Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ইন্ডিগোর শিশু-মুক্ত এলাকা, বিতর্ক তুঙ্গে

সিগারেট-মুক্ত এলাকা, শব্দ-মুক্ত এলাকার মতো শিশু-মুক্ত এলাকা! গত এপ্রিল মাস থেকে বিমান সংস্থা ইন্ডিগো তাদের বিমানে ‘চাইল্ড-ফ্রি জোন’ চালু করেছে। ১২ বছরের কমবয়সীদের সেখানে ঠাঁই নেই। কাকুতিমিনতি করেও ওই সব আসনের টিকিট মিলছে না। আর বিমানসংস্থার এই সিদ্ধান্ত শোরগোল উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছে বিতর্ক, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি।

সুনন্দ ঘোষ ও পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:২৩
Share: Save:

সিগারেট-মুক্ত এলাকা, শব্দ-মুক্ত এলাকার মতো শিশু-মুক্ত এলাকা!

গত এপ্রিল মাস থেকে বিমান সংস্থা ইন্ডিগো তাদের বিমানে ‘চাইল্ড-ফ্রি জোন’ চালু করেছে। ১২ বছরের কমবয়সীদের সেখানে ঠাঁই নেই। কাকুতিমিনতি করেও ওই সব আসনের টিকিট মিলছে না। আর বিমানসংস্থার এই সিদ্ধান্ত শোরগোল উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। শুরু হয়েছে বিতর্ক, যুক্তি-পাল্টা যুক্তি।

এমনিতে ওয়েবসাইটে টিকিট কাটার সময়ে, অতিরিক্ত টাকা খরচ করলে বিমানের প্রথম সারির আসন বুক করা যায়। একই নিয়ম দ্বিতীয়, তৃতীয় সারির আসনের ক্ষেত্রেও। এগুলি প্রিমিয়াম আসন। যে এয়ারবাস ৩২০ বিমান ইন্ডিগো ব্যবহার করে, তার ১২ ও ১৩ নম্বর সারির আসনের সামনে বিমানের ইমার্জেন্সি জানলা থাকে। তার সামনের আসনে বসলে পা ছড়ানোর জায়গা মেলে বেশি। তাই ওই দুই সারির আসনের টিকিট পেতেও বাড়তি টাকা গুনতে হয়।

ইন্ডিগো জানাচ্ছে, ১ থেকে ৪ এবং ১১ থেকে ১৪ সারির আসনে ১২ বছরের কমবয়সীদের বসতে দেওয়া হবে না। ফলে ১২ বছরের কমবয়সী শিশু বা বালক-বালিকা থাকলে তার পরিবারও ওই সব প্রিমিয়াম আসনে যাত্রা করতে পারবে না। বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষের যুক্তি, এমন অনেক যাত্রী রয়েছেন, যাঁরা নিরিবিলি ওই এলাকার প্রিমিয়াম আসনে যাতায়াত পছন্দ করেন। সেখানে তাঁরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারেন বা বিশ্রাম করতে পারেন। ১২ এবং ১৩ নম্বর সারির আসনের ক্ষেত্রে যুক্তি, জরুরি প্রয়োজনে ইমার্জেন্সি জানলা খুলতে হলে সেই সারির যাত্রীদের সজাগ থাকতে হয়। বাচ্চা থাকলে সমস্যা হতে পারে। কোনও বাচ্চা অসাবধানে ইমার্জেন্সি জানলার লক নিয়ে টানাটানি করলেও বিপত্তি হতে পারে।

অনেকেই অবশ্য বিমানসংস্থার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। সমাজতাত্ত্বিক রুচিরা ঘোষের মতে, বিমানের ওই জায়গাটি চওড়া বলে বাচ্চাদের ছোট্ট খাট সেখানে রাখা সুবিধাজনক। বাচ্চা কোলে নিয়ে একটু পা ছড়িয়ে বসারও সুবিধা মেলে। বাচ্চাদের পক্ষে একটু হেঁটে চলে বেড়ানোর অবকাশও থাকে। রুচিরার কথায়, ‘‘ভারতীয় ঐতিহ্য সহনশীলতা, সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলা, শিশুদের প্রতি স্নেহের কথা বলে। অনেকের সেই মূল্যবোধে আঘাত লেগেছে। কিন্তু সমাজ বদলাচ্ছে। অনেকেই নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য, ব্যক্তি স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দেন। পরিবর্তিত মূল্যবোধের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংস্থাও কনজিউমারিজমকে মূল্য দিচ্ছে।’’

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বাচ্চাদের জন্য আলাদা জায়গার যুক্তিকে পুরোপুরি ফেলতে পারেন না। তাঁর কথায়, বাচ্চারা মাঝেমাঝে যা উৎপাত করে, তা অনেকের পক্ষে, বিশেষ করে বৃদ্ধ ও অসুস্থদের সমস্যার কারণ হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি ছোটবেলায় যেমন শয়তান ছিলাম, তেমন বাচ্চা হলে অনেকের পক্ষেই সহ্য করা কঠিন।’’ অনেকটা একই মত মনোবিদ মোনালিসা ঘোষের। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বিমানযাত্রায় এমনিতেই বাচ্চারা ঘ্যানঘ্যান করে, সিটবেল্ট নিয়ে অস্বস্তিতে থাকে। পাশে বসা যাত্রীর জামা ধরে টানে, জানলার ধারে বসার জেদ করে। সবাই তো আর ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস আইয়ার’ ছবির রাজা চৌধুরী চরিত্রের মতো সহনশীল নন। তাঁদের বিরক্ত হওয়া স্বাভাবিক।’’

এয়ার ইন্ডিয়া বা স্পাইসজেট কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই বিমানসংস্থার সিদ্ধান্তকে সঙ্গত মনে করেন না। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তার কথায়, ‘‘এরকম হওয়া উচিত নয় বলেই আমরা মনে করি।’’ স্পাইসের এক কর্তা জানান, ৪ নম্বর সারি পর্যন্ত সাইলেন্স জোন। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেই আসনের টিকিট কাটা কোনও যাত্রীকে তো ৫ নম্বর সারিতে বসা কোনও বাচ্চা বিরক্ত করতে পারে। তখন কী হবে? বাচ্চা ১৫ নম্বর সারিতে বসে কাঁদলে তার আওয়াজ কী ১২-১৩ নম্বর সারিতে পৌঁছবে না? তাঁর কথায় ‘‘এই ভাবে ভাগ করলে তো এ বার নাক-ডাকা যাত্রীদের আলাদা জায়গা, কাশি হচ্ছে এমন যাত্রীদের আলাদা জায়গা দরকার হবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

indigo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy