বাবার সঙ্গে দোকানে রমজান। নিজস্ব চিত্র
অপরাধমূলক কাজকর্মের সাথে প্রায়ই নাম জড়িয়ে যায় বাঁকুড়ার ওন্দার পুনিশোলের। পুলিশের আনাগোনা সেখানে নতুন কিছু নয়। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরনোর পরে প্রথম বার ফুল হাতে পুলিশকে আসতে দেখলেন বাসিন্দারা। গ্রামের ছেলে রমজান আলি মল্লিক ৪৯৩ পাওয়ায়, সংবর্ধনা দিতে। রমজানের কথায়, ‘‘যখনই কোথাও আমাদের গ্রামের বদনাম শুনেছি, তখনই ভাল ফল করার জেদ জোরদার হয়েছে।’’
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘পুনিশোলে অনেক সচেতনতামূলক কাজ আমরা করে থাকি। করোনা সংক্রমণ মিটে গেলে সেখানে রমজানের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে প্রচার করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’
বাবা, মা, চার ভাই ও তিন বোনের সংসার রমজানদের। বড়দা মহম্মদ মিরাজ মল্লিক দিনমজুরি করেন। বাবা মহম্মদ হানিফ মল্লিক বাড়িতেই ছোট মুদির দোকান চালান। পড়ার ফাঁকে সেই দোকান সামলে ভলাহীরাপুর নেতাজি সুভাষ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রমজান বাংলা, কম্পিউটার, ভূগোল ও সংস্কৃতে ৯৯ নম্বর পেয়েছেন। ইংরেজিতে ৯৭। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ চক্রবর্তী বলেন, “এই সাফল্য পুনিশোলের আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
প্রায় ১২ হাজার পরিবারের বাস পুনিশোলে। এক সময়ে ডাকাতির বিভিন্ন ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এই গ্রামের। পরেও বিভিন্ন এলাকায় মোটরবাইক চুরির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সেখান থেকে অনেককে ধরেছে পুলিশ। পুনিশোল পঞ্চায়েতের প্রধান রেজাউল হক মণ্ডল বলেন, “গ্রামের পরিস্থিতি যে এখন অনেকটা বদলেছে, রমজান তার উদাহরণ।”
পঞ্চায়েতের প্রধান জানান, গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পেশা প্রধানত দিনমজুরি। কেশবপুর মসজিদের ইমাম আবদুল হান্নান সর্দার বলেন, “পুনিশোলকে অন্য ভাবে রাজ্যের মানুষের কাছে তুলে ধরল রমজান। ওর জন্য গ্রামের সবার মুখে হাসি ফুটেছে।”
তবে গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা দারিদ্র এখন রমজানের ভবিষ্যতের সামনেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁর বাবা মহম্মদ হানিফ মল্লিক বলেন, “ছেলে শিক্ষক হতে চায়। ইংরেজি পড়তে চায়। খরচ জোগাড়ের ক্ষমতা আমাদের নেই।” ওন্দা থানার ওসি রামনারায়ণ পাল সংবর্ধনা দিতে গিয়ে জানিয়ে এসেছেন, দরকারে পুলিশ পাশে থাকবে। স্কুলের শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে কলেজে ভর্তির প্রায় ১৩ হাজার টাকা দিয়েছেন। রমজান বলেন, ‘‘সুযোগ পেলে নিজেকে ফের প্রমাণ করতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy