এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আদালত থেকে বেরিয়ে মুখ খুললেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের বিচার শুরু হল সোমবার। প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে শিয়ালদহ আদালত থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে করে বেরোনোর সময় ফের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। দাবি করলেন, তাঁকে ফাঁসিয়েছেন কলকাতা পুলিশের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তাঁর কথায়, ‘‘বিনীত গোয়েল আমাকে সাজিশ (ষড়যন্ত্র) করে ফাঁসিয়েছে!’’
সোমবার শিয়ালদহ আদালতে নির্যাতিতার বাবা হাজির ছিলেন। আর ছিলেন নির্যাতিতার এক প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ও, যিনি নিজেকে ‘কাকু’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। অনুমান, তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সেই প্রক্রিয়া চলে। বিকেল ৫টার একটু পরে আদালত থেকে সকলকে বেরোতে দেখা যায়। যে হেতু আরজি কর মামলায় ‘ইন ক্যামেরা’ বিচার শুরু হয়েছে, সেই কারণে সকলেই মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। ব্যতিক্রম ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার!
আরজি কর মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গত সপ্তাহে আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় চার্জ গঠনের পর শিয়ালদহ আদালত চত্বর থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে করে বেরোনোর সময় ঠিক যে ভাবে চিৎকার করতে দেখা গিয়েছিল, সোমবারও ঠিক একই রকম ভাবে চিৎকারে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন ধৃত। প্রিজ়ন ভ্যানের জানলার কাছে মুখ এনে তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে কোনও কথা বলতে দেয়নি। বড় বড় অফিসার সব! আমি নাম বলে দিচ্ছি। বিনীত গোয়েল আমাকে ফাঁসিয়েছে। বিনীত গোয়েল, ডিসিডিডি স্পেশ্যাল সাজিশ করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাদের সরকারও ওদের সমর্থন করেছে।’’ প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডের পরেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে বিনীতকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর বর্তমানে লালবাজারের ডিসিডিডি স্পেশ্যাল পদে রয়েছেন বিদিতরাজ বুন্দেশ।
গত সপ্তাহেও শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। বলেছিলেন, ‘‘আসলদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সরকার ও ‘ডিপার্টমেন্ট’ তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ধৃতের কথায়, ‘‘আমি রেপ অ্যান্ড মার্ডার করিনি। আমি বললাম যে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে সেখানেও যেতে দিল না। সরকার আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমাকে ভয় দেখাচ্ছে যে তুমি কিছু বলবে না। ডিপার্টমেন্ট আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি পুরোপুরি নির্দোষ।’’
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। ঘটনার ৫৮ দিন পর গত ৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার বহু প্রমাণ হাতে রয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পাওয়া গিয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই গ্রহণ করার পরেই জরুরি বিভাগের চারতলার সিসিটিভি ফুটেজ (আনন্দবাজার অনলাইন অবশ্য সেই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছিল। সেই ফুটেজে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে দেখা গিয়েছিল। পরনে টিশার্ট এবং জিন্স, হাতে হেলমেট, গলায় হেডফোন ঝুলিয়ে আরজি কর হাসপাতালের করিডরে প্রবেশ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ফুটেজে উল্লেখ করা তারিখ এবং সময় বলছে, তখন ৯ অগস্ট ভোর ৪টে ৩ মিনিট। অর্থাৎ, যে দিন ঘটনাটি ঘটে। সিবিআই চার্জশিটে সেই ফুটেজের কথাও উল্লেখ করা ছিল।
চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছিল, সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট (ঘটনার দিন) ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় গিয়েছিলেন ধৃত। সেটাই ছিল ঘটনাস্থল। অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার যে ওই রাতে আরজি কর হাসপাতালেই ছিলেন, তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন থেকেও তার প্রমাণ মিলেছে। শুধু তা-ই নয়, ময়নাতদন্তের সময় মৃতার দেহ থেকে ধৃতের ডিএনএ মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে যে বীর্য এবং লালারস মিলেছিল, তা-ও ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারেরই। এ ছাড়াও ধৃতের যে প্যান্ট এবং জুতো পুলিশ উদ্ধার করেছিল ঘটনাস্থল থেকে, তা থেকে মৃতার রক্তের দাগ মিলেছে। ঘটনাস্থল থেকে যে ছোট ছোট চুল পাওয়া গিয়েছিল, তা অভিযুক্তের চুলের সঙ্গে মিলে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy