Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

জমে থাকা অস্ত্রোপচার শেষ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন

চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকতে থাকা সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো অনেকটাই নির্ভর করে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে। তাই তাঁদের অভাবে অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার প্রায় বন্ধ রাখতে হয়েছিল।

এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে আনা হচ্ছে এক রোগীকে। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে আনা হচ্ছে এক রোগীকে। মঙ্গলবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

গত সাত দিন ধরে কার্যত অচল থাকার পরে অবশেষে রাজ্যের স্বাস্থ্য ফিরেছে পূর্বাবস্থায়। যদিও এই ক’দিনে শিকেয় ওঠা স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে বলে মেনে নিচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের কর্তারাই।

কর্মবিরতি চলাকালীন সরকারি হাসপাতালগুলিতে খাতায়কলমে অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল না। তবে চিকিৎসকের অভাবে ধুঁকতে থাকা সরকারি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো অনেকটাই নির্ভর করে জুনিয়র ডাক্তারদের উপরে। তাই তাঁদের অভাবে অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই অস্ত্রোপচার প্রায় বন্ধ রাখতে হয়েছিল। একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘প্ল্যানড ওটি’ (আগে থেকে স্থির করা অস্ত্রোপচার) এবং অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতা তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে যে সব ক্ষেত্রে, সেগুলি স্থগিত রাখা হয়েছিল। শুধুমাত্র হাতে গোনা ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার চলেছিল গত মঙ্গলবার থেকে সোমবারের মধ্যে। রবিবার এমনিতেই কোনও অস্ত্রোপচার হয় না। তাই মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ছ’দিনের বকেয়া অস্ত্রোপচারগুলি করতে প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের ব্যাখ্যা, হাসপাতালগুলির প্রতিটি বিভাগের আউটডোরে দৈনিক একটি ইউনিট থাকে। প্রতিটি ইউনিটের জন্য অস্ত্রোপচার করতে সপ্তাহে একটি দিন ধার্য করা হয়। সুতরাং বকেয়া অস্ত্রোপচার করতে ইউনিটের দিন বাড়ানো সম্ভব নয়, সময় বাড়াতে হবে।

কর্মবিরতি চলাকালীন ঠিক কতগুলি অস্ত্রোপচার মুলতুবি রাখা হয়েছিল, সেই পরিসংখ্যান রয়েছে হাসপাতালগুলির সুপারদের কাছে। প্রতিদিনের রোগী ভর্তি, অস্ত্রোপচারের তারিখ এবং কত জন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে, সে সব হিসেব তোলা থাকে নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছে। তিনি দিনের সেই পরিসংখ্যান জমা দেন হাসপাতাল সুপারকে। প্রতিদিনের সেই সমস্ত বকেয়া ইমার্জেন্সি কেস এবং প্ল্যানড ওটি নিয়ে যে হাসপাতালের বাড়তি চাপ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই হাসপাতাল কর্তাদের।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সে সব নিয়েই দফায় দফায় বৈঠক চলেছে। এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলেন, “এই হাসপাতালে মোট ৫৬টি ওটি টেবিল রয়েছে। যেখানে প্ল্যানড ওটি এবং ইমার্জেন্সি মিলিয়ে দিনে ২০০ বা তারও বেশি অস্ত্রোপচার হয়। এই ক’দিন জরুরি ছাড়া কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। জমে থাকা অস্ত্রোপচার শেষ করতে তাই সময় লাগবে।” এসএসকেএম হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, “জরুরি অস্ত্রোপচার করেছি। তবে যে সব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ঝুঁকি রয়েছে বুঝেছি, সেগুলি হয়নি। কারণ, রাতবিরেতে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তখন জুনিয়র ডাক্তারেরা থাকতেন না। ফলে বড় অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকত।”

কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার পলাশ দাসের বক্তব্য, “এখানে সারা বছরই চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তাই সপ্তাহে দু’দিন অস্ত্রোপচার হয়। ওই সময়ে গলব্লাডারের প্রায় ১২টি, বেশ কয়েকটি হার্নিয়া ও টিউমারের অস্ত্রোপচার বাতিল হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নির্ধারিত দু’দিনই বেশি সময় ধরে কাজ করা হবে।”

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, “ওই সময়ে জরুরি অস্ত্রোপচার, কেমো এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের রক্ত দেওয়া হয়েছিল। শুধু প্ল্যানড ওটি হয়নি। আমাদের ২৮টি ওটি টেবিল আছে। প্ল্যানড ওটি এবং ইমার্জেন্সি মিলিয়ে দিনে ১৫০-২০০টি অস্ত্রোপচার হয়। এই ক’দিন পরিষেবা স্বাভাবিক না থাকায় যা জমেছে, তা এক সপ্তাহের মধ্যে করে নেওয়া যাবে।’’

তবে অস্ত্রোপচারের পরিষেবায় বেশি প্রভাব পড়েছিল আন্দোলনের উৎসস্থল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচারও হয়েছে খুবই কম। প্রতিদিন এখানে শ’খানেক অস্ত্রোপচার হয়। সুতরাং সেই সব জমা কাজ শেষ করতে সময় তো লাগবেই। জমে থাকা কেমোর কেসগুলো দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনে ডে-কেয়ার করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Operation Doctor's Strike Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy