Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Suri Sadar Hospital

‘কারণে অকারণে আমরাই রোগীর আত্মীয়দের প্রধান টার্গেট’

আরজি করের ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কিত চিকিৎসকমহল তথা রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীরা। রাতে কর্তব্যরত অবস্থায় জেলার তিন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কতটা নিরাপদ? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ সিউড়ি সদর হাসপাতাল।     

আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ পরে রোগী দেখছেন, শনিবার।

আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা কালো ব্যাজ পরে রোগী দেখছেন, শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

সৌরভ চক্রবর্তী
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৫৪
Share: Save:

রাতে পর্যাপ্ত আলো থাকে না, পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর দেখা মেলে না প্রায়ই। সমস্যায় পড়লে সাহায্য পেতে পেতে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। তার উপর রোগীর আত্মীয়দের ধমকানি-চমকানি তো আছেই। বহু সাহস সম্বল করে ঝুঁকি নিয়েই বছরের পর বছর ‘নাইট ডিউটি’ করে চলেছেন সিউ়ড়ি সদর হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মতো মর্মান্তিক ঘটনা যে কোনও দিন ঘটে যেতে পারে সিউড়ি সদর হাসপাতালেও, মনে করছেন তাঁরা। রাতে ওই হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। প্রশ্ন তুলছেন, কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও। যদিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রোষের মুখে পড়ার ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই।

শনিবার, সিউড়ি সদর হাসপাতালের এক কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসক জানান, “সিউড়ি হাসপাতালের নতুন দশতলা ভবন থেকে পুরনো ভবনের শিশু ও প্রসূতি ওয়ার্ডে যাওয়ার পথে আলো কার্যত থাকেই না। রাতের অন্ধকারে মোবাইলের আলোই ভরসা। রাস্তায় যে সমস্ত নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার কথা, তাঁদেরও দেখা মেলে না বেশির ভাগ সময়েই। তবে শুধু রাস্তায় নয়, ওয়ার্ডের ভিতরেও খুব একটা নিরাপদ বোধ করেন না। কারণ, রাতে ওয়ার্ডের জোরালো আলো বন্ধ করে হালকা আলো জ্বালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী এই সময় কোনও রোগীর আত্মীয়ের ভিতরে ঢোকার অনুমতি থাকে না। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীদের গাফিলতির ফলে রাতভর চলে তাঁদের যাতায়াত।

ওই চিকিৎসক বলেন, “এতদিন সব সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই কাজ করছিলাম। কিন্তু আরজি করের ঘটনার পরে মনে প্রবল আতঙ্ক ঢুকে গিয়েছে। রাতের অন্ধকারে নতুন ভবন থেকে পুরনো ভবনের মাঝের অন্ধকার অংশে কোনও অঘটন ঘটলে কী হবে, তা ভেবেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! হাসপাতালে কর্তৃপক্ষকে এই সমস্ত সমস্যার কথা বারবার জানানো সত্ত্বেও কোনও কাজ হয়নি। রাতে হাসপাতালে মহিলাদের কাজের দায়িত্ব দিতে হলে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বও হাসপাতালকে নিতে হবে।”

হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের একাংশ জানান, হাসপাতালে কোথাও কোনও সমস্যা হলে নিরাপত্তাকর্মীদের সুপারভাইজ়ারকে ফোন করতে হয় তাঁদের। ফোন করার পরেও নিরাপত্তাকর্মীরা সবসময় এসে পৌঁছন না। এমনকী ওয়ার্ডে কোনও বড় ঝামেলা হলে পুলিশ চলে আসে, কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা আসেন না। প্রত্যক ওয়ার্ডে অন্তত একজন করে নিরাপত্তাকর্মী থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে কোনও ওয়ার্ডেই তাঁরা থাকেন না। এক নার্স বলেন, “মাসখানেক আগেই এখানে এক নার্সিং পড়ুয়াকে হেনস্থা করে রোগীর আত্মীয়েরা। প্রায়ই হাসপাতালে এমন সমস্যা হতেই থাকে। কারণে অকারণে আমরাই রোগীর আত্মীয়দের প্রধান ‘টার্গেট’ হয়ে যাই। এই অবস্থায় রাতে তো বটেই, দিনেরবেলাতেও আমরা প্রবল নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হলেও তাঁদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।”

এই প্রসঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সিউড়ি সদর হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নীলাঞ্জন মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলেন, “এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই চিন্তাভাবনা করতে হবে। সুপারিন্টেন্ডেন্টের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

প্রসঙ্গত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা চিকিৎসককে নৃশংস ভাবে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন সিউড়ি সদর হাসপাতালের সমস্ত চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিলেও পোশাকে কালো ব্যাজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদে শামিল হন।

সিউড়ি সদর হাসপাতালের চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা আরজি করে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা কোনও রোগীর সমস্যা চাই না, তাই কর্মবিরতির পথে না হেঁটে কালো ব্যাজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদে শামিল হয়েছি।” (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

rg kar hospital Suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE