—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের একাধিক জায়গায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের জেরে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত বছর। পুলিশ-প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দিনের পর দিন এই সমস্ত কারখানা চলে কী করে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এর পরেই তড়িঘড়ি বাজি ‘ক্লাস্টার’ (এক জায়গায় পুঞ্জীভূত) তৈরির ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। কিন্তু ক্লাস্টার তৈরি হওয়ার আগেই বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়ে যাওয়া নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় নানা মহলে। এমন প্রশিক্ষণ পেয়ে ক্লাস্টারের বাইরেই নিজের মতো বাজি বানাতে গিয়ে ফের কেউ বিপদ ঘটিয়ে ফেলবেন না তো, সেই প্রশ্ন ওঠে। কিন্তু ঘোষণার পরে সাত মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ক্লাস্টারের দেখা মেলেনি। এর মধ্যেই ফের শুরু হয়ে গিয়েছে বাজি তৈরির প্রশিক্ষণ শিবির করার তোড়জোড়। যা প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, অতীতের ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়ার বদলে ক্লাস্টার হওয়ার আগেই প্রশিক্ষণের তৎপরতা কেন?
এই বিষয়ে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করাচ্ছেন গত বছরের প্রসঙ্গ। সে বার এমন প্রশিক্ষণ শিবির করার জন্য আলাদা আলাদা ভাবে ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ বা ‘নিরি’র কাছে আবেদন করেছিল বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। সে জন্য কলকাতায় আসেন নিরি-র তৎকালীন প্রধান বিজ্ঞানী সাধনা রাইলু এবং তাঁর সহযোগীরা। মহেশতলা, হুগলি-সহ একাধিক জায়গায় প্রশিক্ষণ শিবির করেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, এমন শিবিরে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বাজি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোনও কোনও ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে মোটা টাকা তোলা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মামলাও হয়। থানা থেকে পুলিশ গিয়ে শিবির বন্ধ করিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্যেই নাগপুরে ফিরে যান সাধনা। বিষয়টি এর পরে পৌঁছয় সরকারের কাছে। নিরি-র তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারের অনুমোদিত আবেদনপত্র ছাড়া ভবিষ্যতে আর কোনও বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনের ডাকে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করবে না তারা।
গত বছরের মে মাসে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প এবং বস্ত্র দফতরের (এমএসএমই) অধীনে সবুজ বাজি প্রস্তুত, মজুত এবং বিক্রি সংক্রান্ত একটি উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার ম্যানুফ্যাকচারিং, স্টোরেজ অ্যান্ড সেলিং স্কিম’ বা ডব্লিউবিজিএফএমএসএস। ঠিক হয়, এই স্কিমে সরকারি ফাঁকা জমি চিহ্নিত করে সেটি এমএসএমই দফতরকে ৩০ বছরের জন্য লিজ়ে দিয়ে সবুজ বাজির ক্লাস্টার তৈরির কাজে সাহায্য করবেন জেলা প্রশাসকেরা। যে সমস্ত ব্যবসায়ী নিজেদের কেনা জমিতে ক্লাস্টার তৈরি করার কাজ করবেন, তাঁদের মোট খরচের ৯০ শতাংশ সরকারের তরফে দিয়ে দেওয়া হবে তিনটি কিস্তিতে ভাগ করে। কিন্তু ক্লাস্টার এখনও তৈরি হয়নি। এর মধ্যেই আবার বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফে নিরি-র কাছে আবেদন করা হয়েছিল প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য। কিন্তু সরকার অনুমোদিত আবেদন চেয়ে পাঠায় তারা। এর পরেই এমএসএমই দফতরে আবেদন জমা পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত ৩৪০টি আবেদন নিরি-র কাছে পাঠানো হয় এমএসএমই দফতরের তরফে।
কিন্তু কোথায় এই প্রশিক্ষণ শিবির হবে, তা নিয়ে জটিলতা চলছে। নিরি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের পুরনো অভিজ্ঞতা সুখের নয়। রাজ্যের জেলায় জেলায় ঘুরে শিবির করার চেয়ে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, হয় নাগপুরে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, নয়তো কসবায় আমাদের কার্যালয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করতে হবে।’’ এমএসএমই দফতর যদিও একটি শিবির নুঙ্গিতে, অন্যটি মহেশতলার চম্পাহাটিতে করার অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যেই জটিলতা বাড়িয়ে মেদিনীপুর থেকে প্রশিক্ষণ শিবির করার জন্য আরও ২২৩টি আবেদন জমা পড়েছে এমএসএমই দফতরে। ফলে শেষ পর্যন্ত কোথায় বাজির প্রশিক্ষণ শিবির হবে, ক্লাস্টার তৈরির আগে আদৌ এমন শিবির করা উচিত কি না, সেই নিয়েই ডামাডোল চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy