Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rain

Heavy Rain: ঘূর্ণাবর্তে রেকর্ড বৃষ্টি, চলবে আজ

আবহাওয়া দফতর থেকে নবান্নকে জানানো হয়েছে, আরও তিনটি নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে।

ক্যানিং ২ ব্লকের কালিকাতলা এলাকায় জলমগ্ন বাড়ি।

ক্যানিং ২ ব্লকের কালিকাতলা এলাকায় জলমগ্ন বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৫:৪৮
Share: Save:

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে গত সপ্তাহেই এক দফা ভারী বৃষ্টি পেয়েছিল কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গ। তার রেশ কাটার আগেই সোমবার ফের প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে গেল মহানগর এবং লাগোয়া জেলাগুলি। প্রবল বৃষ্টি হয়েছে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও। এর পিছনে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তকেই দায়ী করছেন আবহবিদেরা।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস সোমবার জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল এবং বাংলাদেশ উপকূলে আর একটি ঘূর্ণাবর্ত ছিল। রবিবার রাতে সেই দু’টি ঘূর্ণাবর্ত মিলে যায়। দু’টি মিলিয়ে যে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছিল, তার প্রভাবেই এ দিন প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, আবহাওয়া দফতর থেকে নবান্নকে জানানো হয়েছে, আরও তিনটি নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে। এ জন্য জেলাগুলিকে সতর্ক করেছে নবান্ন।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে ঘূর্ণাবর্ত রয়েছে। এ ছাড়া, গয়া থেকে কলকাতার উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত মৌসুমি অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার জেরে আজ, মঙ্গলবারও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ঘূর্ণাবর্তটি পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ায় আজ, মঙ্গলবার বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে বেশি বৃষ্টি হবে। পূর্ব মেদিনীপুর লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’এক জায়গায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। কলকাতা-সহ পূর্ব দিকের জেলাগুলিতে বৃষ্টির দাপট কমতে পারে। তিনি আরও জানান, জোরালো বৃষ্টিতে নদীর জলস্তর বাড়তে পারে এবং ক্ষতি হতে পারে খেতের আনাজের। গ্রামাঞ্চলে ভাঙতে পারে কাঁচা রাস্তা।

রবিবার রাতে ঘন ঘন বজ্রপাতও হয়েছে কলকাতা এবং লাগোয়া এলাকায়। বজ্রপাত থেকে সোনারপুরের একটি কারখানায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। আবহবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ — দু’দিক থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকে উল্লম্ব মেঘ তৈরি করেছিল। সেই মেঘের ঘনত্বও ছিল স্বাভাবিকের থেকে বেশি। তার জেরেই এমন প্রবল বজ্রপাত এবং বৃষ্টি হয়েছে।

সেই প্রবল বৃষ্টির জেরে এ দিন রেকর্ডও গড়ে ফেলেছে কলকাতা। রবিবার বিকেল থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত আলিপুরে ১৫৯.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তার মধ্যে রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৪২ মিলিমিটার। হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত এক দশকে ২৪ ঘণ্টায় এত পরিমাণে বৃষ্টি আলিপুরে হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় ১৩১.৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। প্রবল বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে দমদম এবং সল্টলেকেও। রবিবার বিকেল থেকে এ দিন বিকেল পর্যন্ত দমদমে ৯৫ এবং সল্টলেকে ১৪২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

তবে হাওয়া অফিসের তথ্য এ-ও বলছে, সেপ্টেম্বরে এমন ভারী বৃষ্টির উদাহরণ আরও রয়েছে। ১৪ বছর আগে ২০০৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় আলিপুরে ২১১.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় যথাক্রমে ২২৩.৯, ৩৬৯.৬ এবং ১২৯.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। যার ফল— ‘আটাত্তরের বন্যা’।

এ বছর বর্ষা গোড়া থেকেই গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে সদয়। কিন্তু এই দাক্ষিণ্যের পিছনে অশনি সঙ্কেতও দেখছেন আবহবিদদের অনেকে। তাঁরা বলছেন, যে ভাবে এ বার ঘন ঘন নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে তা খুব ভাল লক্ষণ নয়। কারণ, এই ঘন ঘন নিম্নচাপ ও ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়া বঙ্গোপসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই প্রমাণ করছে। প্রসঙ্গত, এই ঘূর্ণাবর্তের দাপটের দিনেই বঙ্গোপসাগরে ফের একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। তাদের এ দিনের বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী শনিবার নাগাদ ফের একটি ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধতে চলেছে বঙ্গোপসাগরে। আবহবিজ্ঞানীদের অনুমান, সেই ঘূর্ণাবর্তটি ওড়িশার দিকে যেতে পারে। তবে তার প্রভাব গাঙ্গেয় বঙ্গে পড়বে না, এমন কথা নিশ্চিত ভাবে কেউ বলছেন না।

এই একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপ তৈরিতে আশঙ্কিত আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই। তাঁদের মতে, সাগরের জলের উষ্ণতা বাড়লে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ তৈরি হয়। এই একটির পিছুপিছু আর একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার অর্থ সাগরের জলের উষ্ণতা কমছে না। এই সাগরের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি বিশ্ব উষ্ণায়নের যোগসূত্রের কথা বার বারই বলেছেন আবহবিজ্ঞানী এবং পরিবেশবিদেরা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টেও এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই জানান, ‌উষ্ণতা বৃদ্ধির নিরিখে বঙ্গোপসাগর অনেক এগিয়ে রয়েছে। তার ফলেই ভবিষ্যতে এমন ঘূর্ণাবর্ত এবং নিম্নচাপের হানাদারি বাড়তে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Depression Weather Forecast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy