মঞ্চে আহত বিজেপি কর্মী।
সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে আসা বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও বাসে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরেও তৃণমূল জনস্রোত রুখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছে শাসক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা থেকে কর্মী সকলেই। এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবারের সভায় বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার আর্জি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। প্রয়োজনে ঘরে ঘরে অস্ত্র থাকবে।”
বোলপুরের এসডিপিও সূর্য প্রতাপ যাদব বলেন, “এখনও পর্যন্ত বিজেপির পক্ষ থেকে কোনও থানায় অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “নির্দিষ্ট করে অভিযোগ জানাক। তার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিজেপি নেতা তথা জেলার প্রাক্তন পর্যবেক্ষক সুখ নারায়ণ সিংহের হুমকি, “পরিবর্তনের চক্র এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১৭টি পুরসভায় নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছেন। কেন? কি আশঙ্কায়? এমনি এমনি ২০১৫ সাল পার করবেন? অনুব্রত, মনিরুল, তাপস বাহিনী নিয়ে রাজ্য শাসন করছেন। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ না ফিরলে আমরা দিল্লিতে সাংসদদের ঘর থেকে বেরতে দেব না।”
বিজেপি করার অপরাধে ইলামবাজার থানার ঘুড়িষা পঞ্চায়েতের কানুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ রহিমকে খুনের অভিযোগ ওঠে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ তথা ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পর জল গড়িয়েছে দিল্লি পর্যন্ত। দলের জেলা কমিটির সিদ্ধান্তে ১৬ জুলাই বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে শহিদ শেখ রহিম মঞ্চ গড়ে সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ সভার ডাক দেয় বিজেপি। সিদ্ধান্ত মতো দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এবং আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় আসেন। সেখানেই হৃদয় ঘোষ-সহ কসবা পঞ্চায়েতের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দেন।
ভেঙে গিয়েছে বাসের কাচ।
বিজেপিতে বহু বিক্ষুব্ধ তৃণমূল যোগ দিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এমন আশঙ্কা তৃণমূল করেছিল বলে মনে করেছেন কেউ কেউ। বাসে ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা তার প্রমাণ। বিজেপির জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহের অভিযোগ, “আমাদের সন্ত্রাস বিরোধী প্রতিবাদ সভায় হাজার হাজার কর্মী সমর্থক আসছে দেখে তৃণমূল আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। এলাকায় এলাকায় হুমিকি দিয়েছিল। সেই হুমকি উপেক্ষা করে প্রচুর মানুষ আমাদের সভায় যোগ দিয়েছেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ ইলামবাজার ব্লকের মঙ্গলডিহি গ্রামে এ দিন সকালে আমাদের কর্মী সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করে তৃণমূল। বাস থেকে নামিয়ে তাঁদেরকে মারধর করা হয়। হারাধন বাগদি, সোমনাথ রায়চৌধুরি, অজিত কারা-সহ আরও অনেকে আহত হয়েছেন।” বোলপুরের কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের একাধিক এলাকায়, সর্পলেহনা-আলবাঁধা অঞ্চলের কেউদোহায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে এবং বাস থামিয়ে উত্তর নারায়ণপুরে গাড়িতে হামলার অভিযোগ করেছেন বিজেপির অন্যতম-সহ সভাপতি দিলিপ ঘোষ।
মঞ্চে বিজেপি নেতারা যখন এই ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন তখন মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে হাজির হন বিপ্রটিকুরির মহুটার বাসিন্দা বিপদতারণ বাগদি। তিনি জেলা নেতাদের সবিস্তারে তাঁর ওপর তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা জানিয়ে বলেন, “ওই এলাকা এবং আশপাশের এলাকা থেকে আসা সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করেছে তৃণমূল।” বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ পাল দাবি করেন, “বালিঘাট, কয়লা থেকে শুরু করে সব জায়গায় তোলাবাজি হচ্ছে। লুটেপুটে খাচ্ছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে তাঁদের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। খুনের চেষ্টা করছে শাসকদলের নেতা এবং তাঁদের লোকজন। বাতিকার, মঙ্গলডিহি, কোপাই-সহ একাধিক এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম রেখেছে শাসকদল। পুলিশ প্রশাসনের কাছে আর্জি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। না হলে আমরা জেলা পুলিশ সুপার দফতরের সামনে অনসনে বসব।”
এ দিকে, সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটি সম্পাদক উৎপল রুদ্র বলেই ফেললেন, “নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে শাসকদলের নেতারা এখন আতঙ্কগ্রস্ত। তাই যে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ এবং তাঁদের কর্মী সমর্থকদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটছে।”
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy