দুই জেলায় একমাত্র ‘মরুদ্যান’।
লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রকে এখন অন্তত তেমনটাই মনে করতে পারে বামেরা। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার মোট ২১টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে শুধু পাড়াতেই অন্য দলগুলির চেয়ে এ বার এগিয়ে বামফ্রন্ট। গত বিধানসভা ভোটে যে কেন্দ্রে তারা কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের কাছে হেরেছিল ৫৮৫ ভোটে, এ বার সেখানে এগিয়ে রয়েছে ৫৮২ ভোটে। ফলে, এক দিকে যেমন দুই জেলায় ভাল করেও তৃণমূলের কপালে ভাঁজ ফেলেছে পাড়া, তেমনই সামান্য হলেও মুখরক্ষা করেছে বামেদের।
রঘুনাথপুর ২ ও পাড়া ব্লক নিয়ে এই পাড়া বিধানসভা। লোকসভা ভোটের ফলে পাড়া ব্লকে সামান্য ভোটে পিছিয়ে পড়লেও রঘুনাথপুর ২ ব্লকে ভাল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় এই বিধানসভায় তৃণমূলকে টপকে গিয়েছে বামেরা। বাকি কুড়িটি কেন্দ্রে পিছিয়ে পড়ার মাঝে এখানে এই ফল কী ভাবে সম্ভব হল? কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সিপিএম এবং তৃণমূলদু’পক্ষেরই অন্দরেই উঠে আসছে একটি কারণ, অন্য জায়গায় বিজেপি বামেদের ভোট বেশি কাটলেও এখানে ঘটেছে উল্টোটা। পদ্মের কাঁটা বেশি ফুটেছে ঘাসফুলের ভোটব্যাঙ্কেই। পুরুলিয়া লোকসভার সাতটি বিধানসভার মধ্যে পাড়াতেই সর্বোচ্চ ২১৭৪৪ ভোট পেয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় লোকসভায় বামদের ভোট কমেছে প্রায় ২৪০০, আর তৃণমূলের ভোট কমেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। ফলে, তৃণমূলের ভোটেই বিজেপি ভাগ বসিয়েছে বেশি, সেই ধারণা দৃঢ় হয়েছে এই পরিসংখ্যানেও।
শুধু বিজেপি-র থাবা নয়, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও দলকে এই এলাকায় ভুগিয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূলেরই একাংশ। পঞ্চায়েত ভোটে রঘুনাথপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের দখলে যাওয়ার পিছনেও ছিল তৃণমূলের এই কোন্দল। দলের নেতার রঘুনাথপুরের ‘ক্ষত’ মেরামতির চেষ্টা করলেও ফল যে হয়নি, প্রমাণ মিলেছে লোকসভায়। এই পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় প্রায় ১২০০ ভোটে বামেদের থেকে পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল। তৃণমূলের অন্দরেই আশঙ্কা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে তাদের ভোটের বড় অংশ গিয়েছে বিজেপিতে। এখানে কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি।
২০১১ সালে পাড়া বিধানসভায় তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস জিতলেও লোকসভায় শোচনীয় হাল হয়েছে তাদের। বস্তুত, শুধু তৃণমূল বা বামেদের নয়, বিজেপি যে তাদেরও ঘর ভেঙেছে, ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন কংগ্রেস নেতারা। পঞ্চায়েত ভোটে সব আসনে প্রার্থীই দিতে না পারা বিজেপি-র সঙ্গে কংগ্রেসের ভোটের ব্যবধান সাড়ে পাঁচশো। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, পাড়ায় আগে বিজেপি-র সংগঠন ছিল। কিন্তু রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়ার সময়ে বিজেপি-র অনেক লোকজন শাসকজোটে ভিড়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে ‘মোদী হাওয়া’ টের পেয়ে ফের পুরনো দলে ফিরেছেন তাঁরা। আর বিজেপি প্রার্থীর বাড়ি পাড়া এলাকাতেই হওয়ায় এই কর্মীদের নিজেদের দিকে ফেরাতে সমর্থ হয়েছে বিজেপি, দলীয় আলোচনায় এমন মতামতই দিচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা।
তবে তৃণমূল নেতৃত্বের এখন সব চেয়ে বেশি চিন্তা, দলের কোন্দল রোখা যায় কী করে, সে নিয়ে। ভোটের আগে দলের শীর্ষ নেতারা এলাকায় সভা করে সব গোষ্ঠীকে এক সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিলেও তাতে ফল হয়নি। রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন “পাড়ায় পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে রঘুনাথপুর ২ ব্লকে আশাপ্রদ ফল না হওয়া অন্যতম কারণ। দলীয় স্তরে ফল পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যদি দেখা যায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই ফল, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দুই জেলায় একমাত্র এখানে টিমটিম করে জ্বলে থাকলেও সিপিএম এই ফলে বিশেষ উচ্ছ্বাস দেখাতে রাজি নয়। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধার বক্তব্য, “এলাকায় নেতা-কর্মীদের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতা, সাংগঠনিক দুর্বলতার মতো বিষয়গুলিকে হাজার চেষ্টা করেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে পঞ্চায়েতের তুলনায় ছ’শতাংশ ভোট কমেছে আমাদের। তাই বিষয়টিকে পরাজয় হিসেবেই দেখতে চাইছি আমরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy