পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মশালা চলছে িসউড়িতে। নিজস্ব চিত্র
মাস তিনেক আগের কথা। খাস জেলা সদরের এক ক্লাব সদস্যের অপমৃত্যুর পর থেকেই রটে যায়, মৃতের আত্মার উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। খবর ছড়িয়ে পড়তে ভয়ও ছড়াতে শুরু করে।
বছর দেড়েক আগের কথা, সদাইপুর থানার তাপাসপুরের গ্রামের বছর বাইশের এক যুবক রোগে ভুগে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। ওই যুবকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে তাঁর স্ত্রী-র উপরে নির্যাতন চালিয়েছিল এলাকাবাসীর একাংশ। তাঁদের অন্ধবিশ্বাস ছিল, তন্ত্রসাধনা, ঝাড়ফুঁক করেই স্বামীকে মেরেছেন ওই তরুণী।
‘ভূত বলে কিছু নেই, সবটাই মনের ভুল’ এবং ‘ঝাড় ফুঁক করে মানুষ মারা সম্ভব নয়’ বোঝাতে দু’টি ক্ষেত্রেই এলাকায় গিয়েছিলেন বিজ্ঞান মঞ্চের যুক্তিবাদী সদস্যেরা। এই দুই ঘটনাতেই নয়, জেলার কোনও মহিলার ডাইনি অপবাদ ঘোচাতে, ওঝা, তাবিজ কবজের বজরুকি রুখতে, গণেশের দুধ খাওয়া, ভর আসা-র মতো গুজব রুখতে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নিয়ে বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তে বারবার ছুটতে হয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যদের। লাগাতার প্রচারে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস আঁকড়ে থাকার প্রবণতা একটু হলেও যে কমেছে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু, আজও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ডাইন অপবাদ নিয়ে হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। সিউড়ির মতো শহরেও ‘অশরীরি আত্মা’র গুজব ছড়িয়েছে।
সেই কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যেই বিজ্ঞান মঞ্চের বীরভূম শাখা রবিবার সিউড়ির শরদীশ রায় সেবা সদনে একটি কর্মশালার আয়োজন করল। কুসংস্কার বিরোধী ও যুক্তিবাদী মন তৈরির ওই কর্মশালায় হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হল জেলার ১২টি বিজ্ঞান কেন্দ্রে থেকে আসা জনা পঞ্চাশেক স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীকে। উদ্দেশ্য, যাতে আরও বেশি করে যুক্তিবাদী মন তৈরি হয় এবং তাঁরা এলাকায় গিয়ে কুসংস্কার ও নানা ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করতে পারেন।
বিজ্ঞান মঞ্চের বীরভূম শাখার সম্পাদক প্রসেনজিৎ প্রামাণিক, সভাপতি মনিরুল চৌধুরীরা জানালেন, আগুন খাওয়া, কলা দিয়ে চোর ধরা কিংবা ডাইনি অপবাদ দেওয়ার চেষ্টার পিছনে যে ছল কিছু মানুষ করছেন এবং নিরীহ লোকজনকে বোকা বানাচ্ছেন, সেটা ঠিক নয়। এখনও সাপে কাটলে বা মানসিক অসুখে ভুগলে ওঝা এবং তাবিজ-কবজে ভরসা রাখেন বহু মানুষ। এর পিছনে হয় বজরুকি রয়েছে নতুবা বিজ্ঞানের কৌশল। তাঁদের কথায়, ‘‘এই সব কৌশল কী ভাবে হচ্ছে, কর্মশালায় আসা স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের হাতে কলমে শেখানো হয়েছে।’’ বিজ্ঞান কর্মী শুভাশিস গড়াই বলছেন, ‘‘এখন স্মার্ট ফোন ও ইন্টারনেটের
যুগে মিড ব্রেন অ্যাকটিভেশন (চোখ বেঁধে লেখা বা পড়া, রং বলে দেওয়া প্রভৃতি) বা মেমরি ম্যান (একসঙ্গে অনেক দেশের বা রাজধানীর নাম মনে রাখা) নিয়েও ব্যবসা করছে বা বোকা বানাচ্ছে কিছু মানুষ। সেগুলি প্রকৃতপক্ষে কী ভাবে ঘটছে, যুক্তি-সহ তা ওঁদের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’’
বিজ্ঞান মঞ্চ জানাচ্ছে, এই সময় যুক্তিবাদী দল গড়ে তোলার পিছনে আরও একটি কারণ রয়েছে। ২০১৩ সালের ২০ অগস্ট সকালে পুণেতে বাড়ির কাছেই খুন হয়েছিলেন যুক্তিবাদী ও সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। এই দিনটিকে ফি বছর বিজ্ঞান মনস্কতা দিবস হিসাবে পালন করা হয়। এ বারও তাই হবে। তার আগাম প্রস্তুতি হিসাবে কর্মশালাটি করা হয়েছে। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যেরা জানাচ্ছেন, যে-সব ‘চমৎকারী’ কাণ্ডকারখানা নানা সাধু-সন্তেরা দেখিয়ে থাকেন, সেগুলির পিছনে লুকিয়ে থাকা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ফাঁস করে ভণ্ড সাধুদের মুখোশ খুলে দিতেন দাভোলকর। তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাঁগের লক্ষ্য।
এ দিনের কর্মশালায় যোগ দিয়ে খুশি মহম্মদবাজারের কলেজ পড়ুয়া বিপত্তারণ মণ্ডল, ময়ূরেশ্বরের স্কুল পড়ুয়া অনন্যা মুখোপাধ্যায়, অরিত্রা ঘোষ বা মুরারই থেকে আসা কলেজ ছাত্র ইসমাইল শেখরা। তাঁরা বলেন, ‘‘কর্মশালা আমাদের যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করবে। এ বার আমাদের লক্ষ্য, এলাকায় গিয়ে কুসংস্কার দূর করতে কাজ করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy