প্রতীকী ছবি।
লকডাউন চলাকালীন অনেক মানুষকে অন্যান্য অসংগঠিত ক্ষেত্রের মতো লকডাউনের কারণে গৃহশিক্ষকদের একাংশের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। এমত অবস্থায় কিভাবে সংসার চলবে সেই নিয়েই চিন্তিত তাঁরা। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য লকডাউনের পথ বেছে নিয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্র সরকার। ফলে বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। মূলত, আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির মানুষ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনরা সঙ্কটে পড়েছেন।
গৃহশিক্ষকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা সরকারি স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন পড়ানো বন্ধ করার জন্য লড়াই করছেন। কারণ সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা টিউশন পড়ানো শুরু করায় তাঁদের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে গৃহ শিক্ষকদের বড় অংশকে বিপাকে পড়ে। তাঁদের অভিযোগ সরকারি স্কুল শিক্ষকেরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে টিউশন পড়ান। তাঁদের পড়ানো বন্ধ করার জন্য গৃহশিক্ষকেরা নানান আন্দোলন করেছেন। এমনকি বেশ কয়েকবার কড়া পদক্ষেপও করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তারপরেও জেলার কিছু সরকারি স্কুল শিক্ষক টিউশন পড়ান বলে অভিযোগ।
করোনা সংক্রমণ গৃহশিক্ষকদের আন্দোলনকে থামিয়ে দিয়েছে। ওই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে রাজ্যজুড়ে চলছে লকডাউন। ফলে সরকারি স্কুল কিম্বা গৃহ শিক্ষক সকলেরই টিউশন পড়ানো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এমত অবস্থায় সরকারি স্কুল শিক্ষকরা আর্থিকভাবে বিপাকে না পড়লেও গৃ্হ শিক্ষকদের একাংশ বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, লকডাউনের কারণে প্রায় একমাস ধরে তাঁরা টিউশন পড়ানো তো দূরের কথা সেই অর্থে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বেতনও বন্ধ হয়ে রয়েছে। এমত অবস্থায় তাঁদের কাছে সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছে। এমনকি সদাইপুর থানা এলাকার এক গৃহশিক্ষক আর্থিক অনটনের কারণে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই টিউশন পড়িয়ে সংসার চালান। টিউশন পড়ানো ছাড়া তাঁর কাছে বিকল্প আর কোনও পথ নেই। কিন্তু লকডাউনের ফলে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমত অবস্থায় সরকারি সাহায্য না পেলে তাঁর কাছে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও রাস্তা নেই।
রামপুরহাট এলাকার বাসিন্দা প্রবীর কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি রামপুরহাটে ভাড়া বাড়িতে থাকি। লকডাউনের কারণে পড়ুয়াদের কাছে থেকে বেতন নিতে পারিনি। ফলে বাড়ি ভাড়ার টাকা দিতে পারছি না। ওষুধ কেনার টাকাও নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি এখন রেশন কার্ডও পাইনি। ফলে রেশনও পাচ্ছি না।’’ গৃহশিক্ষক চঞ্চল মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি সিউড়ির সুভাষপল্লির বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই টিউশন পড়িয়ে কোনওমতে সংসার চালাই। কিন্তু লকডাউনের জন্য সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। এখন আমরা দিশাহারা।’’
গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সদস্যদের থেকে জানা গিয়েছে, জেলায় প্রায় তিন হাজার গৃহ শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। তবে প্রায় হাজার খানেক গৃ্হশিক্ষকের অবস্থা খুব খারাপ। তাই গৃহশিক্ষক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নিজেদের মধ্যে চাঁদা তুলে আর্থিক দিক থেকে বিপাকে থাকা শিক্ষকদের সাহায্য করা হয়েছে। তাছাড়া তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেক গৃহশিক্ষকদের এই সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি করে জানান হয়েছে। এই নিয়ে গৃহ শিক্ষক কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি অলিকেন্দু চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘‘সরকার না এগিয়ে এলে গৃহশিক্ষকদের অবস্থা খারাপ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy