Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
TMC

স্বীকৃতির মঞ্চে প্রকাশ্যেই দ্বন্দ্ব

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দলের পুরনো কর্মীদের সম্মান দেওয়ার জন্য বলে আসছেন। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে পুরনো কর্মীদের সক্রিয় করা জরুরি বলে অনুভব করছেন অনেক তৃণমূল নেতাও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর ও বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২০ ০০:৪৯
Share: Save:

নতুনদের উপস্থিতিতে দলের পুরনোদের সম্মান দিতেই আয়োজন করা হয়েছিল ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’। কিন্তু রবিবার দুই জেলায় তৃণমূল কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার এই সম্মেলনে সেই দ্বন্দ্বের ছবিই প্রকট হয়ে উঠল। যা নিয়ে কটাক্ষ শুরু করেছেন বিরোধীরা।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দলের পুরনো কর্মীদের সম্মান দেওয়ার জন্য বলে আসছেন। লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে পুরনো কর্মীদের সক্রিয় করা জরুরি বলে অনুভব করছেন অনেক তৃণমূল নেতাও। ভোট-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের দলের পরামর্শে পুরনো কর্মীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের কাজে ফেরাতে আয়োজন করা হয় বিধানসভা কেন্দ্রিক ‘স্বীকৃতি সম্মেলন’। অনেক জায়গায় নির্বিবাদে তা হলেও তাল কাটে বিষ্ণুপুর ও বান্দোয়ানে।

বিষ্ণুপুরের যদুভট্ট মঞ্চে বিধানসভা এলাকার পুরনো তৃণমূল কর্মীদের ডাকা হয়েছিল। সেখানে প্রবীণ তৃণমূল নেতা-কর্মীরা অনেকে এতদিন ধরে দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তাঁদের ‘অপমান’ করার ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের মধ্যে আদিত্য বাগদি অভিযোগ করেন, ‘‘সিপিএম জমি কেড়েছে, অত্যাচার করেছে তবু তৃণমূল ছাড়িনি। কিন্তু ২০১৩ সালে দলের কিছু নেতা-কর্মীর আচরণে ব্যথা পেয়ে বসে গিয়েছিলাম। সাত বছর পরে ফের দলের স্বীকৃতি পেয়ে মাইক ধরলাম।”

দলের বিষ্ণুপুরের কো-অর্ডিনেটর সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা এত দিন তৃণমূলকে ভালবেসেও অপমানিত হয়ে বাড়িতে বসেছিলেন, তাঁরাই আজ দলের সম্পদ হয়ে ফিরে এলেন। তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে আমরা সসম্মানে পুরনো দিনের সঙ্গীদের সঙ্গে পেয়েছি। আসন্ন পুরনির্বাচনে সকলে এক হয়ে কাজ করতে পারব বলেই আশা রাখি।” মঞ্চে ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মথুর কাউড়ি থেকে জেলা তৃণমূলের সম্পাদক অভিজিৎ সিংহ, উজ্জ্বল নন্দী প্রমুখ নেতারা।

কিন্তু বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়, উপপুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায় ও অধিকাংশ কাউন্সিলরকে দেখা যায়নি। তা নিয়ে কর্মীদের মধ্যেই কথা শুরু হয়। তবে কি তাঁরা দলেরই এই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেলেন? যদিও শ্যামবাবুর বক্তব্য, তাঁকে সে ভাবে ডাকা হয়নি। তাঁর দাবি, ‘‘সম্মেলনের ব্যাপারে আমাকে আগে কেউ জানাননি। রবিবার সকালে জানতে পারি। কিন্তু এ দিন অন্য কর্মসূচি থাকায় সম্মেলনে যেতে পারিনি।’’ বুদ্ধবাবুর দাবি, ‘‘পুরনো বসে যাওয়া কর্মীদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান ছিল হয়তো। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’’

যদিও তা মানতে নারাজ সুশান্তবাবু। তিনি দাবি করেন, ‘‘শনিবার আমি শ্যামবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে এ দিনের সম্মেলনে আসার জন্য নিমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছি। বাকি কাউন্সিলরদের ফোনে জানিয়েছি। শুধু পুরনো কর্মীদেরই চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তারপরেও কেন তাঁরা এলেন না জানি না। তবে থাকলে দলেরই ভাল হত।’’

বান্দোয়ান বিধানসভার ওই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল বান্দোয়ানে মহাবিদ্যালয়ে। ওই বিধানসভার মধ্যে রয়েছে বান্দোয়ান, বরাবাজার ও মানবাজার ২ ব্লক। তিন ব্লকের পুরনো তৃণমূল কর্মীরা এ দিন এসেছিলেন। দুই ব্লকের তৃণমূল নেতারাও ছিলেন। ব্যতিক্রম মানবাজার ব্লক ২ তৃণমূল নেতৃত্ব। আসেননি মানবাজার ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, বৈঠক ডেকে ব্লক এলাকার সাত অঞ্চল সভাপতি-সহ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বকেও ওই সম্মেলনে যেতে বারণ করেন তিনি। ব্লক এলাকার পুরোনো তৃণমূল কর্মীদের দাবি, হংসেশ্বরবাবুরা পুরনো কর্মীদের সঙ্গে মুখোমুখি হতেই চান না।

যদিও হংসেশ্বরবাবুর দাবি, ‘‘শুধু মাত্র সম্মেলনে হাজির হওয়ার চিঠি পেয়েছি। কিন্তু কাকে কাকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেই তালিকা আমাদের দেখানো হয়নি। কাকে, কেন স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, তা জানা দরকার। তাঁদের গুণ আছে কি না, তা বিশ্লেষণ করব না? এটা নিয়ে অঞ্চল সভাপতি, ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। তা হয়নি। তাই আমরা সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’

তাঁর সংযোজন: ‘‘জানতে পেরেছি, পিকের টিম এটা করছে। কিন্তু ওই টিমের কে করছে, সেটাই বুঝতে পারছি না। তাহলে ওরাই ব্লক সভাপতি, বুথ সভাপতি হয়ে যাক। ওরাই করুক সংগঠন। সংগঠন আমরা করি, পার্টিটা আমরা করি। কীসে দলের ভাল-মন্দ হবে, ওরা ঠিক করতে পারবে?’’ বান্দোয়ানের তৃণমূল বিধায়ক রাজীবলোচন সোরেন বলেন, ‘‘উপর থেকেই তালিকা পাঠানো হয়েছে। আমি সবাইকে সম্মানের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কী কারণে তাঁরা আসেননি, খোঁজ নিচ্ছি।’’ বরাবাজারের ব্লক সভাপতি সুদর্শন মাহাতো না এলে ওই ব্লকের নেতারা এসেছিলেন। তাঁদের দাবি, সুদর্শনবাবু ব্যক্তিগত কাজে বাইরে থাকায় আসতে পারেননি। বিরোধীদের কটাক্ষ, তৃণমূলে দ্বন্দ্ব অনেক গভীরে। এত সহজে কী সারবে?

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Bishnupur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy