কবে থেকে চলবে ১২ কামরার ট্রেন? —ফাইল চিত্র।
দু’দিন ধরে চূড়ান্ত নাকাল হতে হচ্ছে শিয়ালদহ মেন এবং উত্তর শাখার যাত্রীদের। শুক্রবার কোনওক্রমে উতরে গেলেও শনিবার যাত্রীদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। বেলা যত গড়িয়েছে, পরিষেবার হাল তত খারাপ হয়েছে। দিনভর বহু ট্রেন বাতিল ছিল। যে ট্রেনগুলি চলেছে, তা কোনও সময়সূচি মেনে চলেনি। রাজধানী বা দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে শিয়ালদহে ঢোকার আগে। লোকাল ট্রেনের অবস্থাও তথৈবচ। দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে চলেছে বিভিন্ন লোকাল ট্রেন।
কবে ঠিক হবে এই পরিস্থিতি? পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে জানিয়েছিলেন, রবিবারই শিয়ালদহের নির্ধারিত কাজ শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই স্বাভাবিক হবে পরিষেবা। শিয়ালদহের ডিআরএম অফিস সূত্রে শনিবার রাতে জানা গিয়েছে, যে গতিতে চলছে কাজ, তাতে সব মিটতে রবিবার দুপুর পেরিয়ে যাবে। তার পরেই স্বাভাবিক ভাবে ট্রেন চলাচল করবে। যদিও রেলকর্মীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নতুন জুতো পরলে যেমন পায়ে ফোস্কা পড়ে, তেমনই নতুন ‘সিস্টেম’ ঠিকঠাক কার্যকর হতেও সময় লাগে।’’ ফলে রবিবার দুপুরে কাজ শেষ হলেও পরিষেবা স্বাভাবিক হতে হতে সোমবার সকাল পেরিয়ে যেতে পারে বলে অনুমান তাঁদের। তেমন হলে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেও ভোগান্তি আছে নিত্যযাত্রীদের কপালে।
শিয়ালদহের মেন এবং উত্তর শাখার ট্রেন যাতায়াত করে ১ থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে। এর মধ্যে ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম এত দিন যে দৈর্ঘ্য এবং আকারের ছিল, তাতে সেগুলি থেকে ১২ কামরার ট্রেন চালানো যেত না। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কখনও কখনও ১২ কামরার ট্রেন দেওয়া হলেও বাকি চারটি থেকে মূলত ৯ কামরার ট্রেন চলত। সব ট্রেন যাতে ১২ কামরার চালানো যায়, সেই উদ্দেশ্যে বেশ কিছু দিন আগে রেল সিদ্ধান্ত নেয়, ওই পাঁচটি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য এবং আকার বৃদ্ধি করা হবে। সেই কাজ শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে।
কিন্তু কবে থেকে চলবে সেই ১২ কামরার ট্রেন?
পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, আগামী জুলাই মাসের গোড়া থেকেই শিয়ালদহ মেন এবং উত্তর শাখার বেশির ভাগ ট্রেন ১২ কামরার চালানো হবে। তাঁর কথায়, ‘‘শিয়ালদহের কাজ রবিবার দুপুরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তবে ১২ কামরার ট্রেন চলাচল করবে সামনের মাসের প্রথম দিক থেকে।’’ তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত জানাননি রেল কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার শিয়ালদহের ডিআরএম দীপক নিগম সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিলেন, ওই কাজের জন্য পরিষেবা সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পরে রেল জানায়, বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। কিছু ট্রেনের যাত্রাপথ শুরু এবং শেষ হবে দমদম জংশন, দমদম ক্যান্টনমেন্ট, বারাসত এবং কল্যাণী স্টেশনে। তবে কোন কোন ট্রেন বাতিল বা কোন ট্রেনগুলির যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে, তা নিয়ে রেল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি। পরে শুক্রবার সকালের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে রেল সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করে। কিন্তু তত ক্ষণে যাত্রীভোগান্তি শুরু হয়ে গিয়েছে।
রেলের এই ভূমিকায় খুশি নন রেলের প্রাক্তন কর্তারা। তাঁদের অনেকের মতে, শিয়ালদহে যে কাজ হবে, সেটা পূর্বপরিকল্পিত। রেল কর্তৃপক্ষ সেটা জানতেন। তা সত্ত্বেও রেলের তরফে ওই বিষয়ে কোনও আগাম প্রচার করা হয়নি বলেই তাঁদের অভিযোগ। এক প্রাক্তন রেলকর্তার কথায়, ‘‘পরিষেবার যে এই হাল হবে, তা জানা ছিল। কাজটা অনেক বড় মাপের। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সম্ভবত সেটা যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেননি। এমনটা যে হবে, তা আঁচ করতে পারেননি যাত্রীরাও। এখানে রেলের গাফিলতি রয়েছে। যাত্রীদের ক্ষুব্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণও রয়েছে।’’
গত দু’দিন ধরে যে ভাবে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছেন, তা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এমন অভিযোগ তুলছেন যাত্রীদের একটা বড় অংশ। রাজধানী বা দুরন্ত এক্সপ্রেসের যাত্রীরা যেমন এই তালিকায় রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন লোকাল এবং মেমু ট্রেনের যাত্রীরাও। যেমন মছলন্দপুরের বাসিন্দা ফতিমা বিবি শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বনগাঁ লোকালে উঠেছিলেন। তাঁর অসুস্থ মা চিকিৎসাধীন আরজি কর হাসপাতালে। শুক্রবারও এসেছিলেন তিনি মা-কে দেখতে। কিন্তু শনিবার বিকেল ৪টের সময় চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার কথা থাকলেও তিনি সময়মতো পৌঁছতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘শুক্রবার রাতে বাড়ি ফেরার সময় শ্যামবাজার থেকে দমদম ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত বাসে গিয়ে ট্রেন পেয়েছিলাম। ট্রেনে বসেই দিন কেটে গেল! অথচ, কোনও স্টেশনে কোনও ঘোষণা নেই। রেল আমাদের মানুষ ভাবে না।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে রাজস্থানের বিকানের থেকে দুরন্ত এক্সপ্রেসে আসা এক যাত্রীর। দমদম স্টেশনের আগে ট্রেনটি দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় তিনি লাইন ধরে হেঁটে দমদম পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনটা এত ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে দমদমের বাইরে। এক বারের জন্য রেলের কোনও কর্মী এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। যদি দাঁড় করাতেই হয়, তা হলে কোনও প্ল্যাটফর্মে দাঁড় করালে যাত্রীদের সুবিধা হয়। রেল সেটা বোঝে না। এত টাকা ভাড়া দিয়ে ট্রেনে উঠে এই পরিষেবা!’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক যদিও তাঁর প্রাক্তন সহকর্মী এবং ভুক্তভোগী যাত্রীদের এ সব দাবি মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘শনিবার সারা দিন বহু যাত্রীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা খুব খুশি। যাত্রীরা খুব ভাল ভাবে নিয়েছেন এই কাজটাকে। ভবিষ্যতে ১২ কামরার ট্রেন চলবে বলে এটুকু কষ্ট সহ্য করতে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন ওই যাত্রীরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই কাজের জন্য পরিষেবা যে কিছুটা বিঘ্নিত হবে, সেটা যাত্রীদের কাছে আমরা সাধ্যমতো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy