টগরি সাহা ও জীবনকৃষ্ণ সাহা। —ফাইল চিত্র।
চোখের তলায় কালি। চেহারায় উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। প্রতিবেশীরা বলেন, গত এক বছরে কেমন যেন বদলে গিয়েছেন টগরি সাহা। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার স্ত্রী। মঙ্গলবার সকাল সকাল তিনি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে গিয়েছিলেন। বার বার কথা বলেছেন আইনজীবীদের সঙ্গে। শুনানি শুরু হতেই আদালত চত্বরে লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। বিধায়কের জামিন মিলতেই টগরির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি ফোন তোলেন। তুলেই প্রায় চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। গলায় জয়ের আনন্দ। টগরি বললেন, ‘‘সত্যের জয় হয়েছে।’’ সংক্ষিপ্ত কথোপকথনে জীবনের অর্ধাঙ্গিনীর দাবি, তাঁর স্বামীর সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘কার্যত বিনা বিচারে স্বামীকে আটকে রাখা হয়েছিল।’’ বছরখানেকের বেশি প্রতীক্ষা শেষে সুপ্রিম কোর্টে জামিন মেলায় প্রচণ্ড খুশি তিনি।
গত বছরের ১৪ এপ্রিল জীবনকৃষ্ণের কান্দির বাড়িতে টানা তল্লাশি চালায় সিবিআই। চলে তৃণমূল বিধায়ককে জিজ্ঞাসাবাদ। অভিযোগ, সেই জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশির ফাঁকে তাঁর ব্যবহার করা দুটো মোবাইল ফোন বাড়ির পিছনে পুকুরের জলে ফেলে দেন জীবন। জল থেকে জীবনের ফোন খুঁজে বার করতে বেগ পেতে হয়েছে তদন্তকারীদের। তার পর ১৭ এপ্রিল মধ্য রাতে কলকাতা থেকে সিবিআইয়ের আরও একটি দল কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে কান্দির বাড়িতে আসে। গ্রেফতার হন জীবনকৃষ্ণ। উদ্ধার হয় ওই দু’টি ফোন।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলার শুনানিতে আদালতে সিবিআই দাবি করে, বিধায়কের বাড়িতে তল্লাশির সময় তিনি মোবাইল দু’টি ছাদ থেকে ছুড়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন। দু’দিন ধরে পাম্প চালিয়ে পুকুর থেকে জল তুলে, কাদা ঘেঁটে মোবাইল দু’টি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় বিধায়কের দুই আইনজীবীর দুই ভিন্ন মত উঠে আসে। এক আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, ‘‘তল্লাশির সময় জীবনকৃষ্ণের মোবাইলে তাঁর মেয়ের ঘন ঘন ভয়েস কল আসায় বিরক্ত হয়ে বিধায়ক ছাদে উঠে ফোন ছুড়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন।’’ আর এক জন জানান, ফোন ছোড়ার ঘটনা ঘটেইনি। তার পর থেকে বিচারাধীন বন্দি ছিলেন জীবনকৃষ্ণ।
কলকাতা হাই কোর্টে বার কয়েক জীবনকৃষ্ণ জামিনের আবেদন করেন। পরবর্তী কালে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তৃণমূল বিধায়ক। বার বার সেই শুনানি পিছিয়ে গেলেও হাল ছাড়েননি টগরি। মঙ্গলবার স্বামীর জামিনের আবেদন গ্রাহ্য হওয়ার পর টগরি বলেন, ‘‘কলকাতা হাই কোর্টে বিচার পায়নি জীবন। সুপ্রিম কোর্ট ওকে ‘জাস্টিস’ দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এত দিন বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল ওকে। সুপ্রিম কোর্টকে সে কথা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন আইনজীবীরা। তাই তাঁদের কৃতিত্বও কম নয়।’’
তৃণমূল বিধায়কের জামিনের জন্য আদালতে সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী মুকুল রোহতগি, আইনজীবী রউফ রহিম এবং আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। ১৩ মাস পর, মঙ্গলবার দুপুরে জেলে বসে জামিন পাওয়ার খবরে কেঁদে ফেলেন জীবনকৃষ্ণ। এমনটাই খবর প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার সূত্রে। গত বছর ১৭ এপ্রিল স্বামীকে গ্রেফতারের পর হতচকিত টগরি বলেছিলেন, ‘‘এ কোন জীবন! এই জীবনকে তো আগে কখনও দেখিনি।’’ মঙ্গলবার টগরি বললেন, ‘‘অবশেষে বিচার পেলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy