ভবানী মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র।
স্বামী ছিলেন সত্যাগ্রহী। গাইতেন ‘ইংরেজ ভারত ছাড়ো, বলো ভাই বন্দেমাতরম বলো...’’। স্বাধীনতা লাভের কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও মানবাজার থানার চেপুয়া গ্রামের শতায়ু ভবানী মাহাতো ওই গান ভোলেননি। এখনও কাকভোরে উঠোনে পায়চারী করতে করতে স্বাধীনতার গান করেন। ১৯৪২ সালে আজকের দিনেই (৩০ সেপ্টেম্বর) মানবাজার থানা অভিযান করেছিলেন সত্যাগ্রহীরা। স্মৃতির ঝাঁপি খুলে সে দিনের কথা শোনালেন ভবানীদেবী।
ভবানীদেবীর বড় ছেলে বছর ছিয়াত্তরের শ্যাম মাহাতো বলেন, ‘‘এখনও সত্যাগ্রহীদের আন্দোলনের স্মৃতির সঙ্গে মা জড়িয়ে রয়েছেন। মায়ের গলায় স্বাধীনতার গান শুনে রোজ ভোরে আমাদের ভোরে ঘুম ভাঙে।’’ তাঁর বাবা প্রয়াত স্বাধীনতা সেনানী বৈদ্যনাথ মাহাতোর সঙ্গে তৎকালীন বিহার রাজ্যের মানভূম জেলার প্রথম সারির সত্যাগ্রহীদের ওঠাবসা ছিল। সেই সূত্রে তাঁদের বাড়িতে সত্যাগ্রহীদের নিত্য আনাগোনা ছিল।
শতবর্ষ পার করা ভবানীদেবীর দৃষ্টি শক্তি অটুট। শ্রবণশক্তি কিছুটা দুর্বল হওয়ায় একটু জোরে কথা বলতে হয়। তবে স্বাধীনতা আন্দোলনের স্মৃতি এখনও সঙ্গ ত্যাগ করেনি। বাড়িতে নতুন অতিথি এলে ভবানীদেবী তাঁকে বসিয়ে স্বাধীনতার গান না শুনিয়ে ছাড়েন না।
শ্যামবাবুর দাবি, তাঁর মায়ের বয়স ১০৪ বছর। আধারকার্ডে ১০২। ভবানীদেবীর দাবি, ১১ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। ১৬ বছরে বড় মেয়ের জন্ম। বেঁচে থাকলে ওই মেয়ের বয়স এখন ৮৬ বছর হত।
তিনি জানান, ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ৩০ সেপ্টেম্বর মানবাজার থানায় শান্তিপূর্ণ অভিযান চালিয়েছিলেন সত্যাগ্রহীরা। তার আগের দিন ২৯ সেপ্টেম্বর, চেপুয়া গ্রামের বিশাল আমবাগানে গোপন সভা বসেছিল সত্যাগ্রহীদের। সেখানে তরুণী ভবানী গ্রামের বউদের সঙ্গে সত্যাগ্রহীদের জন্য খাবার পৌঁছতে গিয়েছিলেন। নিয়ে গিয়েছিলেন মোটা লাল চালের ভাত, বিরি কলাইয়ের ডাল আর পুঁইশাকের চচ্চড়ি।
ভবানীদেবী বলেন, ‘‘থানা অভিযানের আগের রাতে চেপুয়া গ্রামের কেউ দু’চোখ বোজেননি। সারা গ্রাম উত্তেজনার পারদে যেন ফুটছিল। ভোর না হতেই সবাই আমবাগান ছেড়ে মানবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরে জানতে পারি, থানা দখলের দিনে গুলি চলেছিল। দুই সত্যাগ্রহী গোবিন্দ মাহাতো ও চুনারাম মাহাতো গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। কয়েকজন গুলিবিদ্ধও হন।’’ সেই আন্দোলনে ছিলেন ভবানীদেবীর স্বামী গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বৈদ্যনাথ মাহাতোও। তাই স্বামীকে নিয়েও উদ্বেগে ছিলেন তাঁরা। তিনি অবশ্য পরে অক্ষত অবস্থায় গ্রামে ফেরেন।
ভবানীদেবী জানান, ওই ঘটনার পরে অনেক দিন গ্রাম পুরুষশূন্য ছিল। লাল টুপি পরা সেপাই ঘরের জিনিসপত্র সব লন্ডভন্ড করে দিলেও মনের কোণায় স্বামীর জন্য গর্ব অনুভব করেছিলেন।
তাঁর স্বামী বৈদ্যনাথবাবু পরবর্তী সময়েও সত্যাগ্রহ আন্দোলনে বারবার জড়িয়েছেন। ১৯৪৮-১৯৫৬ পর্যন্ত মানভূমের ভাষা আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন।
ভবানীদেবীর আর এক ছেলে জয়রাম মাহাতো বলেন, ‘‘মা খুব অল্প আহার করেন। বলেন, ‘শরীর রাখার জন্য যেটুকু খাদ্য প্রয়োজন, সেটুকুই গ্রহণ করতে হয়’। কোনও অসুখ তাঁকে ছুঁতে পারেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy