Advertisement
০৬ জুলাই ২০২৪
Bengal Recruitment Case

কলা, ক্যাপসিকাম, সর্ষের চাষ করে ২৬ কোটি টাকা আয়! প্রসন্নের অর্থের উৎস শুনে চোখে সর্ষেফুল ইডির

নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থায় ২৬ কোটি টাকার হদিস পেয়েছে ইডি। চার্জশিটে তারা জানিয়েছে, ওই টাকা চাষবাস করে রোজগার করেছেন বলে জেরায় দাবি করেছেন প্রসন্ন।

নিয়োগ মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়।

নিয়োগ মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২৪ ০৯:৩০
Share: Save:

কলা, ক্যাপসিকাম, আখ থেকে শুরু করে টম্যাটো, নারকেল, সর্ষে— বাদ নেই কিছুই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রসন্ন রায়ের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দিয়েছে ইডি, তাতে এ সবের নাম রয়েছে। ইডি জানিয়েছে, অর্থের উৎস প্রসঙ্গে এই সব্জি এবং ফলের চাষের কথাই তাদের জানিয়েছেন প্রসন্ন। তাঁর দাবি, জমিতে চাষ করে তিনি গত কয়েক বছরে ২৬ কোটি টাকা রোজগার করেছেন। যদিও প্রসন্নের দাবি মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় সংস্থা। তারা জানিয়েছে, প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে যে সমস্ত জমি রয়েছে, তাতে আদৌ কোনও চাষ হয়নি।

এসএসসি দুর্নীতির মামলায় প্রসন্নকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। ইডি এই মামলার তদন্ত করছে। চার্জশিটে ইডি জানিয়েছে, প্রসন্নের নামে মোট ৯১টি সংস্থার হদিস পাওয়া গিয়েছে। প্রতিটি সংস্থার অধীনে বেশ কিছুটা করে জমি কেনা রয়েছে। তদন্তকারীদের প্রসন্ন জানিয়েছেন, ওই জমিতে চাষ করান তিনি। সেখান থেকেই আয় হয়।

নিয়োগ মামলার তদন্তে নেমে প্রসন্নের বিভিন্ন সংস্থায় ২৬ কোটি এক লক্ষ ৮৯ হাজার ৬৭২ টাকার খোঁজ পেয়েছে ইডি। প্রসন্নের দাবি, এই সম্পূর্ণ টাকা কৃষিকাজের সূত্রে তিনি আয় করেছেন। আখ, পেঁপে, কলা, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, বিন্‌স, সর্ষে, নারকেল রয়েছে সেই চাষের তালিকায়। প্রসন্ন জানিয়েছেন, স্থানীয় চাষিদের মজুরির ভিত্তিতে জমিতে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। রোজগার করা অর্থ নিজের বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে জমা করেছেন। প্রসন্ন, তাঁর স্ত্রী কাজল সুনি রায় এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠদের মোট ২৫০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিস পাওয়া গিয়েছে। সেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলির ফরেন্সিক অডিট করিয়েছিল সিবিআই। চার্জশিটে ইডির দাবি, অ্যাকাউন্টগুলিতে ৭২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ইডি আরও জানিয়েছে, প্রসন্নের স্ত্রীর আয়ের অন্য কোনও উৎস নেই। তাঁর অ্যাকাউন্টেও দু’কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।

ইডির দাবি, প্রসন্নের জমিতে কোনও চাষবাস হয়নি। তদন্তকারীরা সংস্থার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রসন্নের দাবির সপক্ষে তেমন কোনও নথি পাওয়া যায়নি। নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই তিনি বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রেখেছিলেন বলেই ইডির অনুমান। দুর্নীতির সেই উৎস আড়াল করতেই চাষবাসের এই উৎস দেখিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে আরবান সিলিং আইনের উল্লেখও করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। তাদের দাবি, আরবান সিলিং আইন অনুযায়ী, কোনও সংস্থা নিজের অধীনে সর্বোচ্চ সাত কাঠা জমি রাখতে পারে। প্রসন্নর নামে থাকা ৯১টি সংস্থার অধীনে সাত কাঠা করেই জমি রয়েছে। আইনের চোখ এড়াতেই তিনি এতগুলি সংস্থা তৈরি করেছিলেন, দাবি ইডির।

এসএসসি মামলায় উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিংহের প্রসঙ্গে প্রসন্নের নাম উঠে এসেছিল। অভিযোগ, তিনি শান্তিপ্রসাদের ‘ঘনিষ্ঠ মিডলম্যান’। রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও প্রসন্নের যোগাযোগ ছিল বলে জানা গিয়েছিল সিবিআই সূত্রে। নিয়োগ সংক্রান্ত দু’টি মামলার তদন্তে নেমে প্রসন্নের নাম পেয়েছিল সিবিআই। প্রসন্নকে এর পরে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতার করা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়নি। চার্জশিট দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও তাঁর প্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ না করায় বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রসন্ন। বেশ কিছু শর্ত দিয়ে সিবিআইয়ের মামলায় তাঁকে জামিন দেয় শীর্ষ আদালত। এর পর তাঁকে আবার ইডি গ্রেফতার করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE