Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

তাঁবু, প্রতীক্ষালয়েই ঠাঁই

পুরুলিয়া জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ তাঁবুতে, কেউ যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে দিন কাটাচ্ছেন। 

বাঁধবহাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

বাঁধবহাল গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার ও আদ্রা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

‘লকডাউন’-এর মধ্যে কর্মক্ষেত্র থেকে নানা রকম বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে গ্রামে ফিরেও স্বস্তি নেই। ১৪ দিন ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকার মতো অনেকেরই ঘরে জায়গা নেই। কারও কারও আবার পড়শিদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই পুরুলিয়া জেলায় ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ তাঁবুতে, কেউ যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

মানবাজার

মানবাজার ১ ব্লকের গোপালনগর পঞ্চায়েতের জামগোড়িয়া গ্রামের দুই যুবক সুনীল মাহাতো ও সমর মাহাতো হাওড়ার সাঁতরাগাছিতে রেলের প্যান্ট্রিকারে কাজ করেন। মঙ্গলবার মানবাজারে ফিরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাঁরা গ্রামে ঢুকতেই পড়শিরা বাড়িতে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন বলে অভিযোগ। সেই থেকে গ্রামেই মাঠে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন।

দুই যুবক বলেন, ‘‘গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ আমাদের বাড়িতে থাকা নিয়ে আপত্তি জানান। বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যায়। কাছেই একটি সেচ কুয়ো রয়েছে। কোনও রকমে দিন চলে যাচ্ছে।’’ সুনীলের বাবা পেশায় চাষি জয়দেব মাহাতো বলেন, ‘‘তবু তো ছেলেগুলো চোখের সামনে রয়েছে। দেখতে দেখতে ক’টা দিন ওখানেই কেটে যাবে।’’

বিডিও (মানবাজার ১) নীলাদ্রি সরকার বলেন, ‘‘মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতাল পরীক্ষার পরে, তাঁদের ‘হোম কোয়রান্টিন’-এ থাকার নির্দেশ দেয়। শুনেছি, অসুবিধা থাকায় জামগোড়িয়া গ্রামে তাঁরা বাড়ির কাছে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন। পরিবারের লোকজন খাবার দিচ্ছেন।’’

পুঞ্চা

পুঞ্চার বাঁধবহাল গ্রামের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন ছয় যুবক। তাঁদের মধ্যে দু’জন দুর্গাপুর থেকে ফিরেছেন। চার জন এসেছেন রাঁচী থেকে। তাঁদের মধ্যে দুর্গাপুরের একটি সংস্থার অস্থায়ী কর্মী প্রসেনজিৎ মাঝি বলেন, ‘‘অন্য এলাকার কর্মীরা একে- একে বাড়ি চলে যাওয়ায় আমরা দু’জন সমস্যায় পড়ে যাই। টাকাও ফুরিয়ে আসছিল। কোনও রকমে ট্রাক ধরে ও কিছুটা হেঁটে পুঞ্চায় পৌঁছই। এসে দেখি রাঁচী থেকে আরও চার জন ওই
দিন হাজির।’’

গ্রামবাসীর তরফে গদাধর মাঝি বলেন, ‘‘ওঁরা নিজেদের বাড়িতে থাকলেও ঝুঁকি যে নেই, এ কথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। তাই গ্রাম ষোলোআনার পক্ষ থেকে ঠিক হয়েছে, ১৪ দিনের মেয়াদ পর্যন্ত তাঁরা গ্রামের বাইরে তাঁবুতে থাকুন। কোনও অসুবিধা হলে আমরা তো রয়েছি।’’ তাঁবুতে থাকা শ্রমিকেরা জানান, বাড়ি থেকে খাবার পাচ্ছেন। অসুবিধা নেই।

বিডিও (পুঞ্চা) অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যাঁরা বাইরে থেকে এসেছেন তাঁদের কেউ কেউ তাঁবুতে বা গ্রামের ফাঁকা বাড়িতে রয়েছেন বলে শুনেছি। তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত তাঁদের খোঁজ নিচ্ছেন। তাঁরা কারও সান্নিধ্যে না এলেই হল।’’

রঘুনাথপুর

লালারস পরীক্ষার ফল আসেনি। তাই হুগলি থেকে রঘুনাথপুর ১ব্লকের চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের মেট্যালসহরে ফেরা ছয় যুবকের ঠাঁই হয়েছে গ্রামের বাইরে প্রতীক্ষালয়ে।

হুগলির শ্রীরামপুরের প্লাইউডের কারখানার শ্রমিক ওই যুবকেরা জানান, কিছু পথ গাড়িতে ও কিছুটা হেঁটে তাঁরা বুধবার কাশীপুরে পৌঁছে আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের নারায়ণ বাউরি বলেন, ‘‘ওঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় ঠিক হয়, লালারস পরীক্ষার ফল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত প্রতীক্ষালয়ে তাঁদের রাখার ব্যবস্থা করা হবে।”

যুবকেরা জানান, গ্রামেরই লোকজন প্রতীক্ষালয়ে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করেছেন। বাড়ির লোকজন সেখানে জল ও খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। দুই শ্রমিকের পরিবারের সদস্যেরা বলেন, ‘‘সংক্রামিত এলাকা থেকে এসেছে ওরা। বিপদ হলে আমাদের তো বটেই, পুরো গ্রামেরই বিপদ। তাই সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসাবেই প্রতীক্ষালয়ে রাখার সিদ্ধান্তে মত দিয়েছি।”

স্থানীয় তৃণমূল নেতা হাজারি বাউরি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে লালারস পরীক্ষা করা হয়েছে ওই শ্রমিকদের। রিপোর্টে যদি দেখা যায় তাঁরা সংক্রমিত নন, তা হলে বাড়িতেই থাকবেন।”

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy