প্রায় ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫ হাজার ৭৩৫) বাতিল নিয়ে এ বার বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধলেন কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। তিনি মনে করেন, ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগে ‘দুর্নীতি’ হয়েছে! তবে কিছু ‘অযোগ্য’ প্রার্থীর জন্য ‘যোগ্যদের’ চাকরি যাওয়া সঠিক বিচার নয়। বিষয়টি নিয়ে এ বার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি দিলেন রাহুল। রাহুল লিখেছেন, ‘‘আমার আর্জি, আপনি (রাষ্ট্রপতি) বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুন। সরকারকে অনুরোধ করুন বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে, যাতে ‘যোগ্যেরা’ চাকরি না খোয়ান।’’
২০১৬ সালের এসএসসি-র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যদিও শীর্ষ আদালতে ধাক্কা খায় তারা। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ এই মামলার রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হয়নি। তাই পুরো প্যানেলই বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবার পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে ওই প্যানেলে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ প্রকাশ্যে আসার পরই শোরগোল পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কয়েক জন ‘অযোগ্যের’ জন্য কেন ‘যোগ্যেরা’ চাকরি হারাবেন? কেন আবার তাঁদের পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে? ‘যোগ্য-অযোগ্য’ বাছাই করতে না পারার দায় রাজ্য সরকারের দিকেই ঠেলছেন অনেকে। অন্য দিকে, বাংলার শাসকদলও চাকরি বাতিলের নির্দেশ নিয়ে সরব হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাকরিহারাদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জানিয়েছেন, চাকরিহারা যোগ্যদের পাশে থাকবেন তিনি।
আরও পড়ুন:
চাকরি বাতিল নিয়ে এ বার তৃণমূলকেই পরোক্ষ ভাবে কাঠগড়ায় তুলল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম শরিক কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠিতে রাহুল লিখেছেন, ‘‘নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি কোনও অন্যায় হয়ে থাকে, তা নিন্দনীয়। বিষয়টি অবশ্যই বিচারের আওতায় আসা উচিত। তবে এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যাঁরা সততার সঙ্গে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে অবিচার হয়েছে।’’
রাহুল চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর কয়েক জন প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁদের অনুরোধেই তিনি চিঠি লিখছেন। রাহুলের কথায়, ‘‘একসঙ্গে এত শিক্ষকের চাকরি বাতিলের ফলে বিপাকে পড়েছে লাখ লাখ পড়ুয়া। শিক্ষকের অভাবে ক্লাস করতে পারছে না। ফলে মনোবল ভেঙে যাচ্ছে তাদের।’’ এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করলেন রাহুল।
- ২০১৬ সালের এসএসসিতে নিয়োগের পুরো প্যানেল বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট। বলল, পুরো প্রক্রিয়ায় কারচুপি করা হয়েছে। ওই নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।
- এসএসসি-র শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্ট এই সংক্রান্ত শুনানির পর ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ নিয়োগপ্রক্রিয়াই বাতিল করে দিয়েছিল।
- রাজ্যের ২৬ হাজার চাকরি (আদতে ২৫,৭৫২) বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চ জানিয়েছে, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
-
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সংশোধন এসএসসির, জেনারেলের মতোই আবেদন করতে হবে ওবিসিদের
-
আদালত অবমাননার আশঙ্কা, তাই নির্দেশ মতো পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি আইনি লড়াই চলবে, বললেন মমতা
-
উত্তরপত্রে কারচুপি থাকলে পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, ‘অযোগ্য’দের আর্জি খারিজ করে জানাল সুপ্রিম কোর্ট
-
থানায় হাজিরা দিতেই হবে দুই চাকরিহারা শিক্ষককে! বিকাশ ভবনের সামনে লোকসংখ্যাও কমাতে হবে, বলল হাই কোর্ট
-
‘র্যাঙ্ক জাম্প’ করে যাঁরা চাকরি পান, তাঁরা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, ‘অযোগ্য’দের আবেদন খারিজ সুপ্রিম কোর্টে