বুধবার শিয়ালদহ আদালতে প্রবেশের সময় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। —নিজস্ব চিত্র।
কালো কাচ তোলা গাড়ির ব্যবস্থা করে চিৎকার থামানো গিয়েছে। তবুও কিছু বলার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার। মঙ্গলের মতো বুধবারও আদালতে প্রবেশ করার সময় চিৎকার করে কিছু বলার কার্যত সুযোগ পাননি তিনি। বুধবার হাতের ইশারায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করেছিলেন বটে, কিন্তু তা প্রায় কারও বোধগম্য হয়নি। দু’-এক জনের আবার মনে হয়েছে, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার ‘ফ্লাইং কিস’ দিয়েছেন আদালত চত্বরে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে! অনেকেরই আবার তেমনটা মনে হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তেমনটা অস্বাভাবিক এবং হওয়ার কথা নয় বলেই তাঁদের মত।
আদালত থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে করে বেরোনোর সময় দু’দিন চিৎকার করে নিজেকে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ বলে দাবি করেছিলেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। প্রথম ঘটেছিল আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলায় চার্জ গঠনের দিন, গত ৪ নভেম্বর। দ্বিতীয় বার ঘটে ১১ নভেম্বর, শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর মামলার বিচার শুরুর দিন। দু’দিনের একই ঘটনাক্রমের পর সতর্ক হয়েছিল কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার, বিচারের দ্বিতীয় দিনে ধৃতকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কালো ‘টিন্টেড’ কাচে ঢাকা সাদা রঙের একটি এসইউভি-তে। বুধবারও সেই পন্থা অবলম্বন করে পুলিশ। লোহার জাল দেওয়া কালো কাচের সাদা গাড়িতে করেই ধৃত সিভিককে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতে।
শুধু গাড়ির ব্যবস্থা করাই নয়, গাড়ি থেকে ধৃতকে নামিয়ে তাঁকে আদালতের ভিতরে প্রবেশ করানোর সময়েও যথেষ্ট সতর্ক ছিল পুলিশ। যার ফলে কিছু বলারই সুযোগ পাননি ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। স্রেফ হাত নেড়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর সেই চেষ্টা ব্যর্থই হয়েছে। ওই সময় আদালত চত্বরে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের প্রায় কেউই সেই ‘ইশারা’ বুঝতে পারেননি। তবে বেরোনোর সময় মুখ খুলতে পেরেছেন তিনি। পুলিশি ঘেরাটোপে সুযোগ কমই ছিল। তার মধ্যেই তিনি শুধু বলতে পেরেছেন, ‘‘আমাকে কিছু বলতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ এর বেশি আর কিছুই শোনা যায়নি।
গত সোমবার থেকে আরজি করে ধর্ষণ-খুনের মামলার বিচার শুরু হয়েছে। প্রথম দিন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাবা এবং প্রতিবেশী এক ‘কাকু’। মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয় আরজি করে ঘটনার রাতে নির্যাতিতার সঙ্গে ডিউটিতে থাকা তাঁর দুই সহকর্মী জুনিয়র ডাক্তারের। বুধবার আরও দুই চিকিৎসকের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তাঁদের এক জন সিনিয়র ডাক্তার। অন্য জন মহিলা ডাক্তার। আদালতে হাজির করানো হয়েছিল ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকেও।
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হল থেকে ওই মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটালিয়নের ব্যারাক থেকে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তভার পায় সিবিআই। ঘটনার ৫৮ দিন পর গত ৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিট জমা দেয়। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার বহু প্রমাণ হাতে রয়েছে। সংগৃহীত বয়ান, ভিডিয়ো এবং ফরেন্সিক বা সায়েন্টিফিক রিপোর্টের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে নাম থাকার পর থেকে বার বার মুখ খোলার চেষ্টা করছেন ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার। কখনও ভরা এজলাসে ধৃত দাবি করেছেন, তাঁকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না। কখনও আবার প্রিজ়ন ভ্যান থেকে চেঁচিয়ে দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে। সোমবার বিচার শুরুর দিন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার এবং ডিসি ডিডি (স্পেশ্যাল)-র নাম বলেছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে ফাঁসিয়েছেন। ধৃত বলেছিলেন, ‘‘আমাকে কোনও কথা বলতে দেয়নি। বড় বড় অফিসার সব! আমি নাম বলে দিচ্ছি। বিনীত গোয়েল আমাকে ফাঁসিয়েছে। বিনীত গোয়েল, ডিসিডিডি স্পেশ্যাল সাজিশ করে আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাদের সরকারও ওদের সমর্থন করেছে।’’
তার আগে চার্জ গঠনের দিনেও শিয়ালদহ আদালত থেকে বেরোনোর সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন ধৃত। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আসলদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সরকার ও ‘ডিপার্টমেন্ট’ (পুলিশ) তাঁকে ভয় দেখাচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। ধৃতের কথায়, ‘‘আমি রেপ অ্যান্ড মার্ডার করিনি। আমি বললাম যে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে সেখানেও যেতে দিল না। সরকার আমাকে ফাঁসাচ্ছে। আমাকে ভয় দেখাচ্ছে যে তুমি কিছু বলবে না। ডিপার্টমেন্ট আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি পুরোপুরি নির্দোষ।’’
ওই দুই ঘটনার পরেই সতর্ক হয় কলকাতা পুলিশ। আদালত চত্বরে ধৃতের ‘চিৎকার’ আটকাতে ব্যবস্থা করা হয় কালো কাচের গাড়ির। মঙ্গলের পর বুধবারও পুলিশের সেই কৌশল কাজে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy