Advertisement
E-Paper

শওকত-বার্তায় কি বোঝাচ্ছে রাজ্যের হাল, প্রশ্ন বিরোধীদের

Qustions looms over ambience of industry in state as CM gibes message to Saokat

(বাঁ দিকে) শওকত মোল্লা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৩
Share
Save

রাজ্যে ইনফোসিসের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনে গিয়ে দলের বিধায়ক শওকত মোল্লাকে ‘নতুন দায়িত্ব’ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর নির্দেশ, ইনফোসিস-কে যাতে কেউ ‘বিরক্ত’ না করে, তা দেখতে হবে সওতাকতে। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার মধ্যেই রাজ্যে শিল্প ও বিনিয়োগের পরিবেশে সমস্যার কথা ধরা পড়ছে বলে মনে করছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য জুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যা হাল, তাতে সুষ্ঠু বিনিয়োগ ও শিল্প স্থাপন কি সম্ভব? সর্বত্র শাসক দলের দাপুটে নেতাদের ‘দায়িত্ব’ দেওয়াই কি সমাধানের পথ? শাসক শিবিরের পাল্টা মত, বাম জমানায় জঙ্গি আন্দোলনের জেরে যে ভাবে শিল্পের ঝাঁপ বন্ধ হত, এখন পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেক উন্নত।

ইতিহাস বলছে, রাজারহাটে ইনফোসিস এবং উইপ্রোর মতো তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ আটকে গিয়েছিল অনেক আগেই। বাম জমানায় ২০০৯ সালে রাজারহাটের শিখরপুরে একটি স্থানীয় ফুটবল ম্যাচকে কেন্দ্র করে গোলমালের জেরে বেদিক ভিলেজে আগুন দিয়েছিল ক্ষুব্ধ জনতা। সেই ঘটনার সূত্রেই প্রকাশ্যে এসেছিল রাজারহাট, নিউ টাউন এলাকায় জমি দখলে ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ। সিঙ্গুরে টাটার কারখানা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্যে সেই সময়ে ইনফোসিস, উইপ্রো আর এগোতে চায়নি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আশ্বাস সত্ত্বেও। ঘটনাচক্রে, রাজারহাটে দেড় দশক আগে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগে নাম জড়িয়েছিল ভাঙড়ের তৃণমূল কংগ্রেসের তদানীন্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের। আর এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে শওকতকে দায়িত্ব দিয়েছেন শান্তি রক্ষার, তিনি দলের তরফে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক এবং শাসক শিবিরের সমীকরণে আরাবুলের বিপরীত শিবিরের!

বিরোধীরা অবশ্য শুধু রাজারহাট বা ইনফোসিস বলে নয়, গোটা রাজ্যের নিরিখেই বিনিয়োগ ও শিল্পের চিত্রকে দেখতে চাইছে। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের যেমন দাবি, ‘‘রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। এখন তৃণমূলই পুলিশ। পুলিশই তৃণমূল! নিচু তলায় বিচারব্যবস্থা আক্রান্ত। নিম্ন আদালতের বিচারকেরা প্রাণ ভয়ে সিঁটিয়ে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকেই সবটা দেখে শুনে রাখতে হচ্ছে। আর এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে শিল্প আসে না।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, তৃণমূলের কাজকর্মের জন্যই ইনফোসিসের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রায় ১০ বছর দেরিতে চালু হল। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘শিল্পে যাতে শান্তি থাকে, মুখ্যমন্ত্রী তার দায়িত্ব দিয়েছেন শওকতকে। যিনি বোমা বানান বলে মুখ্যমন্ত্রীই আগে বলেছিলেন! তা হলে অশান্তি পাকায় শওকতেরা, এটা মেনে নিলেন? নাকি শান্তি রাখার জন্য কাকে তোলা দিতে হবে এবং কালীঘাট ভাগ পাবে, সেই বার্তা শিল্প-কর্তাদের দিয়ে দিলেন? কোথাও শওকত, কোথাও অনুব্রত, কোথাও জাহাঙ্গির— এ ভাবেই তো চলছে!’’

ইনফোসিসের দৌলতে চার হাজার কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার যে হাল, তাতে ওই কর্মসংস্থানের তালিকায় বাংলার ছেলে-মেয়েদের কত জন সুযোগ পাবেন, প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী। সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘জমির ব্যবস্থা করার জন্য তৃণমূলের লোকজন শিল্প-কর্তাদের কাছে দানাপানি তো নিয়েই থাকে। রাজ্য জুড়ে সেই কারবার বন্ধ করতে কোনও ব্যবস্থা হয়েছে? এখন মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বার্তা দিচ্ছেন, ওখানে আর ঝামেলা ক’রো না!’’

দায়িত্বপ্রাপ্ত শওকত অবশ্য বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে দায়িত্ব আমাকে দেবেন, সেটা পালন করার চেষ্টা করব। শান্তি থাকলেই সুষ্ঠু ভাবে বিনিয়োগ আসবে এবং রাজ্য এগোবে। ভাঙড় এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বিনিয়োগে করতে আসছে। তাই এলাকা শান্ত রাখতে হবে।’’ আগেকার ‘অশান্তি’র দায় তিনি চাপিয়েছেন আরাবুলের উপরে। আর দল হিসেবে তৃণমূল মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে সরকারের ‘ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন’ হিসেবেই দেখছে। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘কোথাও আইনশৃঙ্খলার কোনও সমস্যা হলে তা সরকার ও প্রশাসনই দেখবে। তবে স্থানীয় স্তরে বিচ্ছিন্ন ভাবেও যাতে শিল্পদ্যোগীদের সমস্যায় পড়তে না হয়, মুখ্যমন্ত্রী তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। এর সঙ্গে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ সেই সঙ্গেই তিনি ‘অতীতের অভিজ্ঞতা’ দেখিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘সিপিএমের আমলে অন্যায় ও উগ্র শ্রমিক আন্দোলনের জেরে শিল্পপতিরা রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এখন সেই তো পরিস্থিতিই নেই। এই ‘সতর্ক-বার্তা’ ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, সকলকে শিল্পের সহযোগী হওয়ার বার্তা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Saokat Molla Shoukat Mollah CM Mamata Banerjee Opposition TMC infosys

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}