পঞ্চমুখী মোড় হয়ে ঝালদা হাইস্কুলের পথে। নিজস্ব চিত্র
পুরপ্রধানের বদলে যান, পরিষেবার মানোন্নয়ন হয় কই— পুরভোটের মুখে এ প্রশ্নই ছুড়ছেন ঝালদার আমজনতা। তাঁদের দাবি, ঝালদা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুরসভার ক্ষমতায় এলেও শহরের উন্নয়ন কার্যত খোঁড়াচ্ছে। না হলে এত দিনেও পুরকর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলার জায়গা খুঁজে পেলেন না কেন?
তৃণমূল পরিচালিত ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকারের দাবি, ‘‘সাফাইয়ের কাজ আগের থেকে ঢের ভাল হয়েছে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির একটি জমিও পাওয়া গিয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (ঝালদা) সুশান্ত ভক্ত বলেন, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জমির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। সাফাইয়ের বিষয়ে পুরসভাকে নজর দিতে বলা হয়েছে।’’
১৮৮৮ সালে তৈরি এই পুরসভায় গত কয়েক দশকে বসতি ও জনসংখ্যা পাল্লা দিয়ে অনেকখানি বেড়েছে। যোগ হয়েছে মহকুমা সদরের তকমাও। কিন্তু রাজ্য সরকার উদ্যোগী হলেও শুধু মাত্র জমি না থাকায় এখনও ঝালদা পুরসভা বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করে উঠতে পারেনি। পুরসভার সাফাই কর্মীরা এখন ময়লা ফেলার জন্য ফাঁকা খাস জমি খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
ঝালদা পুরসভা সূত্রেই জানা যাচ্ছে, বর্তমানে শহরের নোংরা ফেলা হচ্ছে কখনও বীরসা মোড়ের অদূরে, কখনও মায়াসরোবর যাওয়ার রাস্তার পাশে কিংবা পুরনো বাঘমুণ্ডি রাস্তার পাশে, পাটঝালদা যাওয়ার রাস্তার ধারে। ময়লা জমতে জমতে সেখানে যেন আবর্জনার পাহাড় তৈরি হয়েছে।
শহরের ভিতরেও অলি-গলি থেকে বড় রাস্তার পাশে পড়ে থাকছে ময়লা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, লিহিরবাঁধ যাওয়ার রাস্তা, গড়কুলি যাওয়ার রাস্তা, পঞ্চমুখীমোড়, টেম্পোগলি, বাগানডি বস্তি, ডোমপাড়া, পোদ্দারপাড়া, কুইরিপাড়া, ঘাসিকুলি, স্টেশন যাওয়ার রাস্তা, রাইন টকিজ় লাগোয়া এলাকায় দিনের পর দিন নোংরা পড়ে থাকলেও, পুরসভার সাফাই কর্মীদের দেখা পাওয়া যায় না। তাঁদের মতে, রোজ ময়লা তোলা হলে এমন পরিস্থিতি হত না। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অজয় বাউরি, অশোক নাগরার ক্ষোভ, ‘‘কখনওসখনও সাফাই হলে এমনই হবে। আমরা যন্ত্রণা ভোগ করলেও পুরসভার হেলদোল আছে বলে মনে হয় না।’’
১১ নম্বর ওয়ার্ডের অজয় রায়ের অভিযোগ, ‘‘অনেক সময় দরজার সামনে নোংরা জমে থাকায় দুর্গন্ধে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। আত্মীয়-স্বজন বাড়িতে এলে লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়।’’ ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক অমরশঙ্কর মহাদানির মতে, পুরসভার নজরদারির অভাবেই এই হাল। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রঞ্জন দাসের দাবি, অধিকাংশ জায়গায় ‘ডাস্টবিন’ নেই। যে ক’টি রয়েছে, সেগুলিও ভাঙাচোরা। ফলে, আবর্জনা রাস্তার পাশে জমতে জমতে নালায় পড়ে বুজিয়ে দিচ্ছে। পুরপ্রশাসনের আশ্বাস, নতুন করে ডাস্টবিন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, বছরভর কাজে ‘ফাঁকি দিয়ে’ এখন ভোট আসন্ন বুঝে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা আশ্বাসের বেলুন ফোলাতে চাইছে। ঝালদা শহর কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব কয়ালের কথায়, ‘‘আবর্জনা সাফাই নিয়ে বর্তমান পুরবোর্ড আদৌ চিন্তিত কি? এর জবাব নির্বাচনে পাবেন।’’ ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান তপন কান্দু বলেন, ‘‘মানুষ এখন আবর্জনা-মুক্ত শহর চান। এ বার এর স্থায়ী সমাধান হওয়ার দরকার।’’
ঘটনাচক্রে, তৃণমূলেরই কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান সুরেশ আগরওয়ালের দাবি, ‘‘আমি যখন পুরপ্রধান ছিলাম, তখন আমার বিশেষ নজর থাকত সাফাইয়ের উপরে। এখন নজরদারিও নেই।’’ তাঁর বাড়ি লাগোয়া এলাকায় জমে থাকা আবর্জনা দেখিয়ে সুরেশবাবু বলেন, ‘‘মানুষ সব কিছু দেখছেন। ঠিক সময়ে তাঁরা জবাব দেবেন।’’ যদিও সে সব উড়িয়ে পুরপ্রধান দাবি করছেন, ‘‘নজরদারি রয়েছে বলেই সাফাইয়ে গতি এসেছে। অলিগলি থেকে আবর্জনা তুলতে সম্প্রতি ছোট ই-রিকশা নিয়ে এসেছি। আরও কয়েকটি আনা হচ্ছে। যে করেই হোক ঝালদাকে আমরা
জঞ্জালমুক্ত করবই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy