Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

নদীর পাড়ে গুলিবিদ্ধ দুই

পুলিশ জানিয়েছে, রাতেই ওই দু’জনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত কিছুই জানাতে পারেননি তাঁরা।

নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ার এখানেই গুলিবিদ্ধ হয় দুই কিশোর। মঙ্গলবার সুনসান এলাকা। নিজস্ব চিত্র

নিতুড়িয়ার পারবেলিয়ার এখানেই গুলিবিদ্ধ হয় দুই কিশোর। মঙ্গলবার সুনসান এলাকা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

দামোদর নদের পাড়ে দুই বন্ধুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে রহস্য ঘনিয়েছে নিতুড়িয়া থানার পারবেলিয়ায়। সোমবার রাত ন’টা নাগাদ ওই এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার কাছ থেকে দু’জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। কিন্তু তাঁদের কারা, কেন গুলি করল— এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি ২৪ ঘণ্টা পরেও। তাই ওই ঘটনাকে ঘিরে ধন্দে পুলিশ ও তরুণদের পরিজনেরা।

পুলিশ জানিয়েছে, রাতেই ওই দু’জনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত কিছুই জানাতে পারেননি তাঁরা। তবে পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া মঙ্গলবার বলেন, ‘‘নিতুড়িয়ায় দুই কিশোরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তদন্তে নেমে প্রাথমিক কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তদন্তে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রে খবর, গুলিবিদ্ধদের মধ্যে বছর কুড়ির যুবক মুকেশ হাড়ি ও ষোলো বছরের তরুণ পারভেজ আনসারি পারবেলিয়ার তিন নম্বর কলোনির বাসিন্দা। মুকেশ স্থানীয় পারবেলিয়া বাংলা হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। পারভেজ পড়ে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের একটি আইটিআই কলেজে।

সোমবার রাতেই দু’জনকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় আসানসোলের শাঁকতোড়িয়ায় ইসিএলের হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে পাঠানো হয় আসানসোল জেলা হাসপাতালে। বেশি রাতের দিকে দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

দুর্গাপুরের বিধাননগরের ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপার পার্থ পাল বলেন, ‘‘দু’জনের অবস্থাই সঙ্কটজনক। পারভেজের বুকের ডান দিকে গুলি ঢুকে বেরিয়ে গিয়েছে। বাঁ দিকে পিঠে গুলির ক্ষত রয়েছে। যদিও সিটি স্ক্যান করে প্রাথমিক ভাবে গুলির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার লিভারের ক্ষতি হয়েছে।’’ তিনি জানান, মুকেশেরও দু’টি গুলি লেগেছে। একটি পিঠের নীচে ডান দিকে ঢুকে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আর একটি গুলিও পাশ দিয়ে ঢুকেছে।

দুই পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে দু’জনেই বেরিয়ে পাড়ার একটি ক্লাবে যান। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে তাঁরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ বেরিয়ে যান। তবে তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন, তা ক্লাবের বন্ধুদের জানাননি। ঘণ্টা দেড়েক পরে এলাকার লোকজন খবর পান, দু’জনে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইটভাটার কাছে পড়ে আছেন।

খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন নিতুড়িয়ার ওসি অনুপ ঘোষ। পরে সেখানে যান এসডিপিও (রঘুনাথপুর) দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় ও রঘুনাথপুরের সিআই সুজিত পতি। তদন্তকারীদের দাবি, ইটভাটা থেকে গুলির একটি খোল ও এক জোড়া জুতো পাওয়া গিয়েছে। গুলির খোল দেখে পুলিশের ধারণা, দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি কোনও আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি করা হয়ে থাকতে পারে।

এ দিকে ঘটনার তদন্ত নেমে গুলি করার কারণ ও দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশদে কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ সুপারের দাবি, ‘‘যে বা যারা গুলি করেছে, তারা জখম কিশোরদের পরিচিত বলেই মনে হচ্ছে।’’ এই ঘটনা নিয়ে তাঁরা অন্ধকারে বলে জানিয়েছেন দু’জনের পরিজনেরা।

পারভেজের ভাই তারিক আনসারি জানান, সন্ধ্যায় তারা ক্লাবে খেলছিল। সেই সময় অপরিচিত এক জন ক্লাবে এসে মুকেশের খোঁজ করে। তবে তার আগেই দাদারা ক্লাব থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

তারিকের কথায়, ‘‘রাত পৌনে ন’টার সময় বাড়িতে কখন ফিরবে, তা জানতে দাদাকে ফোন করেছিলাম। তখনও স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছিল দাদা। জানিয়েছিল, কিছু পরেই ফিরবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে লোকমুখে খবর পাই, দাদাকে কেউ গুলি করেছে। কিন্তু কে গুলি করতে পারে, সেটাই বুঝতে পারছি না।”

মুকেশের কাকিমা অর্চনা কেওড়া জানান, সন্ধ্যায় বাড়িতে মুকেশকে তার এক বন্ধু ডাকতে এসেছিল। বেরনোর সময়ে মুকেশ জানিয়েছিল, বন্ধুর সঙ্গে ক্লাবে যাচ্ছে। রাত ন’টা নাগাদ খবর আসে ওদের দু’জনকে কারা গুলি করেছে। অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘সব সময় বন্ধুদের সঙ্গেই থাকত। কারও সঙ্গে মুকেশের কোনও গোলমাল হয়েছিল বলে শুনিনি। কেন ওরা অত রাতে নদীর পাড়ে গিয়েছিল, তাও বুঝতে পারছি না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Brick Clan Damodar River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy