Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Labourer

আর একটু...পা চালাচ্ছেন শুকচাঁদ

বীরভূম পেরোলেই নিজেদের জেলা—এটা ভেবেই নিজেদের চাঙ্গা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।

জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। খয়রাশোলের পাইগড়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

জাতীয় সড়ক ধরে হেঁটে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। খয়রাশোলের পাইগড়ায়। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

দয়াল সেনগুপ্ত
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২০ ০৬:৪১
Share: Save:

খিদে ও ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছে শরীর। পায়ে বড় বড় ফোস্কা পড়েছে। মাথার উপরে রোদ। তবু হাঁটা থামাননি মুর্শিদাবাদের ওমরপুরের যুবক শুকচাঁদ শেখ। উপায় কী, বাড়ি পৌঁছতে হবে!

বারাণসী থেকে টানা হেঁটে ফেরার সময় শুক্রবার যখন শুকচাঁদের সঙ্গে যখন দেখা হল, তখন তিনি রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শালনদী পেরিয়ে দুবরাজপুর থানা এলাকায় পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গী বছর তেরোর ছোট ভাই রূপচাঁদ এবং আরও তিন যুবক। তিন কিলোমিটার পিছনে একই ভাবে হেঁটে আসছিলেন মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থানা এলাকার শেখ শমিম, শেখ লাল্টুর মতো আরও কয়েক জন। সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। বীরভূম পেরোলেই নিজেদের জেলা—এটা ভেবেই নিজেদের চাঙ্গা করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলেন।

রাজমিস্ত্রির কাজ করতে শুকচাঁদ, শমিমেরা বারাণসী গিয়েছিলেন। লকডাউন ঘোষণার পর থেকে সেখানেই আটকে ছিলেন। লকডাউন কিছুটা শিথিল হতে বাড়ি ফিরতে মরিয়া শুকচাঁদরা অন্য কোনও বিকল্প না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছেন। তাঁরা জানালেন, বারাণসীতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় দু’বেলা খাবারটা জুটছিল। কিন্তু, কাজ নেই, হাতের টাকা শেষ। তাই বাড়ি ফেরার জন্য আবেদনপত্র পূরণ করেছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হয়নি। শুকচাঁদের কথায়, ‘‘আর অপেক্ষা করতে পারিনি। তাই চার দিন ধরে হাঁটছি। কী ভাবে কখন বাড়ি পৌঁছতে পারব জানি না।’’

লকডাউনের শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছেন লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। রোজগার বন্ধ, খাবার জোটাতে হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ শ্রমিক। ২০ এপ্রিল লকডাউন কিছুটা শিথিল হলে বাসে চেপে ফেরার ব্যবস্থা হয়েছে কিছু কিছু কিছু রাজ্য। এ রাজ্যে রাজস্থানের কোটা থেকে বাসে ফিরেছেন পড়ুয়ারা। কেরল ও রাজস্থান থেকে বিশেষ ট্রেনে বাংলায় ফিরেছেন বেশ কিছু শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, পড়ুয়া ও রোগী।

তবে সেটা ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া মানুষের সংখ্যার নিরিখে নগণ্য। উপায় না দেখে হাঁটাপথে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বহু মানুষ। তা করতে গিয়ে পথে প্রাণও হারিয়েছেন কয়েক জন। শুক্রবার ভোরে রেললাইন ধরে মধ্যপ্রদেশ ফেরার পথে মহারাষ্ট্রের অওরঙ্গাবাদে মালগাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের। পথের ক্লান্তিতে রেল লাইনের উপর ঘমিয়ে পড়েছিলেন ওঁরা। সে খবর জানে না ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে হাঁটতে থাকা শুকচাঁদ,শমিম, লাল্টুরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে তিন বার তিনটি ট্রাক বেশ কিছুটা করে পথ নিয়ে এসেছে তাঁদের। পুলিশও সাহায্য করেছে। কিন্তু, বীরভূমের এত সংখ্যক থানা পেরিয়ে আদৌও মুর্শিদাবাদে পৌঁছতে পারবেন কিনা বা পুলিশ আটকালে কী হবে— সেই আশঙ্কাও কাজ করছে সকলের মনে। শমিম বললেন, ‘‘আর লড়াই করার শক্তি নেই। নিজের জেলায় পৌঁছে যেতে চাই। তার পরে নিভৃতবাসে বা যেখানে রাখার আমাদের রাখুক প্রশাসন!’’

বীরভূম জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই এখানে আটকে থাকা ভিন্ জেলার মানুষকে ফেরাতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যাঁরা সরকারি নিভৃতবাসে ১৪ দিন কাটিয়েছেন অথচ উপসর্গ ধরা পড়েনি, তাঁদেরকে। শুক্রবার সকালেও সিউড়ি থেকে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার ৫টি বাসে করে মালদহ, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলায় পাঠানো হল শতাধিক মানুষকে। ফেরানো শুরু হতে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড ও বিহারে আটকে থাকা শ্রমিকদেরও।

অন্য বিষয়গুলি:

Migrant Labourer West Bengal Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy