উঁকি: ইজাজের দাদার বাড়িতে ভিড়। অবিনাশপুরে। নিজস্ব চিত্র
বোলপুর লাগোয়া মুলুক গ্রামের ডালিম শেখের পরে এ বার পাড়ুইয়ের অবিনাশপুর গ্রামের মহম্মদ ইজাজ ওরফে ইজাজ আহমেদ। বীরভূমের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’-এর (জেএমবি) যোগ ফের সামনে এল।
রবিবার কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে ধরা পড়ে ভারতে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম শীর্ষ নেতা ইজাজ। পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার বিকেলে তাকে বিহারের গয়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের এসটিএফের দাবি, বেঙ্গালুরু থেকে খাগড়াগড়-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত কওসর গ্রেফতার হওয়ার পরে এ দেশে ওই জঙ্গি সংগঠনের প্রধান হিসেবে কাজ করছিল ইজাজ। বুদ্ধগয়ায় ২০১৮ সালে দলাই লামার সফরের সময়ে বিস্ফোরণের পরিকল্পনায় অন্যতম প্রধান চক্রী ছিল সে-ই।
এলাকার ছেলে এত বড় জঙ্গি— সোমবার সকালে সেই খবর চাওড় হতেই ইজাজের অবিনাশপুরের মুসলিমপাড়ার বাড়িতে জমে কৌতুহলী ভিড়। আসে সংবাদমাধ্যমও। তবে এ নিয়ে ইজাজের পরিবারের কেউ কিছু বলতে চাননি। ‘ভাইয়ের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না বছর চারেক। সে কী করত, কোথায় থাকত তা জানি না’— বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ইজাজের দাদারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইজাজেরা চার ভাই। সোমবার বিকেলে ওই গ্রামে পৌঁছতে যে বাড়িটিকে গ্রামের মানুষ ‘ইজাজদের বাড়ি’ বলে দেখিয়ে দিলেন, সেটি আদতে ইজাজের বড় দাদা শেখ এহিয়ার বাড়ি। পাকা গাঁথনি, অ্যাসবেস্টসের চাল, গ্রিল দেওয়া বাড়ির সামনে তখন ভীড়। সেখানে ছিলেন ইজাজের ছোট দাদা মহম্মদ ইয়ামিন। জানা গেল, ভাইয়েরা সকলে একসঙ্গে থাকেন না। পাড়ার মধ্যেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে পরিবারগুলি। মেজ দাদা আব্দুল খালেক নানুরে একটি মসজিদের মৌলবি। তাঁর পরিবার ওই গ্রামেই থাকে। মা রশিমা বিবি বড় ছেলের কাছে থাকেন। তবে তিনি অসুস্থ জানিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে দেননি পরিবারের কেউ।
পেশায় রাজমিস্ত্রি এহিয়া ও ইয়ামিন জানালেন— চার ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ইজাজ। বাবা অনেক আগে মারা গিয়েছেন। মা রশিমা বিবি অসুস্থ। ভাই ছোট থেকে নদিয়ার কুলসোনা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত। বছর এগারো আগে গ্রামে এসেছিল। কিন্তু বেশি দিন থাকেনি। মুর্শিদাবাদে চলে যায়। নদিয়ায় থাকাকালীন রহিমা শবনম নামে একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ইজাজের। তাঁকে বিয়ে করে বছর চারেক আগে ফের এক বার অবিনাশপুরের গ্রামে এসেছিল। সঙ্গে বৌ ও দুই সন্তান। সেটাই শেষ বার। সে বার চলে যাওয়ার পরে আর তাঁদের সঙ্গে ইজাজের যোগাযোগ নেই।
তবে ধৃতের দাদাদের কথায় অসঙ্গতি ছিল। ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকার কথা বললেও, তাকে গ্রেফতারের খবর কী ভাবে পেলেন, সেই প্রশ্নে ইয়ামিন বলেন, ‘‘ওর শ্যালক শেখ সেলিম ফোন করে জানিয়েছে।’’ ইজাজ কেমন বা জঙ্গি তকমা পাওয়ায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী, তা নিয়ে গ্রামের বাসিন্দারা কেউ মুখ খুলতে চাননি। তাঁদের কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলেছেন, ‘‘পরিবারের লোকেরা যা বলার সেটা তো বললেন, আবার আমাদের কেন জিজ্ঞাসা করছেন?’’ জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, খাগড়াগড়ের পরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আধিকারিকেরা একাধিক বার অবিনাশপুর এসেছেন ইজাজের খোঁজে। কখনও পুলিশের সাহায্য নিয়ে, কখনও নিজেরাই গ্রামে ঘুরে গিয়েছেন। এসটিএফ সূত্রে খবর, বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণের পরে যখন জামাতুল মুজাহিদিন হিন্দের ধুলিয়ান মডিউলের একের পর এক সদস্য ধরা পড়ছে, তখনই গা ঢাকা দেয় ইজাজ। বাঙালি শ্রমিকদের ভিড়ে মিশে কয়েক মাস বেঙ্গালুরু এবং কেরলে কাটায়। সম্প্রতি সে ফিরে আসে এবং গয়ায় ডেরা বাঁধে। তদন্তকারীদের দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা এবং অসমে জেএমবি-র সদস্য নিয়োগের মূল দায়িত্বে ছিল ইজাজ।
২০১৫ সালে বোলপুর লাগোয়া মুলুক গ্রামের শান্তিপল্লির শেখ ডালিমকে গ্রেফতার করার পরে এনআইএ তাকে জেএমবি-র এক জন পুরোদস্তুর সদস্য বলে দাবি করেছিল। জানানো হয়েছিল, বিভিন্ন জেলা থেকে অর্থ সংগ্রহ এবং এ দেশের কয়েক জন তরুণ-তরুণীর ‘মগজধোলাই’ করে তাদের সংগঠনের সদস্য হতে উদ্বুদ্ধ করার দায়িত্ব ছিল ডালিমের উপরে। এটিএফের দাবি মানলে, ইজাজ আরও একধাপ এগিয়ে।
সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy