প্রতীকী চিত্র।
শিক্ষক কম। অভাব রয়েছে ঘরেরও। নড়বড়ে অবস্থা জেলার ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠনের। এই অবস্থায় বছর পেরিয়ে যে সমস্ত পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের একাংশ বাংলা মাধ্যমে ফিরে আসার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য উপযুক্ত নির্দেশিকার অভাবে এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অভিভাবকরাও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছেন। নতুন শিক্ষাবর্ষেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তির ব্যপারেও তেমন উৎসাহ নেই বলেছে জানিয়েছে স্কুল।
রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের নির্দেশে গত শিক্ষাবর্ষ থেকে জেলায় রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবন ও রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ইংরেজি মাধ্যম চালু হয়। দু’টি স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণিতে ৪০ জন করে পড়ুয়া ভর্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল দফতর। জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে গত বছর ৬২ জনের আবেদন জমা পড়েছিল। ৩৩ জন পড়ুয়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রথমে আবেদনকারীর সংখ্যা কম থাকলেও পরে ৪০ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। তবে গত বছর থেকে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলেও পরিকাঠামো দিকের ক্ষেত্রে শিক্ষক সঙ্কট ও ঘরের অভাব দুই স্কুলেরই থেকেই গিয়েছে।
দুটি স্কুলেই পড়ুয়ারা যেমন নতুন করে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হবে তেমনই নতুন ক্লাসে অর্থাৎ ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ ১৪ জন ছাত্রীর অভিভাবক বাংলা মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনেও ১০ জন ছাত্রের অভিভাবক ইংরেজি মাধ্যম থেকে বাংলা মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। অভিভাবকদের দাবি, ‘‘এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পঠনপাঠনের জন্য দক্ষ ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ হয়নি। ইংরেজি
মাধ্যমে পড়ানোর জন্য বাড়তি খরচ দিয়ে প্রাইভেট পড়তে হচ্ছে। সেই কারণে আমরা ছেলেমেয়েদের বাংলা মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চাই।’’
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি স্কুলেই প্রথম বছর স্কুলের দু’জন করে মোট চারজন শিক্ষক ইংরেজি মাধ্যমের পাঠক্রমের প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে পঞ্চম শ্রেণিতে ক্লাস নেন। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠক্রমে ভূগোল, ইতিহাস, গণিত, বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলির জন্য স্থায়ী বা ডেপুটেশনে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। এর ফলে কীভাবে পঠনপাঠন চালু থাকবে সে ব্যাপারে সংশয়ে রয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। রয়েছে বেশি পড়ুয়ার ‘চাপ’ও। যে দু’টি স্কুলে ইংরেজি
মাধ্যম চালু হয়েছে তাদের মধ্যে রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণিতে গড়ে ৪০০ জন ভর্তি হয়। ১০০ জন ছাত্রীদের নিয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে চারটে বিভাগ করতে হয়। আবার ছাত্র ভর্তির চাপ জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনেও আছে। সেখানেও প্রতি বছর পঞ্চম শ্রেণিতে গড়ে ৩৫০ জন ছাত্র ভর্তি হয়। ভর্তির চাপে পঞ্চম শ্রেণিতে
তিনটে বিভাগ করতে হয়। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অভাব আছে দুই স্কুলেই। রামপুরহাট
জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে বর্তমানে অনুমোদিত শিক্ষকের সংখ্যা ৪৮। সেখানে শিক্ষক আছে ৪১ জন। ছাত্র সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষকের অভাব আছে। তার মধ্যে চার বছর ধরে একটি ইংরেজি শিক্ষক পদ শূন্য আছে। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ৩০০০-এর বেশি। সেখানে ৫২ জন অনুমোদিত শিক্ষকের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষকের অভাব আছে। শিক্ষাকর্মীরও অভাব আছে।
এর সঙ্গেই যোগ হয়েছে পরিকাঠামোগত সমস্যা। ঘরের অভাব থাকা সত্ত্বেও দুটি বিদ্যালয় তাদের একটি করে ঘর পঞ্চম শ্রেণি থেকে ইংরেজি মাধ্যম চালু করার জন্য দিয়ে ঘর দিয়েছিল। এ বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য নতুন আর একটি ঘর দিতে হবে। রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘শিক্ষকের অভাব আছে। ঘরের অভাব আছে।’’ রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের টিচার-ইন-চার্জ মল্লিকা হালদার বলেন, ‘‘ঘর না হয় দেওয়া যাবে। কিন্তু শিক্ষক না থাকার ফলে অসুবিধা হবে।’’
অভিভাবকদের একাংশ জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে বাংলা মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তাদের সঠিক দিশা দিতে পারেনি। ফলে পুরো বিষয়টি নিয়ে দোটানায় ও ধোঁয়াশায় রয়েছেন অভিভাবকেরা। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সুজিত সরকার বলেন, ‘‘স্কুল দুটিতে নতুন শিক্ষাবর্ষ চালুর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল চালানোর জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজর আছে। আশা করা যায় সমস্যা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy