Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Rabindranath Tagore

বাইশে শ্রাবণ, নতুন প্রাণের আবাহন তিথি

১৩৪৯ বঙ্গাব্দ থেকেই বাইশে শ্রাবণ দিনটি বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে শান্তিনিকেতন। নিজের জীবনকালেই কবি বহুবার পালন করেছেন বৃক্ষরোপণ উৎসব।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌরভ চক্রবর্তী
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০১:৫০
Share: Save:

১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ। প্রয়াণ হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। কবি চেয়েছিলেন, তাঁর শ্রাদ্ধ হবে শান্তিনিকেতনে ছাতিমগাছের তলায় বিনা আড়ম্বরে বিনা জনতায়। কথা রেখেছিল শান্তিনিকেতন। কবির মৃত্যুকে শোকসভা করে নয়, বরং নতুন প্রাণের আবাহনের মধ্য দিয়েই তাঁকে চির অমর করে রেখেছে।

১৩৪৯ বঙ্গাব্দ থেকেই বাইশে শ্রাবণ দিনটি বৃক্ষরোপণ উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে শান্তিনিকেতন। নিজের জীবনকালেই কবি বহুবার পালন করেছেন বৃক্ষরোপণ উৎসব। ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ উত্তরায়ণে নিজের হাতে পঞ্চবটী (বট, অশ্বত্থ, অশোক, বেল, আমলকি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই বৃক্ষরোপণের দিনটিই স্থির হয়ে গেল বাইশে শ্রাবণ তারিখে।

বৈদিক আদর্শ এবং শান্তিনিকেতনের নিজস্ব চরিত্র মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় এই উৎসবে। প্রতীকী আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৃক্ষচারা রোপিত হয় আশ্রম চত্বরে। বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের দিন ভোরবেলায় কলাভবনের পড়ুয়ারা আশ্রম চত্বর ঘুরে জোগাড় করে নিয়ে আসেন টাটকা রঙিন ফুল। ফুল ও পাতা সরবরাহ করা হয় বিশ্বভারতীর উদ্যান বিভাগের তরফ থেকেও। সেই ফুল দিয়েই তৈরি করা হয় পঞ্চকন্যার বাহারি অলংকার। পঞ্চকন্যার সাজে সজ্জিত করা হয় কলাভবনেরই পাঁচ ছাত্রীকে। এই পঞ্চকন্যা বৃক্ষরোপণে পঞ্চভূতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। অন্য দিকে, পঞ্চভূত অর্থাৎ ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম-এর সজ্জায় উপস্থিত থাকে পাঠভবন বা শিক্ষাসত্রের খুদে পড়ুয়ারা। আর তুলনামূলক বড়রা তাদের হয়ে পাঠ করে ‘বনবাণী’ কাব্যগ্রন্থের অংশবিশেষ।

পাঞ্জাবির রং, মাথায় মুকুটের নকশা এবং কপালে আঁকা টিপের পার্থক্য দিয়েই আলাদা ভাবে চিনতে পারা যায় পঞ্চভূতের প্রত্যেককে। বৃক্ষরোপণের দিন দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহযোগে চারাগাছটিকে নিয়ে আসা হয় পূর্বনির্ধারিত স্থানে। সুসজ্জিত কাঠের তৈরি চতুর্দোলায় চার জন পালকি বাহকের কাঁধে চেপে চারাগাছ পৌঁছয় বৃক্ষরোপণের স্থানে। পাশে বেতের তৈরি সুসজ্জিত ছাতা হাতে থাকে দুই ছত্রবাহকও। শোভাযাত্রার একেবারে সামনের সারিতে থাকেন পঞ্চকন্যারা। যাঁদের প্রত্যেকের হাতের তামার পাত্রে থাকে উপকরণ। ক্ষিতির পাত্রে মাটি, অপের পাত্রে জল, তেজের পাত্রে প্রদীপ, মরুৎ-এর পাত্রে তালপাতার পাখা এবং ব্যোমের পাত্রে শঙ্খ।

কলাভবনের এক অধ্যাপক বলেন, “যে স্থানে চারাগাছ রোপণ করা হয়, সেই স্থানটিতে একটি উঁচু বালির বেদি তৈরি করা হয়। তার মাঝখানটিকে ফাঁকা রেখে চারপাশে দেওয়া হয় রঙিন আলপনা। এমন রঙিন স্মরণ অনুষ্ঠান এবং জীবনের বন্দনা বোধহয় রবি ঠাকুরের মৃত্যু দিনেই সম্ভব।” এই বছর পড়ুয়ারা নেই বললেই চলে। বৃক্ষরোপণ ও বাইশে শ্রাবণের অনুষ্ঠানেও তাই ঘটেছে নানা পরিবর্তন। তবে সমস্যা নিশ্চয়ই সাময়িক। গুরুদেবের মৃত্যু দিনে আগামীতেও শান্তিনিকেতন এমন রঙিন ভাবে জীবনেরই জয়গান গাইবে বলেই সকলের বিশ্বাস।

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy