Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ধার মেটাতে মুক্তিপণ আদায়ের ছক, দাবি
Young man

সালাউদ্দিন খুনে গ্রেফতার গ্রামেরই যুবক

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছক কষে ১৪ বছরের কি‌শোর সালাউদ্দিন মণ্ডলকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তন্ময় দত্ত 
পাইকর শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১০
Share: Save:

অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ছক কষে ১৪ বছরের কি‌শোর সালাউদ্দিন মণ্ডলকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। গত ১৫ ডিসেম্বর পাইকর গ্রামে ঢোকার মুখে পাগলা নদীর ধারে ধানের জমি থেকে সালাউদ্দিনের আধপোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল। ওই ঘটনায় রাহুল শেখ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, খুনের পিছনে রাহুলের ভাইও জড়িত। তবে, সে পলাতক। তার খোঁজ চলছে।

পাইকর থানার পাটাগাছি গ্রামের বাসিন্দা সালাউদ্দিন ১৩ ডিসেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের লোক থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। আধপোড়া দেহ উদ্ধারের পরে ১৬ তারিখ রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের মর্গে ছেলের দেহ সনাক্ত করেন নিহতের মা ও বাবা। খুনের মামলা রুজু করে পাইকর থানার ওসি শেখ ইসরাইলের নেতৃত্বে তদন্তে নামে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, সালাউদ্দিন নিখোঁজের দিন থেকে মুরারই ও পাইকরের বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। তাতেই সালাউদ্দিন, রাহুল ও তার ভাইকে মোটরবাইক এবং স্কুটি নিয়ে এক সঙ্গে ঘুরতে দেখা যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরে রাহুলের মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন এবং সালাউদ্দিনের ফোনে ঘটনার দিন কে কে ফোন করেছিল, তা দেখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। সেখানেই সূত্র পেয়ে শুক্রবার রাহুলকে জেলার একটি জায়গা থেকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে এক সময় ভেঙে পড়ে রাহুল খুনের কথা কবুল করে। তাকে গ্রেফতার করা হয়।

কেন এই খুন?

রাহুলকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, পাটাগাছি গ্রামেরই বাসিন্দা, বছর তেইশের রাহুল ও তার ভাই হার্ডওয়ারের দোকান দিয়েছিল। ব্যবসায় বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ধার হয়ে যায়। পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। ধার শোধ করতে না-পারায় দুই ভাই গ্রাম ছাড়ে। কিন্তু, বাড়িতে এসে তাদের বাবার উপরে চাপ দিতে শুরু করেন পাওনাদাররা।

পুলিশের দাবি, জেরায় রাহুল তাদের জানায়, সে ও তার ভাই অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ধার শোধ দেওয়ার ছক কষে। সেই মতো এলাকার এক যুবককে তারা প্রথমে বাছে। কিন্তু, ওই যুবক রাহুলদের সঙ্গে না-মেশায় তারা বিপাকে পড়ে যায়। তখনই রাহুল জানতে পারে, সালাউদ্দিনের বাবা আব্দুল হালিম মণ্ডল একটি জমি বিক্রি করছেন। সেই থেকে তারা সালাউদ্দিনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ায়। পুলিশের দাবি, ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে রাহুল ও তার ভাইয়ের সঙ্গে সালাউদ্দিন ঘুরতে বের হয়। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে তারা ধানজমিতে যায়।

পুলিশের দাবি, জেরায় রাহুল জানিয়েছে, সে পেটের মধ্যে কুড়ুল লুকিয়ে রেখেছিল। আচমকা তা দিয়ে সালাউদ্দিনের মাথায় দুই বার আঘাত করে। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে রাহুলের ভাই ছোরা দিয়ে সালাউদ্দিনকে কোপায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে সালাউদ্দিনের উপরে চাদর ও খড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাহুল ও তার ভাই ভেবেছিল, দেহ সনাক্ত করা যাবে না। সময় বুঝে সালাউদ্দিনের বাবার কাছে তারা মুক্তিপণ চাইবে। কিন্তু দেহটির বেশির ভাগ অংশ পুড়লেও হাত ও পা অক্ষত থেকে যায়। আঙুলের কাটা অংশ, হাতে সুতো ও পরনের অর্ধদগ্ধ জামা-প্যান্ট দেখে সালাউদ্দিনকে সনাক্ত করে ফেলেন তার বাবা-মা।

আব্দুল হালিম এ দিন বলেন, ‘‘আমার ছেলে খুব সহজ সরল ছিল। সকলের সঙ্গে অনায়াসেই বন্ধুত্ব করত। তাকে এত নৃশংস ভাবে খুন করল ওরা!’’ তাঁর দাবি, ‘‘টাকা চাইলেই ওদের দিয়ে দিতাম। তার জন্য ছেলেকে মারতে হল কেন? শুধু আমার পরিবার নয় গোটা গ্রাম ওই দুই ভাইয়ের চরম সাজা চাইছে।’’ ধৃত রাজেশের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। দিনভর তাদের বাড়ি ছিল তালাবন্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

Young man Artrest Paikar Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy