অর্পণ: রবীন্দ্রনাথের চিঠি, ছবি দেওয়া হল বিশ্বভারতীকে। নিজস্ব চিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য ছিলেন বিশ্বভারতীর মেধাবী ছাত্র ও পরবর্তী সময়ে সেখানকারই অধ্যাপক উপেন্দ্রকুমার দাস। অনেক স্মৃতির মধ্যে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক থাকার সময় পারস্পরিক চিঠি আদানপ্রদান হয়েছিল কবিগুরু ও উপেন্দ্রকুমারের মধ্যে। ১৯৩৮ সালে বয়েজ় স্কাউট ট্রেনিং-এর গ্রু পছবিতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে উপেন্দ্রকুমারও ছিলেন। সেই ছবিটি বৃহস্পতিবার, ২২ শ্রাবণের সকালে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর হাতে তুলে দিলেন উপেন্দ্রকুমারের দুই মেয়ে।
বয়েজ় স্কাউট ট্রেনিংয়ের ছবিটি ছাড়াও ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি রবীন্দ্রনাথ ডি লিট উপাধি পাওয়ার পরে ৭ অগস্ট বিশ্বভারতীতে সমাবর্তনের গ্রুপ ছবি, উপেন্দ্রকুমারকে রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠি এবং একটি শংসাপত্র রবীন্দ্রভবনকে দিয়েছে উপেন্দ্রকুমারের পরিবার। এ ছাড়াও উপেন্দ্রকুমারকে লেখা নিত্যানন্দ বিনোদ গোস্বামীর দু’টি চিঠি ও হাজারী প্রসাদ দ্বিবেদীর লেখা চিঠি পেয়েছে রবীন্দ্রভবন। বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে উপেন্দ্রকুমারের পরিবারকে। তাঁর দুই মেয়ে নীলা ও মায়া দাস বলেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত এই সম্পদগুলি আমাদের কাছে ছিল। রবীন্দ্রভবনের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল, এই মূল্যবান জিনিসগুলি তাদের দেওয়ার জন্য। আমরাও কবিগুরুর প্রয়াণের দিনে বাবার স্মৃতি বিশ্বভারতীকে তুলে দিতে পেরে গর্বিত। এই সব তথ্য ও ছবি নতুন প্রজন্মের রবীন্দ্র অনুরাগীদের গবেষণার কাজে লাগুক, এটাই আমরা চাই।’’ রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ অমল পালও এই চিঠি ও ছবিগুলি পেয়ে খুশি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানতে পারি উপেন্দ্রকুমার দাসের পরিবারের কাছে রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠি ও ছবি আছে। তাঁর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমাদের সংগ্রহশালায় সেগুলি রাখার আর্জি জানিয়েছিলাম। এমন একটা দিনে ওঁরা সেই আবেদনে সাড়া দিলেন বলে ভাল লাগছে।’’
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, ১৯২৯ সালে বিশ্বভারতীতে পড়াশোনার জন্য এসেছিলেন উপেন্দ্রকুমার। মেধাবী ছাত্র হাওয়ায় রবীন্দ্রনাথের নজরে পড়েছিলেন এবং স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলেন অচিরেই। উপেন্দ্রকুমার উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুনে তাঁকে নিজের হাতে শংসাপত্র লিখে ডাকযোগে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তবে একই সঙ্গে প্রিয় ছাত্রকে বলেছিলেন, ‘‘তোমরা সবাই যদি বাইরে চলে যাও, কি করে হবে?’’ এ কথা শোনার পরে উপেন্দ্রকুমার বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। সেই সময় বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা দিতে হত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। উপেন্দ্রকুমারের কাছে পরীক্ষার ফি দেওয়ার টাকা ছিল না। সেই টাকাও দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। স্নাতকোত্তর পাশ করেছিলেন ভাল নম্বর পেয়ে। প্রিয় ছাত্রকে বিশ্বভারতীতে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন কবিগুরু।
১৯৩৭ সালে বিশ্বভারতীর এক ছাত্রের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ তখন শান্তিনিকেতনে ছিলেন না। উপেন্দ্রকুমার তাঁকে সে বিষয়ে চিঠি লেখেন। উত্তরে রবীন্দ্রনাথও চিঠি লেখেন। ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষকের কেমন আচরণ হওয়া উচিত, তা ছত্রে ছত্রে বর্ণিত আছে সেই চিঠিতে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কের উল্লেখ থাকা এই চিঠি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে বড় প্রাসঙ্গিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy