তালড্যাংরার অনুষ্ঠানে ভিড়ের মধ্যে হাজির খুদে শিল্পীরা। ছবি: শুভেন্দু তন্তুবায়
আশঙ্কাই সত্যি হল। হুল দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রশাসনের আয়োজিত তালড্যাংরার অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় উপচে পড়ল। শিশু-কিশোর থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই সেই ভিড়ে শামিল হলেন। অনুষ্ঠান শুরুর আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় গাদাগাদি ভিড়ে অনেকেই হাঁটলেন মুখ না ঢেকেই। পঙ্ক্তিভোজেও মুছে গেল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রশাসনিক সতর্কতা। পুরো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। যদিও প্রশাসনের দাবি, কোনও রকম নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি।
বাঁকুড়া জেলার আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের উদ্যোগে তালড্যাংরা ও ছাতনাতে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তালড্যাংরার নিম্নবুনিয়াদি প্রাথমিক স্কুলের মাঠে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জেলার দশটি ব্লকের মানুষ। পুলিশের হিসেবে, মাঠে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
করোনা-পরিস্থিতিতে সব রকম সতর্কতা মেনে অনুষ্ঠান করা হবে বলে আশ্বাস দেয় প্রশাসন। জানিয়েছিল, অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকার আগে ‘থার্মাল স্ক্যানার’ দিয়ে সবার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে। প্রত্যেকে যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসেন, সে ভাবে চেয়ার পাতা হবে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে অবশ্য উল্টো ছবি দেখা গেল। মাঠে ঢোকার একটিই মাত্র দরজা। সেখানে ‘থার্মাল স্ক্যানার’ নিয়ে দু’জন কর্মী থাকলেও, ভিড়ের ঠেলায় সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপতে পারছিলেন না তাঁরা। মূল দরজায় সবাইকে ‘মাস্ক’ ও হাতে ‘স্যানিটাইজ়ার’ দেওয়া হচ্ছিল। অনেকে যেমন ‘মাস্ক’ পরেন, তেমনই অনেকে আবার মুখ না ঢেকেই সভাস্থলে ঘুরে বেড়ান। বসার জন্য চেয়ার পাতা থাকলেও অনেককেই দাঁড়িয়ে জটলা করতে দেখা যায়। স্কুলের বারান্দায় মেঝেতে এবং কিছু দূরে চেয়ার-টেবিলে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন ছিল। যাঁরা বারান্দায় বসে খাচ্ছিলেন, ভিড়ের ঠেলায় তাঁদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব মেনে চলার সুযোগই ছিল
পুরো বিষয়কে ঘিরে সংশয়ে অনেকে। ভারত জাকাত মাজি পারগানা মহলের পারানিক সনগিরি হেমব্রম বলেন, “প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল, হুল দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু তালড্যাংরায় খুব ভিড় হয়েছিল। কোনও রকম সামাজিক দূরত্ব বজায় ছিল না।” তাঁর সংযোজন: “এ বছর করোনা-সংক্রমণের আশঙ্কায় আমরা সমস্ত পরব হয় বাতিল করছি, নয়তো কেবল নিয়ম রক্ষার মতো আয়োজন করছি। তবে তালড্যাংরায় প্রশাসনের অনুষ্ঠানে যা হল, তাতে খুবই চিন্তিত।”
চিকিৎসক তথা বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারও বলেন, “আমি বুঝে উঠতে পারছি না, প্রশাসন কী ভাবে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে এমন জমায়েত করল? এখান থেকে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হলে তার দায় প্রশাসনের উপরেই বর্তাবে।”
তালড্যাংরার অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ। তাঁকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএস-এর। বিডিও (তালড্যাংরা) সৌরভ মজুমদারের দাবি, “অনুষ্ঠানে সামাজিক দূরত্ব বজায় ছিল। খাবারের জায়গাতেও মানুষ নিজেদের মধ্যে দূরত্ব মেনেই বসেছিলেন। সকলেই ‘মাস্ক’ পরে ছিলেন। কোনও রকম নিয়ম লঙ্ঘন হয়নি।”
জেলার অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের আধিকারিক কালীপদ সিংহ বলেন, “ছাতনার অনুষ্ঠানে মেরেকেটে দু’শো মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। সামাজিক দূরত্ববিধি সেখানে কঠিন ভাবে মানা হয়েছে। তালড্যাংরায় কী হয়েছে, তা খবর নেব।”
বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সহকারী সভাপতি তথা জেলা তৃণমূল সভাধিপতি শুভাশিস বটব্যাল দাবি করেন, “ছাতনা ও তালড্যাংরা দু’টি জায়গাতেই নিয়ম মেনেই হুল দিবস পালিত হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy