রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে। ছবি: সুজিত মাহাতো
বসতি বাড়লেও আবর্জনা ফেলার সুষ্ঠু ব্যবস্থা আজও গড়ে তুলতে পারল না পুরুলিয়া পুরসভা। যার ফলে বাসস্ট্যান্ড, কাপড়গলি চত্বর, বিটি সরকার রোড, সাউথ লেক রোড, দশেরবাঁধ, এলএম ঘোষ স্ট্রিট-সহ শহরের আনাচে-কানাচে বেশির ভাগ সময়েই জমে থাকছে ময়লার স্তূপ। পুরসভার দাবি, শহরে দৈনিক ৩০ ট্রাক্টর আবর্জনা জমে। কিন্তু ফেলার জায়গা নিয়ে জটিলতায় শহর সাফসুতরো করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুরপ্রধান তৃণমূলের সামিমদাদ খানের স্বীকারোক্তি, ‘‘প্রতিদিন আবর্জনা জমছে। কিন্তু ফেলব কোথায়? আবর্জনা ফেলার জন্য পুরসভার নিজস্ব জমি নেই। তবুও শহরের প্রধান রাস্তাগুলি যতটা সম্ভব সাফসুতরো রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
পুরসভার শাসকদলের কাউন্সিলরদের একাংশ স্বীকার করছেন, পুরুলিয়া শহর খুব প্রাচীন। কিন্তু কালে কালে যে সেখানে বসতি বাড়বে এবং সে জন্য আবর্জনা ফেলার পুরসভার নিজস্ব জমির প্রয়োজন, তা ভাবা হয়নি। তাই শহরের বাইরে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে এতদিন চললেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। পুরসভার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর বিভাস দাস জানান, বেশ কয়েকবছর আগে পর্যন্ত শহরের বাইরে রাস্তার ধারে আবর্জনা ফেলা হত। কিন্তু এখন সেই এলাকায় ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়েরা এখন সেখানে আবর্জনা ফেলতে আপত্তি করছেন।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিভাস ভৌমিক, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের পারুল গুপ্ত বলেন, ‘‘ইদানীং সাফাইয়ে তৎপরতা দেখা গেলেও বছরভর এলাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজ অনিয়মিত। সকাল বেলার বাড়ির বাইরে বেরিয়েই আবর্জনা জমে থাকতে দেখলে, কার ভাল লাগে?’’
পুরসভা সূত্রে খবর, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কয়েক বছর আগে শহরের বাইরে ছড়রায় পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপের কাছে পুরসভাকে এক একর জমি দেওয়া হয়। সেখানে আবর্জনা ফেলা শুরু করে পুরসভা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের বরাদ্দ করা এক কোটি ১১ লক্ষ টাকায় মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের তত্ত্বাবধানে জমির চার পাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরার কাজ হয়। কিন্তু সেখানেও বাধা। রাজ্য সরকার ছড়রার এয়ারষ্ট্রিপটিকে চালু করার জন্য কথাবার্তা শুরু করে। পুরসভা জানাচ্ছে, তারপরেই ওই জমিতে আবর্জনা ফেলতে নিষেধ করা হয়। ফের পুরসভার আবর্জনা ফেলার জন্য জমির সন্ধান শুরু করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এখনও পুরসভার হাতে আর কোনও জমি আসেনি।
পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শহর থেকে অনেকটা দূরে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া রাস্তার পাশে একটি জমি মাসিক ৫০ হাজার টাকা ভাড়ায় নিয়ে আপাতত সেখানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া, ছড়রার ওই জমিতেও মাঝেমধ্যে আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। স্থায়ী ভাবে জমি না পেলে সমাধান সম্ভব নয়।’’ পুরুলিয়া শহরের সাফাই-সমস্যা নিয়ে আগে জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাই ৩০ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রীর পুরুলিয়া শহরে পদযাত্রার আগে তড়িঘড়ি রাস্তার পাশ থেকে আবর্জনা সাফাইয়ে নেমেছিল পুরসভা। কিছু কাউন্সিলরই স্বীকার করছেন, তিন দিনের নোটিসে সমস্ত আবর্জনা সাফাই করা সম্ভব ছিল না। যাত্রাপথের পাশে জঞ্জালের স্তূপ যেখানে অনেক বেশি, সেখানে কাপড় দিয়ে আড়াল করে দেওয়া হয়।
কিন্তু ভোটে কি আর জঞ্জাল নিয়ে পুরবাসীর ক্ষোভ আড়াল করতে পারবে শাসকদল, প্রশ্ন বিরোধীদের। পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘সেই ২০১৫ সাল থেকে শুনে আসছি, এ বার জঞ্জাল সমস্যার সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু আর কবে?’’ বিজেপির পুরুলিয়া শহর মণ্ডল (দক্ষিণ) সভাপতি সত্যজিৎ অধিকারীর অভিযোগ, ‘‘সাফাইয়ের কাজে তৃণমূল পরিচালিত এই পুরসভা যে ব্যর্থ, শহরের প্রতিটি বাসিন্দাই তা বলছেন।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘প্রতিদিন আবর্জনা বাড়ছে। সবাই মিলে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পথ খোঁজা হচ্ছে।’’
জেলাশাসক রাহুল মজুমদার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘পুরুলিয়া-বাঁকুড়া রাস্তার পাশে একটি জমি কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। একটি বেসরকারি সংস্থা শহরের আবর্জনা সাফাইয়ের পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করবে। সেই সংস্থার কাছ থেকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট পেলে সেই অনুযায়ী জমি কেনা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy