স্কুলে স্কুলে শুরু হয়ে গিয়েছে পরীক্ষা। অথচ শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার তিন মাস পরেও পড়ুয়াদের হাতে বই-ই আসেনি।
পুরুলিয়ার হিন্দি মাধ্যমের স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও বিষয়েরই বই পাঠাতে পারেনি সর্বশিক্ষা মিশন। ফলে স্কুলে পঠনপাঠন থেকে পরীক্ষা নেওয়া সব ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়েছে হিন্দি মাধ্যমের ১২টি স্কুলের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা।
একই চিত্র জেলার উর্দু স্কুলগুলিতেও। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বই পায়নি ছ’টি সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা। সর্বশিক্ষা মিশনের পুরুলিয়ার প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক জানিয়েছেন, হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমের বই চেয়ে একাধিক বার আবেদন জানানো হলেও রাজ্য থেকে এখনও বই জেলায় পাঠানো হয়নি। তার জন্যই ওই স্কুলগুলিতে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পাঠ্যক্রমের পাঠ্যপুস্তক স্কুলগুলিতে সরবরাহ করে সর্বশিক্ষা মিশন। বস্তুত বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলির ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ের বই পর্যাপ্ত সংখ্যায় না আসার অভিযোগ ছিলই। কিন্তু সেই সমস্যাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমের স্কুলগুলিতে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার তিন মাস পরেও স্কুলে কোনও বিষয়েরই বই আসেনি। এ দিকে এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা নেওয়ার সরকারি নির্দেশ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষার বদলে মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছে স্কুলগুলি।
অভিভাবকদের ক্ষোভ, পড়াশোনার নামে প্রহসন হচ্ছে। একই অভিযোগ তুলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবিতে মঙ্গলবার জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিকে) দফতরে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে বামপন্থী শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বিভূতি পরামানিক বলেন, “শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার চার মাস পরেও হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমের স্কুলগুলিতে বই দিতে পারেনি শিক্ষা দফতর। কবে দিতে পারবে তাও নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারছে না সর্বশিক্ষা মিশন বা জেলা শিক্ষা দফতর। এতো শিক্ষার নামে প্রহসন ছাড়া আর কী?”
পুরুলিয়ার পাড়া, নিতুড়িয়া, বলরামপুর, ঝালদা, রঘুনাথপুর ব্লক ও পুরুলিয়া শহর মিলিয়ে মোট ১২টি হিন্দি মাধ্যমের স্কুল রয়েছে। স্কুলগুলিতে শুরু হয়েছে প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষাও। কিন্তু বই না থাকায় কার্যত দায়সারা ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার কাজ সারা হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা শুরুর দিনে নিতুড়িয়ার পারবেলিয়া কোলিয়ারি হিন্দি হাইস্কুলের অভিভাবকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেখানে অভিভাবকদের মধ্যে সুদর্শন যাদব, রণবীর সাউ, সন্তোষ নুনিয়া, রাজকুমার মুদিরা বলেন, “চার মাস হয়ে গেল, কিন্তু কোনও বিষয়ের বই-ই আসেনি। এই বই বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় না। ছেলেমেয়েরা কিছুই পড়তে পারছে না। এই অবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার কোনও মানেই হয় না।” সর্বপরি এ বছরের সিলেবাসে বেশ কিছু পরিবর্তন হওয়ায় গত বছরের বই জোগাড় করেও পড়ানো যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন শিক্ষকরা।
পারবেলিয়া হিন্দি কোলিয়ারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোজকুমার সিংহ বলেন, “টিচার কো-অপারেটিভ বোর্ড থেকে এবং ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য দেখে বোঝা গিয়েছে এ বছরের সিলেবাসে বেশ কিছু বদল ঘটেছে। সেই পাঠ্যক্রম অনুযায়ী কোনওমতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে হচ্ছে। আর এ ভাবে পড়িয়ে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলেই মৌখিক পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছি।”
পুরুলিয়া শহরের মেয়েদের হিন্দি মাধ্যমের স্কুল কস্তুরবা গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকারা আবার বাংলা মাধ্যমের বই জোগাড় করে হিন্দিতে অনুবাদ করে স্কুলে পড়াচ্ছেন। প্রধান শিক্ষিকা দোলা দে বলেন, “এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। শিক্ষিকারা বাংলা মাধ্যমের বই জোগাড় করে কিছু অংশ হিন্দিতে অনুবাদ করে পড়াচ্ছেন। কিন্তু পুরো বই অনুবাদ করা কখনোই সম্ভব নয়। দ্রুত বই না পাওয়া গেলে কী হবে বুঝতে পারছি না।” একই চিত্র শহরের অপর স্কুল রাজস্থান বিদ্যাপীঠের ক্ষেত্রেও। প্রধান শিক্ষক নিশিকান্ত ঝা বলেন, “সামান্য কিছু সংখ্যায় ইংরেজি বিষয়ের বই পেলেও বাকি বিষয়ের কোনও বই মেলেনি। বাংলা মাধ্যমের বই এনে অনুবাদ করে পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে স্কুলে পঠনপাঠন চালানো যায় না।”
সময়ে বই না মেলার কারণ জেলা থেকে স্পষ্ট ভাবে মেলেনি। তবে জেলা শিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুরুলিয়া থেকে ওই স্কুলগুলির জন্য বই চেয়ে ‘রিক্যুইজিশন’ রাজ্যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য পাঠানো হয়নি বলেই বই মিলছে না। এ ব্যাপারে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি জেলা শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তাই। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর দাবি, “বাংলা মাধ্যমের সঙ্গেই হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমের বই চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে কেন বই জেলায় পাঠাচ্ছে না, তা আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। দ্রুত বইগুলি পাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
এই অবস্থায় শিক্ষকদের প্রস্তাব, “পাশের জেলা বর্ধমানে বই দেওয়া হয়েছে। দরকারে সেখান থেকে বই এনে জেরক্স করে পুরুলিয়ার স্কুলগুলিতে দিয়ে অপাতত সমস্যা মেটানোর ব্যবস্থা করুক জেলা শিক্ষা দফতর।” তবে এই কাজ করতে গেলে প্রশাসনিক সমস্যা দেখা দেবে বলে মত সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা দফতরের। তা হলে কী ভাবে বই মিলবে? সদুত্তর মেলেনি প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিকের কাছে। তিনি বলেন, “হিন্দি ও উর্দু মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও বই রাজ্য থেকে পাঠানো হয়নি। জেলাশাসক সমস্যা মেটাতে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে রাজ্যকে জানিয়েছেন। জেলা স্কুল পরিদর্শকও লিখিত ভাবে রাজ্য শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছেন। আমরাও বার বার জানাচ্ছি, কিন্তু বই পাচ্ছি না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy