E-Paper

সিবিআইয়ের হাতে ধৃত নীলাদ্রিকে চার বছর আগে গ্রেফতার করে সিআইডি! কেন থমকে যায় তদন্ত?

সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু হতে আচমকাই ‘প্রভাবশালীর’ অঙ্গুলিহেলনে থমকে যান গোয়েন্দারা। এক মাসের মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিনও পান নীলাদ্রি।

OMR Sheet.

নিয়োগ দুর্নীতিতে নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। প্রতীকী ছবি।

শিবাজী দে সরকার, আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৪
Share
Save

চার বছরের পুরনো ঘটনা। স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তখনও রাজ্যবাসী ‘অন্ধকারে’। তখনই স্কুল-সহ সরকারি চাকরির নামে প্রতারণার মামলায় সিআইডি গ্রেফতার করেছিল নীলাদ্রি দাসকে। সিআইডি সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু হতে আচমকাই ‘প্রভাবশালীর’ অঙ্গুলিহেলনে থমকে যান গোয়েন্দারা। এক মাসের মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিনও পান নীলাদ্রি। সেই অভিযুক্তকেই এ বার স্কুল নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তার পরেই ফের উঠে এসেছে সিআইডির পুরনো মামলার তথ্য!

গোয়েন্দাদের দাবি, সিআইডির মামলায় কলকাতা হাই কোর্টে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন নীলাদ্রি (মামলার নম্বর ৩২০১/ ২০১৯)। বিচারপতি মহম্মদ মুমতাজউদ্দিন এবং বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সেই মামলায় সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছিলেন, নীলাদ্রিকে গ্রেফতারের পরে অনয় সাহা ছাড়া আর এক অভিযুক্তের বয়ান বাদ দিয়ে কোনও প্রমাণ জোগাড় করতে পারেননি তদন্তকারীরা। সিআইডির দুই অফিসারও কোর্টে হাজির হয়ে জানিয়েছিলেন যে, অভিযুক্তকে আটকে রাখার প্রয়োজন নেই। তার পরেই নীলাদ্রিকে জামিন দেয় কোর্ট। তার পর থেকে তদন্ত কী এগিয়েছে তা স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছেই। তবে তাঁরা বলেছেন, পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা আদালতের ‘স্পেশাল কোর্টে’ সেই মামলা এখনও ‘চলছে’।

কেন থমকে গিয়েছিল সিআইডির তদন্ত? পুলিশের একাংশের বক্তব্য, প্রতারণা, জালিয়াতি এবং দুর্নীতিদমন আইনের মামলায় ২০১৯ সালের ৭ মার্চ দিল্লি থেকে নীলাদ্রিকে গ্রেফতারের পরে তাঁর যোগসূত্রে এমন কিছু নাম উঠে এসেছিল যা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্বস্তিদায়ক ছিল না। তবে তদন্ত থমকে যাওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলতে নারাজ ভবানী ভবনের কর্তারা। প্রসঙ্গত, নীলাদ্রিকে সিবিআই পাকড়াও করেছে গাজ়িয়াবাদের একটি সংস্থার যোগসূত্রে। ওই সংস্থাই স্কুলে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের উত্তরপত্র (ওএমআর) তৈরি এবং পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল। তাদের কাছ থেকেই উত্তরপত্রের তথ্য সংবলিত হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেছে সিবিআই।

নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করার পরে সিবিআই সূত্র দাবি করেছে, উত্তরপত্র বিকৃতি ছাড়াও নীলাদ্রি চাকরি বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এসএসসির অধীনে পাঁচটি পরীক্ষায় উত্তরপত্রের মূল্যায়নে নীলাদ্রির জড়িত থাকার পাশাপাশি নাম জড়িয়েছে এসএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহেরও। সুবীরেশ এবং শান্তিপ্রসাদ, দুজনেই রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। তাই নীলাদ্রির সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের তৎকালীন মহাসচিব পার্থের যোগসাজশের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে চাইছেন না তদন্তকারীরা। অনেকেরই প্রশ্ন, তা হলে কি শাসকদল তথা রাজ্য সরকারের ‘প্রভাবশালী’ যোগের সূত্রে কি নীলাদ্রি ছাড় পেয়েছিলেন? তাঁরা এ-ও বলছেন, ২০১৯ সালের যে সময়ে নীলাদ্রি গ্রেফতার হয়েছিলেন তত দিনে রাজ্যে স্কুলে বেআইনি নিয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছিল। নীলাদ্রির সেই মামলার সঙ্গে স্কুল নিয়োগ দুর্নীতির যোগসূত্র আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।

সিবিআই সূত্রের দাবি, নীলাদ্রি আদতে উত্তর শহরতলির বরাহনগরের বাসিন্দা। ২০০২ সাল থেকে তিনি দিল্লিতেই থাকেন। ২০১৫ সালে এসএসসির বরাত পাওয়ার পর থেকে তিনি কলকাতায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন। কয়েক বার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে শান্তিপ্রসাদ সিংহ, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎকালীন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। নীলাদ্রির দিল্লির বাড়িতে সুবীরেশের যাতায়াত ছিল বলেও খবর। তদন্তকারীদের দাবি, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের নির্দেশেই উত্তরপত্রের শূন্যকে ৫৪-৫৫ করে দিতেন নীলাদ্রি। প্রয়োজনে নম্বর কমিয়েও দিতেন। এর পাশাপাশি নিজেও কয়েকশো জনকে চাকরি বিক্রি করেছেন তিনি। কারচুপি বাবদ কয়েক কোটি টাকাও কামিয়েছেন নীলাদ্রি।

সিবিআইয়ের খবর, গত কয়েক মাসে দিল্লি থেকে তলব করে নীলাদ্রিকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ইদানীং নীলাদ্রি তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন। তার পরে তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

(তথ্য সহায়তা শুভাশিস ঘটক)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam CBI West Bengal CID

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।