E-Paper

শাহজাহানকে সিবিআইয়ের হাত থেকে রাজ্য পুলিশের হাতে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্যের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন

সন্দেশখালি মামলায় ইডি অফিসারদের উপরে হামলার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই মামলার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টে ছুটেছে রাজ্য সরকার।

Shahjahan Sheikh

শেখ শাহজাহান। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ০৫:১৭
Share
Save

সন্দেশখালি কাণ্ডে শেখ শাহজাহানকে পাকড়াও করতে রাজ্য পুলিশ আদৌ তৎপর ছিল কি না, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার তার থেকেও বেশি প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের হাত থেকে শাহজাহানকে রাজ্য পুলিশের হাতে ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ্যের তৎপরতা নিয়ে। অনেকেই বলছেন, শাহজাহান এক জন অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে যে অপরাধের অভিযোগ উঠেছে তাঁর সঙ্গে রাজ্য সরকারের যোগ নেই বলে প্রশাসনই দাবি করেছে। তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করলে রাজ্য কেন আপত্তি করছে? কলকাতা হাই কোর্টের দেওয়া সিবিআই তদন্তের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে কেন জনগণের টাকা অকাতরে খরচ করা হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সন্দেশখালি মামলায় ইডি অফিসারদের উপরে হামলার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সেই মামলার বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্টে ছুটেছে রাজ্য সরকার। অন্য গুরুতর মামলার মতোই রাজ্য সরকারের হয়ে শীর্ষ আদালতে সওয়াল করতে নেমেছেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। আইনজীবী শিবিরের খবর, দেশের প্রথম সারির আইনজীবী হিসেবে পরিচিত এই কংগ্রেস সাংসদের এক দিনের পারিশ্রমিক কয়েক লক্ষ টাকা। সেই হিসেবে জনগণের টাকা খরচ করে শাহজাহানকে সিআইডি হেফাজতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে রাজ্য।

আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের বক্তব্য, শাহজাহান জনপ্রতিনিধি হলেও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে কোনও সরকারি কাজের সম্পর্ক নেই। বরং সরকারি অফিসারদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সরকার স্বচ্ছ হলে বলত যে সিবিআই তদন্ত করুক বা সিআইডি তদন্ত করুক, কিছুতেই আপত্তি নেই। কিন্তু যে ভাবে জনগণের টাকা খরচ করে সিআইডির হাতে তদন্ত ফেরানোর চেষ্টা চলছে তাতে স্পষ্ট যে সিআইডি নিরপেক্ষ তদন্ত করবে না। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের পাল্টা বক্তব্য, যে ভাবে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ হয়েছে তাতে সিআইডির ভূমিকাকে খাটো করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে সিআইডির হাতে তদন্ত থাকা উচিত।

সন্দেশখালির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শাহজাহানের জন্য রাজ্য প্রশাসন কেন সুপ্রিম কোর্টে দরবার করতে গিয়েছিল, সেই প্রশ্নে সরব বিরোধীরা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রথমে পুলিশ এবং তৃণমূল দাবি করছিল, আদালত হাত-পা বেঁধে রেখেছে বলে শাহজাহানকে ধরা যাচ্ছে না। আদালত যখন সেই অপব্যাখ্যা ভেঙে দিল এবং বলে দিল পুলিশ তো বটেই, সিবিআই-ইডিরও শাহজাহানকে গ্রেফতারে বাধা নেই, তখন তড়িঘড়ি তাকে গ্রেফতার দেখানো হল। আবার সেই শাহজাহানকেই সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া আটকাতে জনতার করের টাকায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য! এর থেকে বোঝা যায়, মুখে যা-ই বলুক তৃণমূল আসলে শাহজাহানকে আড়াল করতে চায়। সন্দেশখালির ভাগ কালীঘাট, ক্যামাক স্ট্রিটে কতটা আসত, সে সব ধরা পড়ে যাওয়া আটকাতেই পুলিশ-প্রশাসন কাজ করেছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টে লাভ হয়নি, মানুষের আদালতেও হবে না!’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এর থেকে আঁতাঁত পরিষ্কার। বোঝাই যাচ্ছে, কালীঘাটের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সঙ্গে শাহজাহানের গোপন আঁতাঁত আছে। আর তাই শাহজাহানকে যাতে কেন্দ্রীয় সংস্থা হেফাজতে না পায়, সে জন্য সর্বস্ব পণ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হচ্ছে। একটাই লক্ষ্য, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারকে বাঁচাতে যেন তেন প্রকারেণ শাহজাহানকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে যেতে দেওয়া যাবে না।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যেরও মন্তব্য, ‘‘শাহজাহানই তৃণমূল। তৃণমূলই শাহজাহান। তাই শাহজাহান ধরা পড়লে শুধু তৃণমূলের গোপন কথা নয়, পশ্চিমবঙ্গের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে আপস হওয়া বিভিন্ন তথ্যও সামনে আসবে। তাই শাহজাহানকে আড়াল করতে তৃণমূল মরিয়া!’’

তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন হয়তো ভেবেছে তদন্তের জন্য তারাই যথেষ্ট। তাই তদন্তের স্বার্থে পদক্ষেপ করেছে। এই নিয়ে কিছু বলার নেই।’’

প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল মুখে যতই বলুক অন্যায়ের প্রতি তাদের শূন্য সহনশীলতার নীতি, আসলে তারা প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে শাহজাহানকে আড়াল করতে চায়। তা না হলে শাসক দল যাকে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করেছে, তার জন্য আবার সরকারি টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে কেন?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shahjahan Sheikh Arrest sandeshkhali TMC Shahjahan Sheikh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।