Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪
Kangaroo Court

কত কোল খালি হলে বন্ধ হবে সালিশিসভা, প্রশ্ন কন্যাহারার

চাষের জমিতে জল দেওয়ার পাম্পের ভাড়া মেটানো নিয়ে সালিশিসভায় ডাক পড়েছিল প্রৌঢ়ের। অভিযোগ, সেই সময়ে শাসক দলের নেতা-সহ এলাকার ‘মাতব্বরেরা’ বসিয়েছিলেন সভা।

—প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪০
Share: Save:

দু’মাস কাটলেই দশ বছর পূর্ণ হবে সেই রাতের। সালিশিসভার নিদান অমান্য করার ফল কী হতে পারে, ভাল করে জানেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা এই বাবা। সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক সালিশিসভার কথা শুনে বছর ঊনষাটের প্রৌঢ় বলছেন, “এখনও বিচার পাইনি। সালিশিসভাও বন্ধ হয়নি। জানি না, আরও কত কোল খালি হলে বন্ধ হবে!”

চাষের জমিতে জল দেওয়ার পাম্পের ভাড়া মেটানো নিয়ে সালিশিসভায় ডাক পড়েছিল প্রৌঢ়ের। অভিযোগ, সেই সময়ে শাসক দলের নেতা-সহ এলাকার ‘মাতব্বরেরা’ বসিয়েছিলেন সভা। বিধান দেওয়া হয়, তাঁকে কষিয়ে কয়েক ঘা দেওয়ার। প্রতিবাদ করে দশম শ্রেণির পড়ুয়া তাঁর বড় মেয়ে। বছর ষোলোর মেয়ের প্রতিবাদ মানতে পারেননি ‘মাতব্বরেরা’। অভিযোগ, প্রতিবাদী মেয়েকে থুতু চাটার নিদান দেয় সভা। ছুটে পালায় মেয়ে। বাবার অভিযোগ, সভা থেকে কয়েক জন মেয়ের পিছনে ছুটে অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। পরের দিন রেললাইন থেকে মেয়ের বিবস্ত্র, ছিন্নভিন্ন দেহ মেলে। বাবার অভিযোগ, মেয়েকে গণধর্ষণ করে চলন্ত ট্রেনের সামনে ছুড়ে ফেলে খুন করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগ হয়। বাবা গণধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ করলেও পুলিশ ছাত্রীর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট দেয়। গণধর্ষণের কথা পুলিশ মানেনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা-সহ একাধিক ধারায় মামলা হয়। সব অভিযুক্তকে পুলিশ ধরেছিল। হাই কোর্টে জামিন পান সবাই। ঘটনার সময়ে এলাকার ‘নাগরিক মঞ্চ’ ছাত্রীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। মঞ্চের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে মামলার নানা দিক পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে মামলা চলছে জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের (প্রথম কোর্ট) এজলাসে।

মামলায় হাই কোর্ট থেকে নিযুক্ত বিশেষ সরকারি আইনজীবী শুভ্রাংশু চাকী বলেন, “চার্জ গঠনের শুনানি হয়েছে। এ বার চার্জ গঠন হবে।” এলাকার নেতা তথা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সিংহের দাবি, “আগেও বলা হয়েছে, এখনও বলছি—দল কখনও সালিশিসভার সঙ্গে যুক্ত ছিল না, নেইও।”

দশটা বছর শুধু বিচারের অপেক্ষা করেই কাটেনি বাবার। ছাত্রীকে গণধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগের মামলার মূল সাক্ষীর দেহ মেলে অভিযোগ হওয়ার বছরখানেক পরে। সেই খুনের মামলায় ছাত্রীর বাবা এবং মামাকে পুলিশ ধরে। তাতে জামিন পেলে, নানা ‘হুমকির’ মুখে ঘরছাড়া হয় ছাত্রীর পরিবার। সেই সময়ে শ্বশুরবাড়ির গোয়ালঘরে স্ত্রী, এক মেয়ে ও ছেলেকে নিয়েও দিনের পর দিন কাটিয়েছেন বাবা। মাস ছয়েক পরে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। ছোট মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও চাষের কাজ করেন। এ বছর তিন বিঘা জমি ভাড়ায় নিয়ে পাট চাষ করেছেন।

শনিবার ছিলেন চাষের মাঠে। বৃষ্টির জলে মাঠ ভরেছে। প্রতিবাদী ছাত্রীর বাবা বলেন, “যত দিন বিচার চলে, চলুক। লড়ব। এখন আর কেউ ভয় দেখায় না। মেয়েটার কথা মনে পড়ে। কোথাও সালিশিসভা হয়েছে শুনলে, আরও বেশি করে মনে পড়ে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kangaroo Court attack Women Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE