উদ্ধার বেআইনি অস্ত্র। নিজস্ব চিত্র।
কোথায় তৈরি হয়ে, কী ভাবে কোন পথে কত বেআইনি অস্ত্র বাংলায় ঢুকছে, তার নাড়িনক্ষত্র তারা জানে বলে পুলিশের দাবি। অথচ সেই সব অবৈধ অস্ত্র নিঃশেষে উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন? অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্যদিন বেআইনি বোমা-অস্ত্র-গুলির আস্ফালন সমানে চলছে কী ভাবে? পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আগ্নেয়াস্ত্রের এমন যথেচ্ছ ব্যবহার চলতে থাকলে তার ফল যে মারাত্মক হবে, তা নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ রাজ্য পুলিশের একাধিক কর্তা অসহায় ভাবে জানাচ্ছেন, শরীরে চারিয়ে যাওয়া বিষের মতো বঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া বেআইনি অস্ত্রের কতটুকু পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাজেয়াপ্ত করা যাবে, সেই বিষয়ে তাঁদের সংশয় ও সন্দেহ আছে।
কেন? সরাসরি জবাব মিলছে না। তবে পুলিশি সূত্রের খবর: প্রথমত, অন্য রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে যে-সব অস্ত্র এখানে ঢুকছে, তা মূলত পৌঁছচ্ছে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীদের হাতে। এক পুলিশকর্তার কথায়, “আগেও এমন হত। কিন্তু এখন বোমা-অস্ত্রের পরিমাণ বেড়েছে। তাই তার ব্যবহারও বেড়েছে।” ওই সব অবৈধ অস্ত্র এবং তাদের ব্যবহারকারীরা আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশই।
দ্বিতীয়ত, রাজ্য পুলিশের এসটিএফ এবং সিআইডি-র এসওজি মূলত আগাম পাওয়া খবরের ভিত্তিতে বোমা-অস্ত্র উদ্ধার করে। অভিযোগ, সিআইডি এবং এসটিএফে ‘সোর্স মানি’ কমিয়ে বা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার প্রভাব পড়ছে অস্ত্র, এমনকি মাদক উদ্ধারের কাজকর্মেও। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানাচ্ছেন, এসটিএফ বা সিআইডি-র গোয়েন্দারা মূলত সোর্সের উপরে নির্ভরশীল। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে খবর দেন তাঁদের। কিন্তু টাকার জোগান বন্ধ হলে বা কমে গেলে আসল কাজে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। ওই কর্তার কথায়, “হয়তো তেমনটাই হয়েছে।’’
যদিও রাজ্য পুলিশের দাবি, খবর মিলছে যথারীতি। এসটিএফ অস্ত্রও উদ্ধার করছে। তবে পুলিশের একাংশ স্বীকার করছেন, যে-পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে বা হয়েছে, তার কয়েক গুণ বেশি বেআইনি অস্ত্র গ্রাম থেকে শহরের দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছেছে।
কোথা থেকে আসছে এত অস্ত্র?
পুলিশের দাবি, মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে বিভিন্ন করিডর দিয়ে অস্ত্রাদি ঢুকছে বাংলায়। উত্তর-পূর্ব ভারত থেকেও অত্যাধুনিক অস্ত্র ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলিতে। নদী, সড়ক ও রেল— তিন পথেই বোমা-অস্ত্র ঢোকে। তার উপরে এ রাজ্যের কিছু এলাকাতেও বেআইনি অস্ত্রের কারখানা গড়ে উঠেছে। সেখানে তৈরি হয় অর্ধসমাপ্ত অস্ত্র বা অস্ত্রের যন্ত্রাংশ। সেগুলো বিহারে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে অংশগুলো জোড়া লাগিয়ে ‘ফিনিশ’ হয়ে রাজ্যে ফিরে আসে পূর্ণাঙ্গ আগ্নেয়াস্ত্র।
পুলিশ নির্দিষ্ট ভাবে জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল-পাকুড়ের দিক থেকে কখনও নদী পেরিয়ে কখনও বা রেলপথে আগ্নেয়াস্ত্র ঢুকছে মালদহ-মুর্শিদাবাদে। আবার বাসে ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকে আসানসোল, বীরভূমের মহম্মদবাজারে অস্ত্র পৌঁছে যাচ্ছে। ট্রেনে বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর থেকে অস্ত্র ঢুকছে নলহাটি, বর্ধমান, ব্যান্ডেল, রামপুরহাট স্টেশন পর্যন্ত।
সরবরাহের এত ঠিকানাকুলুজি জানা সত্ত্বেও পুলিশের পক্ষে সেই সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?
সদুত্তর নেই পুলিশকর্তাদের কাছে। তাঁরা শুধু বলছেন, ওই সব অস্ত্র ঢোকা ঠেকাতে এবং অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিতে নির্দেশ জারি করেছে নবান্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy