৈধ ভাবে ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগের মামলায় সম্প্রতি সুবীরেশকে পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। গ্রুপ সি মামলায় পার্থকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তার পরে শান্তিপ্রসাদ ও সুবীরেশকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
সিবিআই সূত্রের দাবি, পার্থের নির্দেশ অনুযায়ী শান্তিপ্রসাদ, সুবীরেশ ও কল্যাণময় বিভিন্ন স্কুলে অযোগ্য প্রার্থীদের বেআইনি নিয়োগের নথি পাঠিয়ে দিতেন। আর চক্রের হাত-পা হিসেবে সক্রিয় শিক্ষক ও সরকারি অফিসারেরা নথি যাচাই না-করেই অযোগ্যদের নিয়োগ করতেন। এক দিকে সরকারি আধিকারিক এবং এসএসসি-র সদস্যেরা লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের বেআইনি নথিপত্র তৈরি করতেন। অন্য দিকে বিভিন্ন স্কুলের শূন্য পদ অনুযায়ী সেই সব অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ করত পার্থ-ঘনিষ্ঠ শিক্ষক শিবিরের একাংশ। জেলা শিক্ষা দফতরের এক শ্রেণির অফিসার তাতে সহযোগিতা করতেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, বেআইনি নিয়োগে এ ভাবে সহযোগিতা করার পুরস্কার হিসেবে পদোন্নতি এবং পছন্দ অনুযায়ী বদলির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
বেআইনি নিয়োগের জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত পার্থ-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা দফতরের কিছু অফিসারকে সম্প্রতি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও কয়েক জন শিক্ষক ও জেলা শিক্ষা দফতরের আধিকারিককে তলব করা হয়েছে চলতি এবং আগামী সপ্তাহে। দুষ্টচক্রে জড়িত ওই সব শিক্ষক ও সরকারি আধিকারিক দুর্নীতির মামলায় সাক্ষী হয়ে উঠতে পারেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy