Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Awas Yojana

খরচ হয়নি, আবাসের বিপুল টাকা পড়েই

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনে আবাস প্রকল্পের টাকা দেবে রাজ্যই। অর্থের জোগান কোথায়?

— প্রতীকী চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৩
Share: Save:

তবু ‘টাকাটি যাবে না ছোঁয়া’!

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আবাস-খরচের ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে রাজ্য। অথচ আবাস প্রকল্পের ‘স্টেট নোডাল অ্যাকাউন্টে’ এখনও পড়ে রয়েছে এই প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ অর্থ! কিন্তু প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রকল্পের আসন্ন ব্যয়ভার মেটাতে এই টাকা কোনও ভাবেই ব্যবহার করতে পারবে না রাজ্য। কারণ, পড়ে থাকা ওই অর্থ আগের আবাস-পর্বের উপভোক্তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল। যা খরচ হয়নিএত দিনেও।

সরকারি তথ্য বলছে, চলতি আর্থিক বছরে (২০২৪-’২৫) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাতায় (ওপেনিং ব্যালান্স ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট) রয়েছে প্রায় ২১৬৪ কোটি টাকা। তাতে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সুদ জমা হওয়ায় এখন সেই পরিমাণ রয়েছে ২১৮৪ কোটির কিছু বেশি অর্থ। যদিও এই বছর এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র বা রাজ্য—কেউই বরাদ্দ দেয়নি। নিয়মমাফিক অল্প খরচের পরে রাজ্যের ‘নোডাল অ্যাকাউন্টে’ রয়েছে প্রায় ২১৬০ কোটি টাকা!

২০২২ সালের নভেম্বরে প্রায় ১১ লক্ষ উপভোক্তা সম্বলিত রাজ্যের তালিকাকে অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। তার পর থেকে গত প্রায় দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে এই প্রকল্পে। ঘটনাচক্রে, সে বছরই (২০২২-’২৩ অর্থবর্ষ) ‘ওপেনিং ব্যালান্স ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট’ অনুযায়ী, রাজ্যের হাতে ছিল প্রায় ১৬৯৩ কোটি টাকা। সে বছর কেন্দ্রের কোনও বরাদ্দ না থাকলেও, রাজ্যের বরাদ্দ ছিল প্রায় ১৭৯২ কোটি টাকা। তাতে ৪৮ কোটি টাকা সুদ জমার পরে মোট প্রায় ৩৫৩৫ কোটি টাকা হাতে ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ১১০৮ কোটি টাকা খরচের পরে রাজ্যের ‘নোডাল অ্যাকাউন্ট’-এ থাকে প্রায় ২৪২৬ কোটি টাকা। আবার ২০২৩-’২৪ আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গের ‘ওপেনিং ব্যালান্স ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট’-এ ছিল প্রায় ২২৫১ কোটি টাকা। তার উপর প্রায় ৭৭ কোটি টাকার সুদও জমা হয়েছিল। সে বছর রাজ্যের ‘নোডাল অ্যাকাউন্টে’ ছিল ২২৪৮ কোটি টাকা। ওই বছর কেন্দ্র বা রাজ্যের নতুন কোনও বরাদ্দ ছিল না। বিরোধীদের অভিযোগ, আবাসের উপভোক্তা তালিকা যে ত্রুটিপূর্ণ ছিল, তা এই উদাহরণেই স্পষ্ট। না হলে এত টাকা পড়ে থাকার কারণ কী!

আধিকারিকদের একাংশের ব্যাখ্যায়, আবাস-উপভোক্তাদের এক-এক জন মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকেন। তবে তা প্রথম কিস্তিতে ৬০, দ্বিতীয়তে ৪০ এবং তৃতীয় কিস্তিতে ২০ হাজার টাকা। তবে একটি কিস্তির টাকা ব্যবহারের প্রমাণ দেখাতে পারলে তবে পরের কিস্তির টাকা পাওয়া যায়। শেষ কিস্তির টাকা পাওয়ার প্রশ্নে বাড়ি সম্পূর্ণ হওয়ার প্রমাণ দাখিল করতে হয় সরকারের কাছে। তাই রাজ্যের প্রকল্পের খাতায় বিপুল অর্থ থেকে যাওয়ার অর্থ, এই কিস্তিগুলির অর্থ ব্যবহারই হয়নি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার পরে অনেকে তা খরচ করে ফেলেছেন। ফলে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা তাঁরা পাননি। সেটা জমে গিয়েছে। আবার যাঁরা দ্বিতীয় কিস্তি পর্যন্ত টাকা পেয়েছিলেন, তাঁরা প্রমাণ দাখিল করতে না পারায় তৃতীয় কিস্তির টাকা পাননি। তা-ও জমে রয়েছে সরকারের ঘরে।” যদিও পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘এই অর্থ বেশির ভাগ রাজ্যেরই। রিমান্ড করে টাকা ফেরানো হয়েছিল।’’

অভিজ্ঞ প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই পড়ে থাকা অর্থ চাইলেই খরচ করে ফেলা যায় না। বরং সংশ্লিষ্ট উপভোক্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করে টাকা উদ্ধার করতে হয়। তখনই তহবিলের সংশোধন সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, অতীতে কেন্দ্র এমন পদক্ষেপ করে টাকা ফেরানোর সুপারিশ করেছিল রাজ্যকে। কিন্তু সে কাজ এগোয়নি বলেই রাজ্যের তহবিলে এখনও বিপুল অর্থের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে।

কেন এমন সমস্যা? জেলা-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, টাকা উদ্ধারের কাজ খুবই জটিল। কারণ, কিছু উপভোক্তা রয়েছেন, যাঁরা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরি না করে অন্য রাজ্যে পরিযায়ী হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে প্রথম কিস্তির টাকায় বাড়ি তৈরি না করে খরচ করে ফেলেছেন। আবার এমন উপভোক্তা রয়েছেন, যাঁদের নামে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। পরে দেখা যায় তাঁদের নিজস্ব জমি নেই। ফলে বরাদ্দ হওয়া অর্থ আর ফেরানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকার অনেককে জমির পাট্টা দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু অনেককে পাট্টা এখনও দেওয়া যায়নি। এক জেলা-কর্তার বক্তব্য, “কেন্দ্রের সুপারিশ মেনে রাজ্যও একটা সময়ে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিছু উপভোক্তার বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপও করা হয়। তবে তাঁদের সাফ জবাব—শাস্তি হলে হবে, কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার সামর্থ নেই। এই অবস্থায় এই পথেও সমস্যার সমাধান নেই।”

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Awas Yojana West Bengal government Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy