—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি করা পণ্য বাজারজাত করতে বড় বাজারের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পরে পণ্য বিপণনে আশার আলো দেখছেন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ”স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা যেগুলি তৈরি করে, তা বিক্রির বাজার পায় না। আমরা জেলায় বিগ মার্কেট, বিগ বাজার তৈরি করে দেব। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েরা হাতের কাজ বিক্রি করার সুযোগ পাবে।” তবে শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠী নয়, তাদের তৈরি সামগ্রীকেও ওই বড় বাজারে বিক্রির সুযোগ দেওয়া হোক, দাবি তুলছে সমবায়গুলি। বিরোধীদের তবে কটাক্ষ, ভোটকে মাথায় রেখে করা এই সব ঘোষণা আদৌ বাস্তবায়িত হবে না।
প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় কম-বেশি ৪৫ হাজারের মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। সেগুলির বড় অংশ মূলত স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার সঙ্গে যুক্ত। তবে বহু গোষ্ঠী নানা পণ্য তৈরি করে। মাশরুম চাষ থেকে শুরু করে শাড়ি-কাপড়ে নকশা তৈরি, বেত বা বাঁশের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে কিছু গোষ্ঠী। বাঘমুণ্ডির চড়িদা গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ছৌ মুখোশ তৈরি করে। কিছু গোষ্ঠী আবার মাটির বাসন, আচার, বড়ি, নানা মশলা থেকে সাবান, ফিনাইল তৈরিতে যুক্ত। তবে বেশির ভাগ গোষ্ঠীর সদস্যদের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় ভাবে ভাল বাজারের অভাবে ভুগতে হয়। স্থানীয় বাজারে চাহিদা কম থাকায় দাম বেশি মেলে না। জিনিস বিক্রি করে লাভও থাকে সামান্য।
এই পরিস্থিতিতে জেলা সদরে বড় বাজার হলে পণ্য বিপণনে বাড়তি সুবিধা মিলবে, মনে করছে গোষ্ঠীগুলি। নিতুড়িয়ার বকবাড়ি গ্রামের একটি গোষ্ঠীর সদস্য সুলেখা মুর্মু বলেন, “আমরা মাশরুম চাষ করি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে মাশরুমের চাহিদা কম। বড় শহরে তা অনেকটাই বেশি। কিন্তু সেখানে পণ্য বাজারজাত করা একা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকার নির্দিষ্ট বাজার তৈরি করে দিলে বিক্রিবাটা অবশ্যই বাড়বে।”
রঘুনাথপুর শহরের একটি গোষ্ঠীর সদস্য নন্দিনী রক্ষিতেরা শাড়ি, পাঞ্জাবিতে নকশা তৈরি করেন। তাঁরা জানান, বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়। পরিচিত লোকজনই বাড়ি এসে শাড়ি, পাঞ্জাবি কেনেন। তিনি বলেন, ”বড় বাজার হলে আমাদের মতো অনেক গোষ্ঠী, যেগুলি শুধু বাজারের অভাবে ধুঁকছে, সুবিধা পাবে।” ছৌ মুখোশ তৈরিতে যুক্ত চড়িদার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সুনীতা সূত্রধরের কথায়, ”ছৌ মুখোশের চাহিদা থাকে বছরভর। কিন্তু শুধু পর্যটনের মরসুমে মুখোশ বিক্রি হয়। জেলা শহরে বিক্রির সুযোগ মিললে বছরভর মুখোশ বিকোবে।”
এর পাশাপাশি সভায় জেলার তসর শিল্পের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তসরের কাজকে কেন ‘বিশ্ববাংলা’য় রাখা হয় না, কে প্রশ্নও তোলেন তিনি। তা নিয়ে রঘুনাথপুরের তসরশিল্পী সমবায় সমিতির ম্যানেজার সমরেশ পালের দাবি, জেলা সদরে সরকারের তৈরি করা বড় বাজারে শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠী নয়, স্থান দেওয়া হোক সমবাগুলিকেও। তিনি বলেন, ”রঘুনাথপুর, আদ্রা, আসানসোল থেকে ক্রেতারা তসর কিনতে আসেন। সেই তুলনায় পুরুলিয়া থেকে ক্রেতার সংখ্যা কম। জেলা সদরে পণ্য বিপণনের সুযোগ পেলে তসর শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেরই লাভ হবে।”
যদিও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মানোন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেও একাধিক ঘোষণা করেছেন দাবি করে বিরোধীদের কটাক্ষ, লোকসভা নির্বাচনের আগে জেলায় এসে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কার্যত ‘কল্পতরু’ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী নানা কথা বলেছেন। অতীতের মতো এগুলিও নিছক ঘোষণা হয়ে থেকে যাবে। বিজেপির রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “কৃষক বাজার, কর্মতীর্থগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। সেগুলি বাঁচানোর ব্যবস্থা আগে করুক সরকার।”
অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো বলেন, ”স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য মুখ্যমন্ত্রী বড় বাজার তৈরির ঘোষণা করেছেন। দ্রুত সেই বাজার যাতে তৈরি করা যায়, তা নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy