চন্দন মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।
সাদা টি-শার্ট, ছাইরঙা ট্রাউজার্স। পায়ে রবারের চপ্পল। মাথায় বেশির ভাগ চুলই পেকে গিয়েছে। এজলাসে ভিড়ের মধ্যে এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বিচারপতি নাম ধরে ডাকতেই গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এলেন ওই প্রৌঢ়। তিনিই চন্দন মণ্ডল।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাস এক ভিডিয়োয় (যার সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) যে ‘সৎ রঞ্জন’-এর বিরুদ্ধে প্রাথমিকে টাকা নিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন, পরে জানা যায়, তিনি বাগদার বাসিন্দা চন্দন মণ্ডল। এ দিন তিনি যখন কোর্টে, তখন উত্তর ২৪ পরগনায় তাঁর বাগদার বাড়িতেতল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি), জিজ্ঞাসাবাদ করে স্ত্রী এবং কন্যাকে।
সৌমেন নন্দী নামে এক চাকরিপ্রার্থীর মামলায় চন্দনকে কোর্টে তলব করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত কয়েক দিন ধরে বেশ কয়েক বার বাগদার বাড়িতে গিয়ে দেখা পাওয়া যায়নি তাঁর। প্রতিবেশিরা জানিয়েছিলেন, তাঁর নাম প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চন্দন নাকি বেপাত্তা। ফলে, আদালত ডাকলেও তিনি সশরীরে হাজির হবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল আইনজীবীদের একাংশেরই।
যদিও সকলকে অবাক করে এ দিন কোর্টে হাজির হন তিনি। কোর্টে ছিলেন উপেনবাবুও। তবে তাঁর বর্ণিত ‘সৎ রঞ্জন’ এই ব্যক্তি কি না, তা তিনি বলতে পারেননি। কারণ, তিনি কোনও দিনই ‘সৎ রঞ্জন’-কে চোখে দেখেননি বলে জানিয়েছেন উপেনবাবু। এ দিন বিচারপতি চন্দনকে জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ জানেন কি না? চন্দন জানান, ভাইরাল ভিডিয়োর কথা শুনলেও তিনি অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত নন। বিচারপতি অভিযোগগুলি বললে চন্দন জানান, তিনি চাকরি দেওয়ার নাম করে কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। কাউকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর নেই। চন্দন এও জানান, তাঁকে দু’বার সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সিবিআইয়ের কৌঁসুলিও কোর্টকে জানান, এ পর্যন্ত চন্দন অসহযোগিতা করেননি।
অনেকের প্রশ্ন, দু’বার সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে হাজিরা দিলেও চন্দনবাবু কেন অভিযোগ সম্পর্কে অবহিত নন বলে আদালতে জানালেন? তা হলে সিবিআই তাঁকে কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনও জানা যায়নি। এ দিন মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতির নির্দেশ অনুসারে কোর্টেই দাঁড়িয়ে ছিলেন চন্দন। তবে কারও সঙ্গেই কথা বলছিলেন না। শুনানি শেষ হতেই তাঁর আইনজীবীরা চন্দনকে রীতিমতো ঘিরে নিয়ে আদালত চত্বর থেকে বেরোন। অভিযোগ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চন্দন ‘বিষয়টি বিচারাধীন’ বলে মন্তব্য করতে চাননি। কথা বলতে চাননি তাঁর আইনজীবীরাও। সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে হাই কোর্ট পাড়ায় আইনজীবীর চেম্বারে চলে যান তিনি।
এ দিকে, সকাল ন’টা নাগাদ চন্দনবাবুর বাগদার মামাভাগিনা-র বাড়িতে যায় ইডি-র পাঁচ জনের একটি দল। সে সময় তাঁর বাড়িতে কেউ ছিলেন না। সূত্রের খবর, ইডির অফিসারেরা ওই পাড়ায় থাকা চন্দনবাবুর অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ চন্দনবাবুর স্ত্রী এবং মেয়ে বাড়িতে আসেন। তার পরে ইডির দলটি বাড়ির ভিতরে ঢোকে। তল্লাশির পাশাপাশি চন্দনবাবুর স্ত্রী এবং মেয়েকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। সন্ধ্যা প্রায় সাতটা পর্যন্ত তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরে কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করে ইডি অফিসারেরা বেরিয়ে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy