Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫

বাহিনী চেয়ে চিঠি, পোস্টার প্রতিবাদে

পোস্টার সাঁটিয়ে, স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করল ছাত্র সংগঠন ডিএসও। সরব হয়েছেন আরও অনেকে।

বিরোধ: বিশ্বভারতী চত্বরে প্রতিবাদী পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

বিরোধ: বিশ্বভারতী চত্বরে প্রতিবাদী পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২১
Share: Save:

গত এক বছরে নানা ঘটনায় নিরাপত্তারক্ষীদের ‘গাফিলতি’ চোখে পড়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। এই অবস্থায় বিশ্বভারতীতে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রের কাছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আবেদন করেছেন—এই খবর ছড়ানোর পরেই পোস্টার সাঁটিয়ে, স্মারকলিপি দিয়ে প্রতিবাদ শুরু করল ছাত্র সংগঠন ডিএসও। সরব হয়েছেন আরও অনেকে।

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সিআইএসএফ (সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্স) মোতায়েনের আর্জি জানিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে চিঠি দিয়েছেন। বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সেই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের খবর, যেহেতু এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়, তাই ওই চিঠিটি বিবেচনার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্বভারতীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থার রক্ষীরা বিশ্বভারতীর নিরাপত্তা আধিকারিকের নির্দেশ মান্য করেন না। এর ফলে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতী ঠিক ভাবে পরিচালনা করতে ও শান্তি বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করার আর্জি জানিয়েছেন উপাচার্য। যদিও এই চিঠি প্রসঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিককে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও জবাব দেননি।

তবে, উপাচার্যের এই চিঠি পাঠানো নিয়ে শোরগোল পড়েছে বিশ্বভারতীতে। বিশ্বভারতীর মতো আশ্রমিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন—তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ডিএসও-র সদস্যেরা বৃহস্পতিবার রাতে ভাষাভবন, বিদ্যাভবন, শিক্ষাভবন-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের বিরুদ্ধে একাধিক পোস্টার সাঁটিয়ে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তাতে লেখা হয়, ‘সিআইএসএফ দিয়ে বিশ্বভারতীকে জেলখানা বানানো চলবে না। বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা কি জঙ্গি? তাহলে সিআইএসএফ কেন? ক্যাম্পাসের মধ্যে বন্দুকধারী সিআইএসএফ কখনওই মানছি না। ছাত্র আন্দোলন দমন করতে শেষে সিআইএসএফ?’ ইত্যাদি। শুক্রবার তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁদের এই পোস্টারগুলি ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন সংগঠনের পক্ষ থেকে উপাচার্যের অফিসে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। এ দিন বিকেলে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একাংশকে নিয়ে গৌড় প্রাঙ্গণে এ বিষয়ে একটি বৈঠকও হয়।

ডিএসও-র বিশ্বভারতী লোকাল কমিটির সদস্য অমিতকুমার মণ্ডল, বিউটি সাহার অভিযোগ, ‘‘বিভিন্ন সময় ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করি। কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, সেই ন্যায্য দাবির আন্দোলনে নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা সঠিক ভাবে কাজ করছেন না। তাই ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনকে দমন করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ডেকে আনা হচ্ছে। যাতে বিশ্বভারতীতে আন্দোলনের পরিবেশ নষ্ট করা হয়।’’ তাঁদের সংযোজন, ‘‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই ধরনের আধা সামরিক বাহিনী বা বন্দুকধারী পুলিশ রেখে পঠনপাঠন চলবে, তা মানা যায় না। তাই বিশ্বভারতী চত্বরে বাহিনীর হস্তক্ষেপ আমরা মানব না।’’

প্রশ্ন উঠছে, বিশ্বভারতীতে কেন কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হল?

বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে উপাচার্য-সহ অধ্যাপক, অধ্যাপিকাদের দীর্ঘক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। সেই সময় বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরা নিজেদের কর্তব্য পালন করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। একই ভাবে রবীন্দ্রভবনে চন্দন গাছ চুরির চেষ্টাতেও রক্ষীদের গাফিলতির বিষয়টি সামনে এসেছিল। এ ছাড়াও বিশ্বভারতীতে নানা আন্দোলনের জেরে ঘেরাও হতে হয়েছে উপাচার্য ও আধিকারিকদের।

এই সব কারণেই কি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন উপাচার্য— সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশ্বভারতীতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Visva Bharati Poster Central Force Vice Chancellor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy