স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সামনের মাসেই প্রসবের তারিখ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসব করানোর বিপুল খরচ। অন্তত দেড় লক্ষ টাকা মতো খরচ পড়তে পারে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে?
ইতিমধ্যেই ঋণের বোঝা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যদি কিছু টাকা আদায় করা যায়, এই ভেবেই খেলনা পিস্তল আর ছুরি হাতে ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে ঢুকে পড়েছিলেন সার্ভে পার্কের বাসিন্দা, ডালিম বসু নামে সেই যুবক। সূত্রের খবর, গ্রেফতার করার পরে ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই জেনেছে পুলিশ। তবে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে বলে শনিবার আদালতে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই বিচারক তাঁকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ মুখে মাস্ক পরে সার্ভে পার্কের বটতলা মোড়ের কাছে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ঢোকেন ডালিম। তাঁর হাতে ছিল খেলনা পিস্তল। ঢুকেই ব্যাঙ্কের এক কর্মীকে জাপটে ধরেন তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘হাত উপরে তুলুন। নড়লেই গুলি চালিয়ে দেব।’’ এর পরে ওই কর্মীকে নিয়েই ম্যানেজারের ঘরে ঢোকেন ডালিম। ম্যানেজারকে এর পরে টাকা বার করার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাতের পিস্তলটি দেখেই ম্যানেজারের সন্দেহ হয়। একটি পেপারওয়েট ডালিমের দিকে ছুড়ে মারেন তিনি। মুহূর্তে অন্য এক কর্মী ডালিমকে জাপটে ধরেন। এর পরে অ্যালার্ম বাজিয়ে ব্যাঙ্কের মূল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ডালিমকে ধরে এর পরে বেধড়ক মারধর করা হয়। তত ক্ষণে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ। দ্রুত তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ডালিমকে গ্রেফতার করা হয়।
এ দিন সার্ভে পার্কে ডালিমদের পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ক্লাবের পাশের গলিতে একেবারে শেষ বাড়িটা তাঁদের। পাড়ার অন্য বাড়িগুলির মতো ঝকঝকে পরিস্থিতি নয় সেটির। বেল বাজাতে এক তরুণী বারান্দা থেকেই বলেন, ‘‘কথা বলার মতো কেউই নেই। সকলে আদালতে গিয়েছেন।’’ বেরিয়ে এসে দেখা গেল, পাড়ার ক্লাবেও আলোচনার কেন্দ্রে ডালিম। সেখানেই উপস্থিত এক যুবকের দাবি, সার্ভে পার্কের একটি নামী দুর্গাপুজো কমিটির সদস্য ডালিম। যুবকের কথায়, ‘‘পাড়ায় ভাল ছেলে বলেই ওকে সকলে চেনেন। আমরা খবর পেয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে সব দেখে অবাক। দেখি, ওকে ধরে বেধড়ক মারা হয়েছে। ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে ও।’’ ক্লাবেরই আর এক ব্যক্তি জানান, ডালিমের বাবা, বছর ষাটেকের প্রৌঢ় বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। মা গৃহবধূ। ডালিম নিজে যোগাযোগ ভবনে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাক বিভাগের কর্মী। তাঁর স্ত্রী গৃহবধূ। বছর পাঁচেক আগে দুই পরিবারের দেখাশোনার মাধ্যমে তাঁদের বিয়ে হয়। সম্প্রতি সার্ভে পার্ক এলাকাতেই একটি বাড়ি কিনেছেন ডালিম। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকেই তিনি প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণের টাকা মেটাতেই বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছিলেন ডালিম। তার উপরে নিজের মোটরবাইকের ঋণ রয়েছে। আগামী মাসে সন্তানের জন্মানোর তারিখ জানার পর থেকে টাকার চিন্তা তাঁকে আরও পেয়ে বসে বলে ডালিমের এক বন্ধুর দাবি। সেই কারণেই তিনি এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে তাঁর দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ডালিম জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই এক হাজার টাকার বিনিময়ে গ্যাস লাইটার পিস্তলটি কিনেছিলেন তিনি। বাড়ি থেকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন একটি ছুরিও। দু’টিই তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বলে আদালতে পুলিশ জানিয়েছে। তবে ডালিমের পক্ষের আইনজীবী সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘ডালিমকে ধরে বেধড়ক মারা হয়েছে। তাঁর পুরনো কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই। এই সমস্ত দিক তুলে ধরেই জামিনের আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু বিচারক আপাতত পুলিশি হেফাজতে থাকারই নির্দেশ দিয়েছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)