দাবি: প্ল্যাকার্ড হাতে পরিচারিকাদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
‘লকডাউন’-পরিস্থিতিতে চোলাই ঠেকাতে অভিযান কমেছে। এ দিকে, বেড়েছে দেশি মদের দাম। বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এই জোড়া কারণে চোলাইয়ের ‘বাড়বাড়ন্ত’ হয়েছে জেলায়। জেলা আবগারি দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, বিষয়টি নজরে এসেছে তাঁদেরও।
বাঁকুড়া আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট সৌম সেনগুপ্ত বলেন, “লকডাউন পরিস্থিতির জন্য চোলাই রোখার অভিযানে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে আমরা জোরকদমে চোলাই কারবার রুখতে তৎপর রয়েছি।” জেলা আবগারি দফতরের দাবি, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান যে একেবারেই থমকে গিয়েছে, এমনটা নয়। সপ্তাহ খানেক আগেই আবগারি দফতরের বাঁকুড়া সার্কেলের ওসি সৌগত কুণ্ডুর নেতৃত্বে বাঁকুড়া শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় চার জন ব্যক্তিকে চোলাই বিক্রির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। কয়েকশো লিটার চোলাইও উদ্ধার করা হয়। তবে ‘লকডাউন’ চলাকালীন বড় অভিযান যে বাঁকুড়ায় হয়নি, তা মানছেন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
‘লকডাউন’-এ সরকার স্বীকৃত মদের দোকানগুলি বন্ধ ছিল। লুকিয়ে চুরিয়ে মদ বিক্রি হলেও দর ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। আবগারি দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ৬০০ মিলিলিটারের দেশি মদ (যার দর ৮৫ টাকা) ‘লকডাউন’ পর্বে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এই অবস্থায় বাজার দখল করতে সক্রিয় হয় চোলাই কারবারিরা।
এখন শর্তসাপেক্ষে কিছু এলাকায় মদের দোকান খোলার ছাড়পত্র দিয়েছে প্রশাসন। মদের দামও বেড়েছে। ৮৫ টাকার দেশি মদের দাম এখন হয়েছে ১১০ টাকা। তাই গরিব মদ্যপায়ীদের অনেকেই চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করা হচ্ছে। চোলাইয়ের দরও কিছুটা বেড়েছে। আবগারি দফতর সূত্রে খবর, ২০০ মিলিলিটারের চোলাইয়ের দর ‘লকডাউন’-এর আগে ছিল ২০ টাকা। এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
চোলাইয়ের বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের উপরে নির্যাতন বাড়ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ‘সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি’। সমিতির তরফে সোমবার জেলা আবগারি দফতরে স্মারকলিপি দিয়ে চোলাই বিক্রি বন্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক লক্ষ্মী সরকারের অভিযোগ, “চোলাই ঠেকের রমরমা বেড়ে গিয়েছে গত কয়েক সপ্তাহে। বাঁকুড়ার রাজগ্রাম, লোকপুর, গোবিন্দনগর, ভাদুলের মতো এলাকাগুলিতে চোলাইয়ের ঠেক বসছে। বস্তি পরিবারের বধূরা প্রতিদিন মত্ত স্বামীর হাতে নির্যাতিত হচ্ছেন।” তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘চোলাই ঠেকগুলিতে ভিড় হচ্ছে। সেখানে মাস্ক না পরেই হাজির হচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নিরাপদ দুরত্ব মানার কোনও বালাই নেই।’’
পরিচারিকাদের সংগঠনের সদস্যা প্রমীলা দাস, নমিতা বাউরি, জয়ন্তী দাস, সাবিত্রী দাস, সুরবালা বাউরি বলেন, “চোলাইয়ের দাম জোগাড় করতে রেশনে পাওয়া চাল পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে যাচ্ছেন স্বামীরা। নিষেধ করতে গেলে মারধর করা হচ্ছে বধূদের। এলাকার অল্পবয়সি ছেলেরাও চোলাইয়ের ঠেকে যাচ্ছে।”
কেবল বাঁকুড়া শহর বা শহর লাগোয়া এলাকাতেই নয়, জেলাজুড়েই চোলাইয়ের বাড়বাড়ন্ত বেড়েছে বলে অভিযোগ। এ সব রুখতে আবগারি দফতরের পাশাপাশি, পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবিও উঠেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সিভিক ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় নজর রাখছি। চোলাই বিক্রির খবর মিললে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy