কানকাটার নতুনপল্লি। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
দুই বা তিন দিনের বৃষ্টিতেই বানভাসি অবস্থা হয় শহরের। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে, অবস্থা মোকাবিলায় নামতে হয় দমকলকে। ত্রাণ শিবির গড়ে মানুষকে আশ্রয় দিতে হয়। তবুও হয় না নিকাশি সমস্যার সমাধান!
শহরবাসীর একাংশের অভিযোগ, পুরভোট এলেই বিভিন্ন দলের নেতারা নিকাশি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। নিকাশির জায়গা অবরুদ্ধ করে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠে একের পরে এক বাড়ি। যার জেরে পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা গড়া কঠিন হয়ে পড়ে।
নিকাশি সমস্যা সব চেয়ে তীব্র বাঁকুড়া শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। ওই এলাকার বড় অংশই অপেক্ষাকৃত নিচু। শহরের অনেক জায়গার জল এসে জমে সেখানে। নিকাশির তেমন কোনও ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, বিধাননগর, মালঞ্চ, সার্কাস ময়দান এলাকায় এখনও নিকাশি নালা নেই। নতুনচটি, খ্রিস্টানডাঙা, সার্কাস ময়দান এলাকার জল গিয়ে জমা হয় শুভঙ্কর সরণির একটি ফাঁকা জমিতে। বৃষ্টি বেশি হলেই সেই জল উপচে প্রতাপবাগান উদিচি এলাকাকে প্লাবিত করে। রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। জল ঢুকে পড়ে ঘরবাড়িতে। এই ওয়ার্ডের একাংশে জমা জল আবার জুনবেদিয়া বাইপাসের রাস্তাকে প্লাবিত করে। বাইপাসেও হাইড্রেন নেই। ফলে, সংলগ্ন নীচু এলাকার ঘরবাড়িতেও জল ঢুকে পড়ে।
এলাকাবাসীর একাংশ জানাচ্ছেন, কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হলেই ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দমকল বাহিনীকে নামাতে হয়। তখন এলাকায় এলে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন জন প্রতিনিধিরা। ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অলকা সেন মজুমদার বলেন, “১১ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি সমস্যার সমাধান করতে মাস্টার প্ল্যান বানাতে হবে। প্রশাসন ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে অনেকটা কাজ এগিয়েছি। ফের নির্বাচনে জিতে এলে, সেই কাজ শেষ করাই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।”
শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও বর্ষায় জল জমে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বৃষ্টি বেশি হলে কমরার মাঠ সংলগ্ন এলাকার হাইড্রেনের জল উপচে পড়ে। সেই জল রাস্তা ও এলাকার কিছু ঘরবাড়িতেও ঢোকে। হাইড্রেনটি নোংরা আবর্জনায় মজে যাওয়াতেই এই সমস্যা হয় বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। একই ভাবে নালা উপচে জল জমে শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লালবাজারের বিভিন্ন অংশে। শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ভাটিগড়া-ময়রাবাঁধ রাস্তায় একটি কালভার্ট রয়েছে। বিভিন্ন এলাকার জল এসে সেখানে জমা হয়। সেই জলে প্লাবিত হয় এলাকার রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িতেও জল ঢুকে পড়ে। ওয়ার্ডের মল্লেশ্বর এলাকায় নীচু জায়গায় অল্প বৃষ্টিতেও জল জমে যায়।
শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপল্লি এলাকায় সম্প্রতি একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাসখানেক আগে কংক্রিটের রাস্তা করেছে পুরসভা। তবে রাস্তার ঢাল ঠিক না হওয়ায় জল বেরচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা তাপসকুমার সিংহ মহাপাত্র বলেন, “সারা বছরই যেন এখানে বর্ষাকাল। রাস্তায় জল জমে থাকে। প্যান্ট-পাজামা গুটিয়ে বেরতে হয়।”
বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছর শহর জুড়ে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বহু নতুন নালা তৈরি হয়েছে। পুরনো নালার সংস্কার হয়েছে।’’ তবে এর পরেও নিকাশির সমস্যা যে থেকে গিয়েছে, তা স্বীকার করেছেন পুরপ্রধান। মহাপ্রসাদবাবুর আশ্বাস, “বাঁকুড়া শহরের নিকাশি সমস্যা মেটাতে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুর দফতর। কলকাতার একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই ওই সংস্থা বাঁকুড়ায় আসবে।”
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলার নীলাদ্রিশেখর দানার কটাক্ষ, “পরপর দু’বার বাঁকুড়া পুরসভায় ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এখন পুরভোটের মুখে মাস্টার প্ল্যানের আশ্বাস দিচ্ছেন পুরপ্রধান। মানুষ আর ওঁদের বিশ্বাস করবেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy