Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

পুকুরেই ঝরছে পদ্মের পাপড়ি, হতাশ চাষিরা

অন্যান্য ফুলের মতো চাহিদা কমেছে পদ্মফুলের। পদ্ম-চাষ করে চরম বিপাকে পড়ছেন ফুলচাষিরা।

সংগ্রহ: পদ্মফুল তুলছেন এক চাষি। ছবি: কল্যাণ আচার্য

সংগ্রহ: পদ্মফুল তুলছেন এক চাষি। ছবি: কল্যাণ আচার্য

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

লকডাউনে বন্ধ মন্দির। বন্ধ যান চলাচলও। তাই অন্যান্য ফুলের মতো চাহিদা কমেছে পদ্মফুলের। পদ্ম-চাষ করে চরম বিপাকে পড়ছেন ফুলচাষিরা। তাঁদের চোখের সামনে পুকুরেই ঝরে যাচ্ছে ফুলের পাপড়ি। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে পদ্মচাষিদের।

তারাপীঠ, লাভপুরের ফুল্লরামন্দির, বোলপুরের কঙ্কালীতলা মন্দির-সহ জেলার ধর্মীয় স্থানগুলিতে পদ্মফুলের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা রয়েছে বাইরেও। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে জেলার অনেক চাষি বাণিজ্যিক ভাবে পদ্মফুলের চাষ করেন। বেশির ভাগ ফুলচাষিই অন্যের কাছে থেকে পুকুর ঠিকায় নিয়ে পদ্মের চাষ করেন। পদ্মফুল বিক্রি করেই তাঁদের চুক্তির টাকা, আবাদি খরচ-সহ নিজেদের অন্নসংস্থান হয়। কিন্তু, করোনার মারে আজ তাঁরা বিপন্ন।

ওই ফুল চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণত বিঘে দুয়েক পরিমাণ জলাশয়ে পদ্মচাষ করতে বছরে মালিকদের দিতে হয় ৩-৪ হাজার টাকা। একবার চাষ করা জমিতে প্রতিবছর কন্দ রোপণ না করলেও চলে। কিন্তু প্রতি বছর বিঘা প্রতি এক ট্রাক্টর গোবর সার দিতে লাগে। খরচ পড়ে প্রায় ২ হাজার টাকা। সাধারণ চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে মাস ছয়েক পদ্মফুল ফোটে। বিঘে দুয়েকের একটি পুকুর থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার ফুল পাওয়া যায়। প্রতি ১০০টি ফুলে দাম মেলে গড়ে ৭০-৮০ টাকা।

জেলার চাষিরা মূলত তারাপীঠ, নন্দিকেশ্বরী, কঙ্কালীতলা-সহ বিভিন্ন মন্দিরে ফুল সরবরাহ করে থাকেন। মন্দিরগুলিতে সারা বছরই কমবেশি পদ্মফুলের চাহিদা থাকে। তবে প্রথম ওঠার সময় ফুলের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। সেই হিসেবে এই সময় ফুলচাষিদের বাড়তি দু'পয়সা ঘরে ঢোকে। কিন্তু, এ বার সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়েছে লকডাউন। সব মন্দির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পদ্মের চাহিদা শূন্য। প্রতিদিন পুকুরেই ঝরে যাচ্ছে ফোটা ফুল। আর কপাল চাপড়াচ্ছেন চাষিরা।

১৫ হাজার টাকায় চারটি পুকুর ঠিকা নিয়ে এ বার পদ্মফুলের চাষ করেছেন ময়ূরেশ্বরের রামকৃষ্ণপুরের গৌর বাগদি। খরচ পড়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন চার পুকুরই আলো করে ফুটছে পদ্মফুল। আর ঝরেও যাচ্ছে। একই অবস্থা নানুরের ব্রাহ্মণডিহির সনৎ দাসের। ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে তিনটি পুকুরে পদ্ম চাষ করেছেন। আবাদি খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। দু’জনেই বলছেন, ‘‘ফুলচাষ করেই আমাদের সংসার চলে। প্রথম দিকে ফুলের চাহিদা খুব বেশি থাকে। তাই মাস খানেকের মধ্যেই আমাদের পুকুরের ঠিকার টাকাটা উঠে আসে। কিন্তু এখন শুধু শুধু ফোটা ফুল ঝরে যাচ্ছে। কী করে পুকুরমালিকের টাকা মেটাব আর কী করে ভাতকাপড়ের সংস্থান হবে, ভেবে পাচ্ছি না।’’

একই আক্ষেপে রামকৃষ্ণপুরের নারায়ণ বাগদি, মহম্মদবাজারের প্রহ্লাদ বাগদিদের। তাঁরা জানান, ফুল তুলে যে হিমঘরে সংরক্ষণ করে রাখবেন, সেই সুযোগও নেই। তা ছাড়া সংরক্ষণ করেও যে বিশেষ লাভ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। ১২৫০টি ফুলভর্তি একটি ঝুড়ি সংরক্ষণ করতে হিমঘরের ভাড়া ৩০০ টাকা। ৪৫ দিনের বেশি ফুল সংরক্ষণ করা যায় না। তার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দু’দিকেই মার খেতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Lotus Farmers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy