গৌতম আদানি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে তাজপুরে আদৌ গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। তার পর বন্দর হলেও তা কে গড়বে, দোলাচল ছিল তা নিয়েও। অবশেষে জট কাটিয়ে তাজপুরে বন্দর তৈরির জন্য আদানি শিল্প-গোষ্ঠীকে ‘ইচ্ছাপত্র’ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আদানিদের নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় ফের আশঙ্কার মেঘ তাজপুরে।
শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা নিস্তরঙ্গ। হলদিয়া বন্দর এলাকায় আদানি গোষ্ঠীর একটি সাইট অফিস রয়েছে। পাশাপাশি শঙ্করপুরে তাজপুর বন্দরের যে সাইট অফিস খোলা হয়েছে, সেখানে তিন জন নিরাপত্তারক্ষী ও এক কর্মী সর্বক্ষণ থাকেন। তাঁদেরই অন্যতম দিলীপ মাইতি বললেন, ‘‘গত দুর্গাপুজোর আগে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর ৬০-৭০ জনের প্রতিনিধিদল এসেছিল। বন্দরের জন্য প্রস্তাবিত কিছু এলাকা ঘুরে দেখেছিলেন তাঁরা। তার পর জমির সীমা নির্ধারণে পতাকা লাগিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।’’ তার পর আর কোনও নাড়াচাড়া হয়নি।
এরই মধ্যে আদানি গোষ্ঠীর আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশ জুড়ে চলা তোলপাড়ের খবর এসে পৌঁছেছে সাগর পাড়ের এই মৎস্যজীবী গ্রামে। স্থানীয় যুবক কৌশিক মহাকুড় বললেন, ‘‘এখন আদানিদের যা হাল, তাতে তাঁরা আদৌ কি এখানে বন্দর তৈরির উৎসাহ দেখাবেন?’’ স্থানীয় চন্দন বাড়ৈও বলেন, ‘‘বন্দর হলে তো কর্মসংস্থান হত। কিন্তু এখানে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ দীর্ঘমেয়াদি এবং ব্যয় সাপেক্ষ। আর্থিক বিপর্যয় কাটিয়ে আদানিরা কবে বন্দরের কাজ করবে, বোঝা যাচ্ছে না।’’ শঙ্কায় শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বও। স্থানীয় তৃণমূল পরিচালিত তালগাছাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিশ্বজিৎ জানার কথায়, ‘‘রামনগর ১ ও ২ ব্লকের এক হাজার একরের বেশি জমিতে বন্দর গড়ে উঠবে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনও কোনও কাজ শুরু হয়নি। কবেহবে, সে ব্যাপারে আমরাও সম্পূর্ণ অন্ধকারে।’’
গত ১২ অক্টোবর সরকারি বিজয়া সম্মিলনীতে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির পুত্র করণ আদানির হাতে তাজপুর বন্দর নির্মাণের সম্মতিপত্র তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রিনফিল্ড প্রযুক্তিতে এই বন্দর তৈরিতে ১৫ হাজার কোটি টাকা লাগবে। পরিকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ হবে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। আদানির আর্থিক বিপর্যয়ের খবরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ‘‘তাজপুর বন্দর নিয়ে ইতিমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। বিনিয়োগ ও চাকরির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এখন তার কী হবে?’’ একই সুরে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি অসীম মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘বার বার বন্দর আর শিল্প গড়ে তোলার নামে রামনগরের মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’’ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএমের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আশিস প্রামাণিকেরও কটাক্ষ, ‘‘গোড়া থেকেই বলে আসছি, তাজপুর বন্দর নিয়ে রাজ্য সরকার জেলাবাসীকে মিথ্যা আশা দেখাচ্ছে।’’ রাজ্য সরকার কেন বিষয়টি নিয়ে চুপ, সে প্রশ্ন তুলছে বিরোধী দলগুলো।
যদিও, রাজ্য প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা, সরকারিভাবে ইচ্ছাপত্র বা ‘ইন্টেনশন অব অ্যাকসেপটেন্স’ দেওয়ার পাশাপাশি বন্দর তৈরির জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা এখনও পেরোয়নি। ফলে, এখন কোনও পদক্ষেপ করলে আইনি জটে পড়তে পারে বন্দরের ভবিষ্যৎ। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘তাজপুরে প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছে। সেখানে আদানিরা পেয়েছে। আমরা দেখব, সময় মতো কাজ করতে না পারলে সরকারি আইনি পথে পদক্ষেপ করা হবে। ডেউচায় তো আদানিরা এখনও আসেনি। ওখানে ওদের কিছু নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy