—ফাইল চিত্র।
যাত্রা শুরুর আগে ট্রেনের গায়ে আসন সংরক্ষণের তালিকা সাঁটানোর রীতি বছর তিনেক আগেই বন্ধ করেছে রেল। এবার বন্ধ হচ্ছে রেলের টাইম টেবিল ছাপানোর রীতিও। এ প্রসঙ্গে রেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব কমে এসেছে। তাই খরচ বাঁচাতেই এই সিদ্ধান্ত।’’ প্রসঙ্গত, একশো বছরের বেশি সময় ধরে রেল টাইম টেবিল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু কোভিড আবহে ২০২০ এবং ২০২১ সালে তা প্রকাশিত হয়নি। কারণ, ট্রেনের নিয়মিত সূচি বদলে গিয়েছিল।
রেল সূত্রের খবর, রীতি অনুযায়ী আগের বছরের টাইম টেবিলকে ভিত্তি (বেস) ধরে পরের বছরের টাইম টেবিল প্রস্তুত হত। কিন্তু নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যাত্রীদের চাহিদার নিরিখে এবং বেসরকারি ট্রেনের চলাচল শুরু করতে নতুন ভাবে টাইম টেবিল তৈরির কথা ঠিক হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জ়িরো বেসড টাইম টেবিল’। অর্থাৎ যা অন্য কোনও টাইম টেবিলকে ভিত্তি করে তৈরি হবে না। বম্বে আইআইটি তা তৈরি করছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতে সেই নতুন সূচিও প্রকাশিত হয়নি। এর মধ্যেই টাইম টেবিল প্রকাশ করা একেবারে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল।
টাইম টেবিলের ইতিহাস ঘাঁটলে তার বিবর্তনও চোখে পড়ে। ব্রিটিশ আমলে একাধিক আঞ্চলিক রেল টাইম টেবিল ছাপতো। সেই সব একত্রিত করে বিলেতের কায়দায় এ দেশে রেলওয়ে ব্র্যাডশ’ ছাপা শুরু করে কলকাতারই এক প্রকাশনী। সত্তরের দশকের শেষে ‘ট্রেন অ্যাট আ গ্লান্স’ ছাপা শুরু করে রেল। তাতে ব্র্যাডশ’ তার আকর্ষণ হারাতে থাকে। চলতি শতকের গোড়ার দিকে ব্র্যাডশ’ ছাপা বন্ধ হয়ে যায়। এত দিন রেল তিন ধরনের টাইম টেবিল ছেপেছে। সাবার্বান, জ়োনভিত্তিক তালিকা ছাড়াও সারা ভারতের বিশেষ ট্রেনের জন্য ‘ট্রেন অ্যাট আ গ্লানস’ ছাপা হত। রেলের বক্তব্য, ইন্টারনেট ও মোবাইল অ্যাপ নির্ভর ব্যবস্থায় এখন সকলে অভ্যস্ত। তাই টাইম টেবিলের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। অতীতে টাইম টেবিলের বইয়ের দাম সাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে প্রচুর বিজ্ঞাপন থাকত। তাও কমে এসেছে। তাই ঢালাও খরচ করে টাইম টেবিল ছাপা বৃথা।
তবে এক সময়ে রেলের টাইম টেবিলের জনপ্রিয়তা ছিল তা বিজ্ঞাপনের বহরেই প্রমাণিত। শিমলা কিংবা পুরীর হোটেলের হদিস থেকে, চকলেট, টাইপরাইটার, আলমারি, অ্যান্টিক জিনিসপত্র, সাবান, শ্যাম্পু, চুলের সুগন্ধী তেল, সব কিছুরই বিজ্ঞাপন মিলত সেখানে। বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার তরফে নানান প্যাকেজ এবং ছাড়ের ঘোষণাও হত রেলের টাইম টেবিলে। কারণ, ভ্রমণপিপাষু বাঙালির ‘পাঁজি’ ছিল টাইম টেবিলই। রেলপ্রেমীরা ওই টাইম টেবিলেই রেলের বিভিন্ন পরিভাষার ব্যাখ্যাও খুঁজতেন। তাই রেলের সময় সারণী রেলপ্রেমীদের স্মৃতির সরণিও!
একটি রেলপ্রেমিক সংগঠনের সদস্য রুদ্রনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘টাইম টেবিলের সঙ্গে ট্রেনে সফরের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সারা ভারতকে কোন ট্রেন কী ভাবে জুড়ে রেখেছে তার হদিস মিলত।’’ অর্কপল সরকার নামে আরেক রেলপ্রেমী বলেন, ‘‘রেলওয়ে ব্র্যাডশ’ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় ছিল। শার্লক হোমসের গল্পেও তার উল্লেখ আছে। আমাদের এখানেও ট্রেনের সময় সারণী খুব জনপ্রিয় ছিল। তা ছাপা বন্ধ হওয়া দুঃখের খবর। মনে রাখা উচিত, ভারতীয় রেল দেশের চলমান ঐতিহ্যও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy