অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে বরাবর ঝোঁক বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মনোজিতের। —নিজস্ব চিত্র।
‘টারজান: দ্য ওয়ান্ডার কার’ ছবির কথা মনে আছে? অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ার বাবার তৈরি পুরনো, ভাঙাচোরা গাড়িকে সাজিয়ে গুছিয়ে অত্যাধুনিক করেছিলেন রাজ। সেই গাড়ি দেখে তাজ্জব বনে যান সবাই। নিজের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে বাঁকুড়ার যুবক মনোজিৎ মণ্ডলের পুরনো ন্যানো গাড়িকে যেমন করে তুলেছেন তা দেখে বিস্মিত পথচারীরা। না, গাড়ির ডিজ়াইনে কোনও বদল আনেননি ওই ব্যবসায়ী। কিন্তু ‘ফিচার’ দিয়ে তাক লাগাচ্ছেন তিনি। কী ভাবে?
দিন দিন অগ্নিমূল্য হচ্ছে খনিজ তেল। তেমনই পেট্রোল ও ডিজেল সহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানীর খরচ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণ। কিন্তু যদি এমন গাড়ি তৈরী করা যায় যার জন্য জ্বালানী খরচ শূন্য এবং দূষণও শূন্য তা হলে মন্দ তো হয় না। এই ভাবনা থেকে পুরানো ন্যানো গাড়ি খোলনলচে বদলে বাঁকুড়ার মনোজিৎ তৈরি করে ফেলেছেন তাঁর স্বপ্নের গাড়ি। সৌরবিদ্যুৎ চালিত ওই গাড়ি এখন বাঁকুড়ার মানুষের কাছে অন্যতম আকর্ষণ।
অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে বরাবর ঝোঁক বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মনোজিতের। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজ থেকে কলা বিভাগ স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনা শেষে বাঁকুড়া শহরে ইলেকট্রিক বাইকের ব্যবসা শুরু করেন মনোজিৎ। ব্যবসার কাজের ফাঁকেই অচিরাচরিত শক্তির নতুন নতুন ব্যবহারের চিন্তা ঘুরতে থাকে মনোজিতের মাথায়। সেই ভাবনা থেকেই ১৯,৯০০ টাকা দিয়ে টাটা ন্যানো গাড়ি কিনেছিলেন। তার পর গাড়ির ইঞ্জিনের খোলনলচে বদলাতে শুরু করেন। ১৯ দিনের চেষ্টায় ওই ন্যানো গাড়ির পেট্রল ইঞ্জিন বদলে ব্যাটারি চালিত মোটর বসিয়ে ফেলেন। গাড়িতে ৭২ ভোল্টের ব্যাটারি বসিয়ে তা চার্জের জন্য গাড়ির ছাদে বসান সোলার প্যানেল। গিয়ার প্রযুক্তি রাখলেও গাড়ির ওজন হাল্কা করতে ক্লাচ সিস্টেম তুলে দেন মনোজিত। পরীক্ষামূলক ভাবে রাস্তায় গাড়িটি চলাচলে সফল হতেই তা নিজের কাজে লাগাতে শুরু করেছেন ওই যুবক। রাস্তায় বেরলোই পথচারীদের চোখ আটকাচ্ছে ওই গাড়িতে।
মনোজিতের দাবি, ওই গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগবে স্রেফ ৬ ঘণ্টা। গাড়িকে রোদে রেখে দিলেই দিব্যি চার্জ হয়ে যাবে ব্যাটারি। তা ছাড়া দিনের বেলায় গাড়ি চালানোর সময়েও লাগাতার ভাবে ব্যাটারি চার্জ হতে থাকে। তাই এক বার সম্পূর্ণ চার্জ হলে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার ছুটবে এই ‘বিশেষ’ ন্যানো। মনোজিৎ জানাচ্ছেন শুধুমাত্র সৌরশক্তির সাহায্যেই নয় বিদ্যুতের সাহায্যেও গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করা যাবে। পুরো চার্জ হতে খরচ হবে ৬ ইউনিট বিদ্যুৎ। যার বাজারমূল্য মোটামুটি ৩৬ টাকা। তাই গাড়ির চাকা ছাড়া মেনটেন্স খরচ আর নেই বললেই চলে।
মনোজিতের কথায়, ‘‘এই ধরনের ব্যাটারিচালিত গাড়ি বাজারে কিনতে গেলে কমপক্ষে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়। সেই গাড়িগুলোতে আবার সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে চার্জের সুবিধা থাকে না। বিদ্যুতের সাহায্যে ব্যাটারি চার্জ করায় কিলোমিটার প্রতি খরচ ভালই হয়। সরকারি ভাবে সাহায্য করা হলে ২ লক্ষ টাকায় আমি এমন সৌরবিদ্যুৎ চালিত গাড়ি মানুষের হাতে তুলে দিতে পারব, যার জন্য পরবর্তীকালে আর কোনও খরচ করতে হবে না। বিনা খরচে চারচাকা গাড়ি চড়ে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের মাত্রাও নেমে আসবে একেবারে শূন্যে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy