কলকাতা হাইকোর্ট।
অসুস্থ শ্বশুরের সেবাশুশ্রূষা করেছিলেন তিনি, যেমন সবাই করে। সেই তাঁর ‘অপরাধ’! শায়েস্তা করতে দুই ভাশুর কয়েক জনকে নিয়ে তাঁকে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েও ছাড়া পেয়ে বাড়ি এসে হুমকি ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে। নিরুপায় হয়ে একই সঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে এবং পরিত্রাণ পেতে কলকাতা হাইকোর্টের ‘সি’ গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে গলায় বিষের শিশি উপুড় করে দিলেন এক গৃহবধূ।
পুলিশ জানায়, সোমবার ওই ঘটনার পরে তড়িঘড়ি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মহিলা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু বাড়ি ফিরলে অভিযুক্তেরা তাঁকে ছাড়বে কি না, সেই আতঙ্কে কাঁটা হয়ে আছেন ওই বধূ। তাঁর পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন থেকে নম্বর জোগাড় করে ফোন করে খবর দেওয়া হয় রামনগরের বাড়িতে। যোগাযোগ করা হয়েছে রামনগর থানার সঙ্গেও।
মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ওই বধূ পুলিশকে জানান, রামনগর থানা এলাকায় তাঁর বাড়ি। ১৬ বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁর দুই মেয়ে আছে। বধূর অভিযোগ, শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যুর পরে বাস্তুভিটে ও সম্পত্তির লোভে জানুয়ারিতে তাঁকে গণধর্ষণ করে ভাশুর-সহ কয়েক জন। ‘‘শ্বশুর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর সেবা করছিলাম। দুই ভাশুর ও জায়েদের সন্দেহ হয়, সেবা পেয়ে শ্বশুর সব সম্পত্তি আমাদের লিখে দেবেন। শুরু হয় মানসিক অত্যাচার,’’ বললেন বধূ। অভিযোগ, শ্বশুর-শাশুড়ি মারা গেলে ওই বধূ ও তাঁর স্বামীকে মারধর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নেয় দুই ভাশুর। থানায় অভিযোগ করায় অত্যাচার বেড়ে যায়। স্বামী গুজরাতে কাজ করতে গেলে তাঁকে একা পেয়ে ভাশুরেরা কয়েক জন লোক এনে তাঁকে ধর্ষণ করে। তাঁর যৌনাঙ্গে পাথরকুচি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। রামনগর থানায় অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করলেও বাকি অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা করেনি। উল্টে ধৃত দু’জনও জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় এবং বাড়ি ফিরে তাঁকে মারধর করে, হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
শুক্রবার হাসপাতালে শুয়ে ওই বধূ অভিযোগ করেন, ‘‘ফের রামনগর থানায় গেলে পুলিশ প্রশ্ন তোলে, বারবার আমার সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটছে কেন? আমিই কেন গণধর্ষণের শিকার হলাম?’’ এক আইনজীবীকে ধরে হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা। লালবাজার জানায়, গত মাসে সেই মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছে।
হতাশায় ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন নির্যাতিত মহিলা। তিনি বলেন, ‘‘ন্যায় বিচার পাইনি। আবার মামলা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আইনজীবী আরও টাকা চান। কোথায় পাব টাকা? মরা ছাড়া আমার আর উপায় ছিল না। আইনজীবীর সঙ্গে ফের এক বার কথা বলতে হাইকোর্টে যাই। ফলিডল সঙ্গেই রেখেছিলাম।’’ কৌঁসুলি টাকা চাওয়ায় কোর্টের গেটে ফিরে গলায় বিষ ঢেলে দেন তিনি। কিছুটা সুস্থ হলে তাঁর বয়ান রেকর্ড করে হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ।
পুলিশের বিরুদ্ধে মহিলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার সেলভা মুরুগান। তিনি বলেন, ‘‘গণধর্ষণের শিকার কেন হয়েছেন, থানা থেকে এ ধরনের কথা ওঁকে বলা হয়নি। পুরোটাই পরিবারিক গোলমাল। ওঁর অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ এসপি জানান, ওই মহিলা ১০-১২টা অভিযোগ করেছেন। ওঁর বিরুদ্ধেও বেশ কিছু অভিযোগ আছে। সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy