বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র।
ট্রাস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে সোমবার থানায় গেলেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে তাঁরা জানিয়ে দিলেন, ফলক বসানোর জন্য ট্রাস্টের থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনও নেই। ট্রাস্টের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি এও জানানো হয়েছে, ইউনেস্কো শান্তিনিকেতনকে যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা দিয়েছে, তার কৃতিত্ব আচার্য প্রধানমন্ত্রী এবং উপাচার্যের।
শনিবার শান্তিনিকেতন থানার দ্বারস্থ হয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। জানায়, ইউনেস্কোর দেওয়া ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ স্বীকৃতির সেই বিতর্কিত ফলক বসানোর সময় কোনও অনুমতি নেননি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। যে সব জায়গায় ফলক বসানো হয়েছে, তা তাদের মালিকানাধীন হওয়া সত্ত্বেও কেন অনুমতি নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। সম্পাদক অনিল কোনার অভিযোগ করেন, ওই ফলক শান্তিনিকেতনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করছে এবং উপাসনা গৃহের শান্তি বিঘ্নিত করছে। এর পরেই সোমবার বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নাম লেখা ফলকের সঙ্গে ট্রাস্টের কোনও সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের বাইরে কাজ করে। পৌষ মেলা-সহ নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফলক লাগানোর জন্য ট্রাস্টের থেকে আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই। অতীতেও কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। এ ছাড়াও ট্রাস্টের সম্পাদককে জানানো হয়, তিনি নিজে ট্রাস্টের কর্মচারী। প্রাক্তনী এবং কর্তৃপক্ষের পেনশনভোগী। তাঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক।
শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষণা করার পর থেকেই অভিযোগ উঠছে, এই কাজের জন্য উপাচার্য নিজে কৃতিত্ব নিতে চান তো বটেই, আচার্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও তিনি তুলে ধরতে চান। এই আবহে সম্প্রতি বিশ্বভারতীর পক্ষে উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলা এবং রবীন্দ্রভবনের উত্তরায়ণের সামনে শ্বেতপাথরের ফলক বসানো হয়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’। তার ঠিক নীচে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিদ্যুতের নাম রয়েছে। তাতে কবিগুরুর উল্লেখ নেই। তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
তৃণমূল টানা ১১ দিন অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদে সরব প্রাক্তনী, পড়ুয়া, আশ্রমিক ও বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা। অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও হয়েছে প্রতিবাদ। এ বার সমালোচনার জবাব দিতে মাঠে নেমেছে বিশ্বভারতী। ফলক বসানোর যৌক্তিকতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বিশ্বভারতী। সেখানে নিজেদের অবস্থানের সপক্ষে জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেন। তাতে জানানো হয়, রবীন্দ্রনাথ আজকের বিশ্বভারতীতে পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছেন। কত জন সাপ্তাহিক উপাসনায় যোগদান করেন। কত জন বৈতালিকে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে আসেন, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। তার পরেই অন্যান্য ভবনে ফলকের প্রসঙ্গও তোলা হয়েছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ভবনে রয়েছে আচার্য নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম। বিচিত্রাতে জহরলাল নেহরু, কিঙ্কর উদ্যানে কেজি সুব্রহ্মণ্যম, দিনেন্দ্রকুঞ্জতে সঙ্গীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। এ রকম অজস্র উদাহরণ তোলা হয়েছে। এও দাবি করা হয়, যতই বলা হোক না কেন, ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তকমার কৃতিত্ব আচার্য নরেন্দ্র মোদী এবং উপাচার্য শ্রী বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর। এটার পরিবর্তন করা যাবে না। অতএব ফলকে এই নামগুলো ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলা মূর্খামি। যাঁরা ফলক বিতর্কে বিশ্বভারতীতে অশান্তি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছেন, তাঁরা অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। অহেতুক রাজনীতি করছেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy