মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
দু’দিন আগে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় রাত্রিবাস করেছিলেন কংগ্রেসনেতা রাহুল গান্ধী। তার পরে তাঁর ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ চলে গিয়েছিল বিহারের কিসানগঞ্জে। মঙ্গলবার রাহুল যখন বিহারের পুর্ণিয়ায়, তখন সেই চোপড়াতেই জনসংযোগ যাত্রা করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে যখন নানা কারণে ‘শৈত্যপ্রবাহ’ চলছে, তখন রাহুলের যাত্রা করে যাওয়া জনপদে মমতার জনসংযোগ যাত্রাকে রাজনৈতিক ভাবে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করা হচ্ছে। চোপড়ার পাশাপাশি ইসলামপুরেও পদযাত্রা করেন মমতা। কোথাও দেড় কিলোমিটার, কোথাও আবার এক কিলোমিটার। পদযাত্রার পর তাঁর পূর্বনির্দিষ্ট সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার মমতার পদযাত্রাকে রাহুলের ‘পাল্টা কর্মসূচি’ হিসাবেই দেখতে চাইছে প্রদেশ কংগ্রেস। রাজ্য কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাহুল গান্ধী ন্যায়ের জন্য যাত্রা করছেন। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর জমানার অন্যায় ধামাচাপা দিতে পদযাত্রা করছেন।’’ পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কর্মসূচি অনেক আগে থেকেই ঠিক করা। কে, কোথায়, কী করে গিয়েছেন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কর্মসূচি হবে না নাকি!’’
রাহুলের যাত্রা নিয়ে বাংলায় নানাবিধ ঘটনা ঘটেছে কয়েক দিনে। গত ২৫ জানুয়ারি অসম থেকে হাসিমারা হয়ে বাংলায় ঢুকেছিলেন রাহুল। তার পরে তিনি দিল্লি ফিরে গিয়েছিলেন। ২৮ তারিখ জলপাইগুড়ি থেকে শুরু হয় তাঁর পরের দফার যাত্রা। সেই সূচনার আগে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে মমতাকে চিঠি লিখে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বাংলায় রাহুলের কর্মসূচিতে গোলমাল হয়ে পারে। মমতার প্রশাসন যেন সুরক্ষার বন্দোবস্ত করে। তার পরেও কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ করা হয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রাহুলের যাত্রার ফ্লেক্স, হোর্ডিং ছিঁড়়ে দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি, মালদহ, বহরমপুরে রাহুলের সভা, থাকা-খাওয়া নিয়ে ‘প্রশাসনিক অসহযোগিতা’র অভিযোগও তুলেছে কংগ্রেস।
তবে উত্তরবঙ্গের কর্মসূচির কোথাও রাহুলের নাম উল্লেখ করেননি মমতা। অনেকে মনে করছেন, কংগ্রেসের নেতার কর্মসূচি সম্পর্কে সম্পূর্ণ নীরব থেকে মমতা বিষয়টিকে ‘উপেক্ষা’ই করতে চাইছেন। আবার অনেকে বলছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট হওয়ার সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি বিনষ্ট হয়নি। রাহুলরা মমতার সূত্র মেনে নিলে জোট হতেও পারে। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বহরমপুরে এবং মালদহ দক্ষিণের পাশাপাশি আরও একটি আসনে (অনেকে বলছেন রায়গঞ্জ। অনেকে বলছেন দার্জিলিং) সমঝোতার সূত্র মেনে নিলে জোট হয়ে যেতেই পারে। সেই কারণেই মমতা রাহুলের যাত্রা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।
ঘটনাচক্রে, এর আগে মমতা সরাসরি বলে দিয়েছেন, বাংলায় ৪২টি আসনে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া হবে না। তৃণমূল একাই লড়বে। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব আবার মঙ্গলবার পর্যন্ত জোটের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পাশাপাশিই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ রাজ্য কংগ্রেস নেতারা মমতা-সহ তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। বিহারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশও তৃণমূলকে ‘খোঁচা’ দিয়েছেন। আবার তৃণমূলের মুখপাত্রেরা ধারাবাহিক ভাবে গত কয়েক দিন ধরে বলে যাচ্ছেন, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের দলের জোটের ‘কাঁটা’ একমাত্র অধীর। সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেস এবং অধীরের তুমুল সমালোচনা করেছেন। মঙ্গলবার তৃণমূলের মুখপত্রের প্রভাতী সংস্করণে যে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে, তাতেও কংগ্রেসকে ‘দ্বিচারী’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে মমতার পদযাত্রা কংগ্রেস তথা রাহুলের উদ্দেশে ‘বার্তা’ বলেই মনে করছেন শাসক শিবিরের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy